চট্টগ্রাম, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫:
২০২৫ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা “ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবনার প্রথম ধাপ” মধ্যপ্রাচ্যের রক্তাক্ত মাটিতে এক বিরল স্বস্তির মুহূর্ত এনে দিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের লাগাতার সংঘর্ষ, বোমাবর্ষণ ও অবরোধের পর গাজার মানুষ প্রথমবারের মতো নির্ভার রাত দেখেছে—যেখানে আকাশে যুদ্ধবিমানের শব্দ নেই, শিশুরা কাঁপছে না।
গাজার প্রতিক্রিয়া হিসাবে-গাজায় যুদ্ধ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করেছে হামাস।
গাজার দক্ষিণাংশে, বিশেষ করে রাফাহ ও খান ইউনিস অঞ্চলে, মানুষজন রাস্তায় নেমে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করেছে। অনেকে বলছেন,
“এটা সম্পূর্ণ শান্তি নয়, কিন্তু অন্তত আজ রাতে আমরা আমাদের সন্তানদের পাশে ঘুমাতে পারব।”
বন্দি মুক্তি ও ত্রাণপথ খুলে দেওয়ার ঘোষণায় অনেক পরিবার নতুন আশার আলো দেখছে। তাবু ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও শিশুরা খেলতে শুরু করেছে; এটি হয়তো ছোট্ট আনন্দ, কিন্তু গভীর প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে—বেঁচে থাকার অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া হিসাবে-ইসরায়েলেও অনেকে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে “ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন” বলে অভিহিত করেছেন। তারা চুক্তি অনুমোদনের জন্য সরকারিভাবে মিটিংয়ে বসবে বলে জানিয়েছে।
চুক্তির ঘোষণায় ইসরায়েলেও উচ্ছ্বাস ও আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে নিখোঁজ বা আটক সৈনিকদের পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান এসেছে। তেল আভিভ, জেরুজালেম ও আশকেলনের রাস্তায় “Peace for all” ও “Bring them home” লেখা ব্যানার হাতে মানুষজন মিছিল করেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোও শিরোনাম করেছে—
“শেষমেশ নীরব রাত, বন্দিরা ফিরছে, পরিবারগুলো কাঁদছে আনন্দে।”
তবে সরকারি মহল এখনো সতর্ক—নেতানিয়াহু বলছেন, “এটি কেবল প্রথম ধাপ। শান্তি এখনো আমাদের লড়াইয়ের অংশ।”
সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া
গাজার ধ্বংসস্তূপে ফুটে ওঠা এই আনন্দ আসলে যুদ্ধবিরতির স্বস্তি, পূর্ণ শান্তি নয়। উভয় পক্ষই জানে—অস্থায়ী এই চুক্তি যদি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আগের মতো সহিংসতা ফিরে আসতে পারে।
তবু এই মুহূর্তের আনন্দ মধ্যপ্রাচ্যের ক্লান্ত জনগণের এক আশার নিঃশ্বাস, যেখানে একসঙ্গে কাঁদছে, প্রার্থনা করছে, এবং ভবিষ্যতের শান্তি কামনা করছে—দুই ভিন্ন দিকের মানুষ।
গাজা উপত্যকা—একটি ছোট ভূখণ্ড, কিন্তু বিশ্বরাজনীতির এক মহাগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ ও পরবর্তী ইসরায়েলি প্রতিশোধমূলক যুদ্ধের পর থেকে অঞ্চলটি এক দীর্ঘস্থায়ী মানবিক বিপর্যয়ে নিমজ্জিত হয়। ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনির নারী ও শিশু সহ ৬৫ হাজারের বেশি নিহয়। এভাবে হাজারো প্রাণহানি, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো, ও রাষ্ট্রীয় নীতির নৃশংসতা—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি আবারও দূর-অচেনা এক স্বপ্নে পরিণত হয়।
ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক “শান্তি প্রস্তাবনা” বা “২০ দফা গাজা চুক্তি পরিকল্পনা” (Gaza Peace Framework) ঘোষণা করেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল ও হামাস তার প্রস্তাবনার ‘প্রথম ধাপ’-এ সমঝোতায় পৌঁছেছে—যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, ও আংশিক সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে।
এই ঘটনাকে কেউ কেউ “ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রত্যাবর্তন” হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পুনরুৎপাদিত উপনিবেশবাদ বলেও অভিহিত করেছেন।
তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে—এই শান্তি কি সত্যিই শান্তির প্রতিশ্রুতি, নাকি এটি যুদ্ধের নতুন কৌশলগত রূপান্তর?
বাংলাদেশ সময় বিকালে আলজাজিরার সাংবাদিকতা তারেক আবু আজম জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে ঈসরায়েলি সেনা।
এরমধ্যেও গাজার মানুষ এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর দেখতে চাই।
যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা ডানাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করলেও ইসরাইলের পক্ষ এখনো এটির আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেয়নি।