চট্টগ্রাম, ২১ মার্চ, ২০২৩ :
পাহাড়তলী বধ্যভূমি কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিষদের (পাবকপ্রবাপ) উদ্যোগে গত ১৭ মার্চ বিকাল জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বধ্যভূমি’ বিষয়ক এক মুক্ত আলোচনা সভা সম্পন্ন হয়েছে।
নাট্যকার ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব প্রদীপ দেওয়ানজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মুক্ত আলোচনার প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, বিশেষ আলোচক হিসাবে আলোচনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা রউফুল হোসেন সুজা, কবি ও অনুবাদক আবু মুছা চৌধুরী, নাট্যশিক্ষক জোবায়দুর রশীদ, শ্রমীক নেতা নূরুল ইসলাম নুরু, মো. আলী, একাত্তরের ঘাতক দালাল প্রতিরোধ কমিটি কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শওকত বাঙালি , নাট্যকার শামীম আহমেদ, নাট্য নির্দেশক মাশরুজ্জামান মুকুট, ছড়াকার আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের, গণমাধ্যমকর্মী বশির আহম্মেদ, নাট্যজন মো. জসিম উদ্দীন আহম্মদ, মোশারফ ভূইয়া পলাশ, ক্যাব যুগ্ম সম্পাদক মো. জানে আলম, শহীদ পরিবার সদস্য মোতাহের হোসেন স্বপন, উর্মি বড়ুয়া, জেসমিন আক্তার জুঁই, গাজী মোহিম উদ্দিন (অভি), মোরশেদ চৌধুরী, উম্মে কুলসুম কেয়া, মো. কলিম শেখ এবং পাবকপ্রবাপ- এর আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল যাত্রা, সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (আঙ্গুর), সদস্য মো. সেলিম বাদশা, রবিউল হোসেন, জুলফিকার আলী মাসুদ, রবিউল হোসেন রবি, মো. কলিম শেখ, রিদোয়ান ফারুক, মো. সালাম, মো. খুরশিদ আলম, মোর্শেদ চৌধুরী প্রমুখ।
পাবকপ্রবাপ এর সদস্য মো. আবু সুফিয়ান সঞ্চালিত মুক্ত আলোচনা শেষে নান্দীমুখ ও বীজন নাট্যগোষ্ঠী যথাক্রমে আহাম্মদ কবীর রচিত ও মোশারফ ভূইয়া পলাশ নির্দেশিত “ছোলেমান বাদশা’র প্রার্থণা” এবং অভিজিৎ সেনগুপ্ত অপু নির্দেশিত “অনুরণন” মুক্ত নাটক দুটি পরিবেশন করে এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন রাবেয়া জামান এনজেলা ও নাছরিন আক্তার হিরা।
প্রধান আলোচক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত স্থানগুলো পরিদর্শন করে ঐ জমিগুলো বধ্যভূমি হিসাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে তিনি বীরাঙ্গনাদের পিতার দায়িত্বও নিয়েছিলেন; তার যুযোগ্য কন্যা বর্তমান রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা কী শহীদদের কবরখানার জন্য চিহ্নিত বধ্যভূমিগুলোর জমি সুরক্ষা করার দায়িত্ব নেবেন না?”
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শওকত বাঙালি বলেন, “ঘাতক দালালদের নির্মূলের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রকৃত তালিকা গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করছি। সেখানে চিহ্নিত বধ্যভূমিগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত জমি বেদখল হয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। জেলা প্রশাসকের রহস্যজনক নিরবতা আমাদের বিশ্মিত করে।
মুক্তিযোদ্ধা রউফুল হোসেন সুজা বলেন, “আদালতের রায় মোতাবেক অনতিবিলম্বে পাহাড়তলী বধ্যভূমির জমি থেকে ইউএসটিসির অবৈধ দখলদারিত্বের উচ্ছেদ চাই। জমির ভূয়া মালিকানা সৃজন করে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ বধ্যভূমির জমি দখল করে স্বাধীন বাংলাদেশে পার পেয়ে যাবে এটা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
মুক্তিযুদ্ধ একাডেমী ট্রাস্ট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আহ্বায়ক ছড়াকার আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলম বলেন: “ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক তকমা ভাঙ্গিয়ে জাকির হোসেন রোডের দুই পাশে অবস্থিত ৫ টি স্থানে ইতোমধ্যে নামমাত্র মূল্যে ৫ খণ্ড জমি বাগিয়ে নিয়ে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক হোস্টেল, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সেবা ও শিক্ষা বাণাজ্য পরিচালনা করছে। একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার কীভাবে ৫টি স্থানে জমি দান করলো- জাতি তা জানতে চায়।”
নাট্যশিক্ষক জোবায়দুর রশীদ বলেন, “খাস জমি খোর ইউএসটিসির লোভের শেষ নেই। বধ্যভূমির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রকল্পের জমিও খেতে হবে? তাদের ক্ষুধা কখন মিটবে?”
শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম নুরু বলেন, “আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়কালে আদালতের রায় উপেক্ষা করে পাহাড়তলী বধ্যভূমির জন্য নির্ধারিত জমি ১০ বছরেও ইউএসটিসির দখলদারিত্ব থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি- এই লজ্জ্বা কোথায় রাখি।”
‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বধ্যভূীম’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভার সভাপতি প্রদীপ দেওয়ানজী তাঁর সমাপনি বক্তব্যে বলেন, “বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার, সরকারের জেলা প্রতিনিধি হিসাবে বর্তমান জেলা প্রশাসক অতিতের জেলা প্রশাসদের ন্যায় দায়িত্বহীন কাজ করবেন না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যা ইতোমধ্যে আদালত অবমাননায় পর্যবসিত হয়েছে। আমরা তার ইতিবাচক ভূমিকা ও পদক্ষেক প্রত্যাশা করছি।”
সবশেষে কেক কেটে জাতির জনকের ১০৩ তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে আগামী ২৫ মার্চ ২০২৩ বিকেল ৩ টায় যথারীতি প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সংহতি সমাবেশ, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন পাবকপ্রবাপ এর সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (আঙ্গুর)। বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post