চট্টগ্রাম, ১২ আগস্ট, ২০২২:
রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈমকে গলা কেটে হত্যাকারী মোঃ রেজাউল করিম রেজাকে আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গত ১০ আগস্ট রাতে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল থেকে ওই নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহতের পিতা বাদি হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে নারী চিকিৎসকের হত্যাকা-ের ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব হত্যাকা-ে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব।
র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো নুরুল আবছার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব- ২ এবং র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে উক্ত হত্যাকা-ের ঘটনায় হত্যা মামলার একমাত্র আসামি কক্সবাজার সদরের মৃত নবী হোসাইনের পুত্র মোঃ রেজাউল করিম রেজাকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকা-ের সময় আসামির পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রেজা ভিকটিমকে হত্যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত রেজা র্যাবকে জানায়, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা বিয়ে করে। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। ভিকটিমের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন গ্রেফতারকৃতের একাধিক নারীর সাথে তার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এই বিষয়টি ভিকটিম জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এই নিয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন সময় বাগবিত-াও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ভিকটিমকে হত্যার জন্য তার ব্যাগে ধারালো চাকু নিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত রেজাউল গত ১০ আগস্ট ভিকটিমকে তার জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যায়। ঐ অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থানকালে ভিকটিমের সাথে গ্রেফতারকৃতের বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিত-া ও ধস্তাধস্তি হয়। এসময় গ্রেফতারকৃত রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর হত্যার কোন আলামত তার শরীরে যাতে দেখা না যায় সেজন্য রেজাউল গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। তারপর বের হওয়ার সময় সে ভিকটিমের মোবাইল ফোনও সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায়। হোটেল ছেড়ে আসার সময় দরজার বাইরে থেকে সে রুমের তালা বন্ধ করে দেয়।
অভিযুক্ত রেজাউলের বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানায়, রেজাউল হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যায়। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। পরবর্র্তীতে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে র্যাবের অভিযানে সে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে। এমবিএ চলাকালে সে একই বিশ^বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ইতোমধ্যে সে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুন মাসে সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করে।
গ্রেপ্তার রেজাউলের ব্যাপারে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানায় র্যাব। বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post