চট্টগ্রাম,২৪ জুন, ২০২৫:
ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট শুরু হয়। ঈদেও এক সপ্তাহ পর কন্টেইনার জট কাটিয়ে উঠতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর। স্বাভাবিকের চেয়ে এখন প্রায় ১০ হাজার কন্টেইনার বেশি টার্মিনালগুলোতে। সাধারণত বন্দরের কন্টেইনার স্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টার্মিনারগুলো ৩ শতাংশ খালি রাখতে হয়। কিন্তু এটা সবসময় স্বাভাবিক রাখা যায় না।
এ জট কাটাতে বন্দরের আরও প্রায় দু’ সপ্তাহ লাগবে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৫৩ হাজার টিইউস। আমাদের আজকে পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার কন্টেইনার আছে। এখনো প্রায় ১০/১১ হাজার কন্টেইনার রখার সমক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের যে সক্ষমতা আছে তার যদি ৩০ শতাংশ খালি থাকে তাহলে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার মুভমেন্ট, ইক্যুপমেন্ট মুভমেন্ট, ডেলিভারি এ কাজাগুলো খুব সহজতর হয়। কন্টেইনার যদি একেবাওে ধারণক্ষমতার কাছাকাছি চলে যায় তাহলে আমাদেও অভ্যন্তরীণ অপারেশন কার্যক্রমটা একটু বিঘিœত হয়। সেজন্য আমরা সবসময় চাই য়ে আমাদের কন্টেইনার স্থিতিটা ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে থাকুক।
তিনি আরও বলেন, বিগত কোরবানে টানা প্রায় ১০ দিন বন্ধ থাকার কারণে ডেলিভারিটা খুবই কম হয়েছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম ২৪/৭ ঘণ্টা। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত থাকলেও অন্যান্য সংস্থা যারা কন্টেইনার ডেলিভারি নিবে- সিএনডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট কিংবা আমদানি রপ্তানিকারক- ওদের লোকজন ছুটিতে থাকার কারণে ওরা আসলে ঠিকমত ডেলিভারি নিতে আসতে পারে না।
তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক জ্জ হাজার কন্টেইনার ডেলিভারি হয় কিন্তু ঈদেও ছুটিতে তা ৫ থেকে ৭ শত টিইউএসে নেমে আসে। চট্টগ্রাম বন্দও সচিব বলেন, যে কারণে সেখানে কন্টেইনারগুলো ক্রমান্বয়ে জমতে থাকে। এ সমস্যার কারণেই এখন প্রায় ৪২ হাজারের মত কন্টেইনার রয়েছে। তারপরও আমরা এখন প্রতিদিন এখন প্রায় ৩৭, ৩৮ শ, প্রায় চার হাজার পর্যন্ত ডেলিভারি দিচ্ছি। আমরা আশা করছি ২/১ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতিটা আগের পর্যায়ে চলে আসবে।
বন্দরের সার্বিক প্রস্তুতি থাকা এবং সক্ষমতা থাকলেও ঈদের ছুটিতে সবাই সমানভাবে প্রস্তুত থাকে না। সিএন্ড এফ এবং অন্যান্যরা যারা ডেলিভারি সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারকরা যদি ডেলিভারি নিতে না আসে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের একার পক্ষে ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কারণ সেখানে কন্টেইনার বুঝে নিতে অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর ঈদের মত দীর্ঘ ছুটির সময়গুলোতে কন্টেইনার খালাস স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের আরো সক্ষম কওে তুলতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগের কথা জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি- আমরা কাস্টমসকে জানিয়েছি যে আমাদের শতভাগ কন্টেইনারগুলো যেন ডিপো থেকে ডেলিভারি হয়। সে ব্যাপারেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এনবিআর-এর একটি অনুমোদন করেছে। এখন ডিপোতেও কন্টেইনার যাচ্ছে।
তবে অনেকে আছে ডিপো থেকে কন্টেইনার তেমন ডেলিভারি নিতে চায় না।
ওমর ফারুক বলেন, যেমন বিজিএমইএ-এর কন্টেইনারগুলো একশ ভাগ বন্দরের অভ্যন্তরেই থাকে। তো সে হিসাবে এখন কিছুটা ইনআফ হচ্ছে। ডিপোতেও কন্টেইনার যাচ্ছে। এখান থেকে ডেলিভারি নিচ্ছে। চেষ্ট করছে। আমরাও চেষ্টা করছি আমাদের যেটা সহায়ক সংস্থা আছে তারাও চেষ্টা করছে। সবারই আসলে উদ্দেশ্য ভালো। বন্দরকে জটমুক্ত রাখা।
ঈদ ও কোরবানির ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ ২৪ ঘণ্টাই চলে। শুধু ঈদেও দিন এক পালা কাজ বন্ধ থাকে। এছাড়া কন্টোইনার জট তৈরি না হতে বন্দর ২৪ ঘন্টা কাজ করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘ঈদের দিন শুধু আট ঘণ্টা ছাড়া বাকি যে কোনো সময় ডেলিভারি নিতে আসলে আট ঘণ্টার নোটিশে আমরা ডেলিভারি দিতে পারি। আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আমরা যেটার উপর নির্ভও করতে হয় সেটা হচ্ছে যে কাস্টমস ডিউটি পেমেন্ট করে শিপিং এজেন্টের ডিও নিয়ে একটি সিএন্ড এফ এজেন্ট যখন আমাদের কাছে ডেলিভারি ডকুমেন্টসটা নিয়ে না আসা পর্যন্ত তো আমরা তাদেরকে ডেলিভারি দিতে পারি না। কারণ আমরাই কাস্টোডিয়ান।’