চট্টগ্রাম, ১ এপ্রিল, ২০২৩:
কলা গাছ থেকে সুতা আর সেই সুতা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হলেও প্রথমবারের মত কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি কওে এক উদ্যোক্তা। আর এই উদ্যোগের জন্য সকল সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি। দীর্ঘ দিনের চেষ্টায় নিজ উদ্যোগে কারিগরের মাধ্যমে অবশেষে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি। এজন্য তিনি সিলেটের মৌলভি বাজার থেকে নিয়ে আসেন তাঁত শিল্পী।
সিলেটের মৌলভী বাজারের বুনন শিল্পী রাধাবতীর ১৫ দিনের চেষ্টায় ১ কেজি সুতার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে শাড়িটি। পরীক্ষা মূলকভাবে তৈরি করা শাড়িরর বুনন সফলভাবে হয়েছে। শিল্পীর নাম আর কলাগাছের সুতোয় তৈরি এই শাড়ির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলাবতী শাড়ি’।
উদ্যোক্তা ডিসি ইয়াছমিন পারভীন আর বুনন শিল্পী রাধাবতী
বান্দরবান জেলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ২০২১ সালে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি এবং সে সুতা থেকে বিভিন্ন হস্ত সামগ্রী তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। পরে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে জেলার বিভিন্ন পাড়ায় যুবক-যুবতিদের কলা গাছের সুতা থেকে হস্ত শিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে কলা গাছের সুতা থেকে ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোস, ফুলদানি, কলমদানিসহ নানা হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন এলাকার নারীরা। এছাড়াও তাদের তৈরি এসব হস্ত শিল্প সামগ্রী পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য নীলাচল পর্যটনে ব্র্যান্ডিং বান্দরবান নামে একটি দোকানেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। যাতে তাদের তৈরি কলা গাছের সুতা থেকে এসব হস্তশিল্প সামগ্রী সারাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা যায়। ধীরে ধীরে কলা গাছের সুতা থেকে তৈরি হস্তশিল্প পর্যটক সহ সকলের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হলে জেলা প্রশাসক নতুনভাবে কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি বান্দরবান বিভিন্ন হস্তশিল্পীদের কাছে শাড়ি তৈরির প্রস্তাব দিলে তারা আগ্রহ প্রকাশ না করায় পরে সিলেটের মৌলভী বাজার থেকে একজন দক্ষ বুনন শিল্পী নিয়ে আসেন বান্দরবানে। পরে স্থানীয় এক উদ্যোক্তার মাধ্যমে বুনন শিল্পীকে দিয়ে প্রথমবারের মত কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় বুনন শিল্পী রাধাবতী ১ কেজি সুতা দিয়ে তৈরি করতে সক্ষম হন সেই কলা গাছের সুতার শাড়ি।
এদিকে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, কলা গাছের সুতা থেকে এই প্রথমবারের মত বান্দরবানে শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের জনবল আছে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মত আমরা সনাতন পদ্ধতিতে করছি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে তৈরির করার জন্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং আমাদের এখানে স্থানীয়ভাবে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছে। আশা করি, আমরা তাদের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করতে পারবো।
ব্যতিক্রমি এ উদ্যোগের বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পর্যটন নগরী বান্দরবানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক বেড়াতে আসে। মূলত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কলা গাছের সুতা থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে আসছে নারীরা। এমনকি এসব তৈরিকৃত হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কম খরচে স্বল্প সময়ে কলা গাছে সুতা থেকে আর কি তৈরির করা যায় সে ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমবারের মত কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করে আমরা সফল হয়েছি। আশা করি এই শাড়িটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে। যদি বাণিজ্যিকভাবে এই শাড়ি উৎপাদন করা যায় তাহলে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্ম সংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বি হবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক। প্রাথমিকভাবে এই শাড়ি তৈরিতে ১শ ৮০ টাকার সুতা ব্যবহৃত হলেও সময় সাপেক্ষ ও পরিশ্রম বেশি হওয়ায় এর বিক্রয় মূল্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
Discussion about this post