চট্টগ্রাম, ২১ জুলাই, ২০২২:
ব্যক্তি মানুষ যে শ্রেণিপেশার হোক না কেন। কোনো কোনো কাজে শ্রেণিপেশার সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ। সেটা সম্ভব শুধু সচেতনতা দিয়ে। যথা সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সাধারণ একজন রিকশাওয়ালা আবদুল হান্নান সচেতন নাগরিক বলেই নিজেকে অসাধারণ করে তুলেছেন। যে নাগরিক দায়িত্ব পালনে হয়ত ব্যর্থ হত একজন উচ্চ পেশার ব্যস্ত নাগরিকও। যে কারণে সমাজ বদলায় ধীর লয়ে। কিন্তু আবদুল হান্নান সেটা হতে দেননি। যে কারণে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়া একজন ধর্ষিতা নারীর অসহায়তার মধ্যে আবদুল হান্নান ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রিকশাওয়ালার আর কিছু করা সম্ভব ছিল না। যে কারণে রিকশা থামিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া নারীটির সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। সেটাই ছিল সেদিন রাতে তার নায়কোচিত কাজ।
সেই রাতে ঘটনাটি ঘটেছিল নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে। ৬ দুর্বৃত্ত ধর্ষণ করে এক নারীকে। গত ১৭ জুলাই দিনগত রাত ১টায় রিকশায় জিইসি এলাকার সাদিয়াস কিচেনের সামনে থেকে ষোলশহরে দিকে যাচ্ছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় ৩ যুবক রিকশার গতিরোধ করে ফ্লাইওভারের নিচের একটি অস্থায়ী টং ঘরে ওই গৃহবধূকে নিয়ে যায়। সেখানে ৬ জন মিলে ধর্ষণ কওে ওই নারীকে। গৃহবধূর চিৎকার শুনে রিকশাচালক জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ ফোন কওে ঘটনাটি জানান। এবং পুলিশ পাঠানোর অনুরোধ করেন। ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে গৃহবধূকে উদ্ধার করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সেই সচেতনতা ও মানবিক দায়িত্ব পালন কওে পুরস্কার পেয়েছেন রিকশা ওয়ালা মো আবদুল হান্নান।
গতকাল ২০ জুলাই সিএমপির নবাগত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সেই মানবিক ও সচেতন রিকশাচালক মো. আবদুল হান্নানকে তার কার্যালয়ে পুরস্কৃত করেন।
কি ঘটেছিল সেই রাতে:
রবিবার দিবাগত রাত প্রায় তখন ১টা বাজে। তখন সড়কে মানুষজনের চলাচল ছিল না। মাঝে মাঝে দু’ একটি গাড়ি আসছিল। এমন অবস্থায় নগরীর জিইসিমোড় হয়ে প্রায় ২৮ বছরের এক নারী রাকিব নামে এক রিকশাচালকের রিকশায় করে তার বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু ৬ জন দুর্বৃত্ত রিকশা থামিয়ে রিকশা থেকে ওই নারীকে সড়কের পাশে একটি টংঘরে নিয়ে নারীকে ধর্ষন করে। এই ঘটনা ওই রিকশাওয়ালা আরেক রিকশাওয়ালা আবদুল হান্নানকে জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ নম্বওে ফোন করেন। ফোন করার পর পুলিশ এসে ভিকটিম নারীকে উদ্ধার করে এবং তিন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে।
আবদুল হান্নান ওইদিনের ঘটনার ব্যাপাওে গণমাধ্যমকে জানান, ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায় সেটি তিনি একবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তি উদ্ধারে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বওে ফোন করেন। আর পওে পুলিশ এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। যে কারণে ওই নারীকে উদ্ধারে রিকশাচালক আবদুল হান্নানও ফোন দেন।
তিনি বলেন, ওই নারীর জায়গায় ভিকটিম মহিলা আমার মা, বোন, স্ত্রী যে কেউ ঘটনার শিকার হতে পারত। যে কারণে আমি তাদের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য তাই করতাম, ওই নারীর ক্ষেত্রেও তাই করেছি।
রিকশাওয়ালা জানান, যারা ওই নারীকে নিয়ে গেছে, তারা ছিল মাদকাসক্ত। যে কারণে পুলশকে জানানোটা উচিত মনে করেছি। ৯৯৯ -এ ফোন দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে খুলশি থানার পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে।
এই ঘটনায় খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, একজন রিকশাচালকের সচেতনতায় ওই নারীকে উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। সেদিনই ওসি রিকশাচালককে পুস্কৃত করার কথা জানিয়েছিলেন।
আর আজ সেই পুরস্কার পেলেন রিকশাচালক আবদুল হান্নান।
এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নানের এই মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করা হয়েছে। যাতে অন্যরাও এ ধরনের মানবিক কাজে উৎসাহিত হয়।
এই ঘটনার শিকার নারী বাদি হয়ে খুলশি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ছয় ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে।
Discussion about this post