চট্টগ্রাম, ০১ আগস্ট, ২০২২:
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ‘সাইজ করতে’ চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়েছে আরেক পক্ষ। বিষয়টিকে এলকাবাসী অমানবিক বললেও চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়ায় জড়িতরা বলছে- নিজ জমিতে কি করবেন সেটি তাদের বিষয়’।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ ইউনিয়ন অফিসে প্রক্রিয়াধীন অভিযোগ তুলে নিতে প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে তার ওপর জোর জবরদস্তি করছে প্রতিপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩১ জুলাই, শনিবার নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের খিরিহাটি গ্রামে।
তামাদি আইনের ২৬ ধারায় দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সুখাধিকার কীভাবে শক্তপোক্তভাবে তৈরি হয়, তার নিয়ম-কানুন বলা আছে। এই ধারা অনুসারে, আলো, বাতাস, রাস্তা, জলাধার, পানির ব্যবহারের ওপর জনগণের বা কোনো নিদির্ষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবগের্র সুখাধিকার তৈরি হতে পারে। সে অনুসারে চলাচলের রাস্তা আটকানোর কোনও সুযোগ নেই।
ভুক্তভোগী আব্দুল হাশেম জানান,প্রতিবেশির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। ৩০ শতক বসত বাড়ির জমি নিয়ে এই বিরোধ। এ ব্যাপারে গ্রাম আদালতে অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া গ্রামে মাদক ও চোরাকারবার কাজে বাঁধা দেওয়া ও প্রতিবাদ জানালে রুইর বাড়ির টুক্কুন, মনোয়ার হোসেন মনা, মৃত হোসেনের ছেলে সাজুসহ অন্যরা আমাদের পরিবারের উপর জুলুম করছে। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে রুইর বাড়ির মৃত আব্দুল আজিজ এর ছেলে সেলিম।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে বাড়ির মহিলাদের লাঞ্ছিত করেছে তারা । এখন হুমকি দিচ্ছে আমাদের প্রাপ্য জমি দাবি করলে প্রাণে মেরে ফেলবে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও নারী নির্যাতনকারী সেলিমকে সাথে নিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। আমার বসতবাড়ির রাস্তা ঘিরে রেখে বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা নূর আলম বলেন, বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায়, অমানবিক। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মত দেন নুর আলম।
একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আরেক প্রতিবেশী যুবক মৃত আব্দুর রবের ছেলে শহীদ। তিনি বলেন, বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করায় পরিবারটি অসহায় অবস্থায় আছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সত্যিই অমানবিক। আর সেলিম প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এটা সবাই জানে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সেলিম বলেন, বাড়ির রাস্তায় বেড়া দেওয়া বিষয়টা অন্যায় তবে এ ব্যাপারে আমার কোনও মতামত নেই। প্রতিবেশিকে ‘সাইজ’ করার জন্য তাদের জায়গা তারা ঘিরে রেখেছে। তাদের জায়গায় তারা কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার।
এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, আমি রাতে সাজু ও টুক্কুন ভাইয়ের সাথে ছোটখাট একটা ব্যবসা করি, তাতে হাশেম ঝামেলা সৃষ্টি করে’ কি ব্যবসা করেন জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে না পেরে, এখন ব্যস্ত আছি বলে লাইন কেটে দেন তিনি।
অভিযুক্ত সাজু মুঠোফোনে বলেন, তারা এটা ৫০ বছর ধরে পথ হিসেবে ব্যবহার করলেও এটা আমাদের জায়গা। আমাদের জায়গা আমরা কি করবো সেটা আমাদের ব্যাপার। দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ আটকাতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ থেকে লাইন কেটে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে, খিরিহাটি গ্রামে একটি অভিযোগ বিচারাধীন আছে। তাছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত চলাচলের রাস্তায় কারও বেড়া দেওয়া বা বাঁধা দেওয়ার সুযোগ নেই। চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়ার বিষয়ে এখনো কেউ কিছু জানায়নি। তারপরও আমি বিষয়টা খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সাথে দেখছি।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো।
Discussion about this post