চট্টগ্রাম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
বিএনপি’র পাকিস্তানই ভালো ছিল বক্তব্য এবং রডের মাথায় জাতীয় পতাকা একইসুত্রে গাঁথা : তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, ঠাকুরগাঁও গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পাকিস্তানই ভালো ছিল বক্তব্য এবং ঢাকায় লাঠি ও রডের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগানো একইসুত্রে গাঁথা। তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। দুটির মধ্যে সম্পর্ক আছে।
তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা করছে, মুন্সিগঞ্জে নিজেদের কর্মীকে নিজেরা মেরেছে। তাদের এখন উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োজনে নিজেদের কর্মীদের নিজেরা মেরে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো। সেটা যদি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের নামে আবারো করার অপচেষ্টা চালায় সেগুলো সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে, জনগণও তাদের প্রতিহত করবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম হলে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের ডাক দিয়ে প্রস্তুতি সভা করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এরআগে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শারদীয় দূর্গোৎসব উপলক্ষে হরিজন সম্প্রদায়ের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাঝে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কাগজে দেখতে পেলাম বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা দেখেছি ঢাকা শহরে তারা সমাবেশ করতে গিয়ে লাঠি ও রড নিয়ে সমাবেশে হাজির হয়েছে। আবার লাঠি ও রডের মাথায় জাতীয় পতাকাও বেঁধেছে। জাতীয় পতাকা বেঁধে দিয়ে তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে।
তিনি বলেন, একদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ঠাকুরগাঁও গিয়ে বলেছেন পাকিস্তান কিংবা পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল, আর ঢাকায় তারা রডের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়েছে, দুটোর মধ্যে সম্পর্ক আছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের সময় একটা মোনাজাতকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, এটার কোন তদন্ত হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন- সেখানে শতশত মানুষের মধ্যে কেউ একজন মোনাজাত ধরেছে। মুসলমান হিসেবে এখানে যদি কেউ মোনাজাত ধরে আর আমি যদি এখানে মোনাজাত না ধরে দাঁড়িয়ে থাকি তাহলেতো আমাকে বলবে বিধর্মী। সেই জন্য জেলা প্রশাসকও সেখানে মোনাজাত ধরেছেন। মোনাজাতের মধ্যে কে কি বললো, সেটার দায় জেলা প্রশাসকের ওপর বর্তায় বলে আমি মনে করিনা।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসককে একটি শোকজ নোটিশ দেয়া দরকার ছিল। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার দরকার ছিল, তার বক্তব্য নেয়া দরকার ছিল। বক্তব্য সন্তোষজনক নাহলে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একটি মোনাজাত ও কিছু পত্রিকার সংবাদকে উপলক্ষ করে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে আমি মনে করি সেটি তড়িগড়ি। এবং যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমস্ত মানুষের কথা ভাবেন। একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কথাও তিনি ভাবেন। সেই ভাবনা থেকেই আজকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুদান দেয়া হচ্ছে। হরিজন সম্প্রদায়ের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আমাদের সরকার। তাদের আবাসন সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়েছে। যেটুকু বাকি আছে সেগুলোও দ্রুত সম্ভব আমরা করে ফেলব।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজকে সংগঠিত করার জন্য, যুবসমাজ যাতে বিপথে পরিচালিত নাহয়, মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকে, জঙ্গিবাদসহ নানা ধরনের অপকর্মে যুক্ত না হয় সেজন্য আমাদের সরকার ক্লাব ভিত্তিক খেলাধুলার প্রসারের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্লাবকে নানা ধরনের অনুদান দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার সঠিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের কারণেই আমাদের নারী ফুটবল দল আজকে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারা অসাধ্যকে সাধন করেছে। তাদের সবগুলো খেলোয়াড় একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার বঙ্গমাতা টুর্ণামেন্ট থেকে উঠে এসেছে। আজকে তারা দেশের গর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ বদিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারূফ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ প্রমুখ।
এরপর তথ্যমন্ত্রী বিকেএসপি সম্মেলন কক্ষে আসন্ন দূর্গাপুজা উপলক্ষে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা এবং মহানগর নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন।বিজ্ঞপ্তি
এদিকে রাঙ্গুনিয়ায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, সরকারের পাশাপাশি আমরা এনএনকে ফাউন্ডেশন ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে রাঙ্গুনিয়ার মানুষের দারিদ্রতা দূরীকরণ, রোগাক্রান্ত মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করে যাচ্ছি। রাঙ্গুনিয়ার অনেক উন্ন
য়ন কর্মকাণ্ডেও সহযোগিতা করেছি। বিভিন্ন দাতা সংস্থার তহবিল সংগ্রহ করে ২১ টি মসজিদ ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে ১ কোটি টাকার টিন বিতরণ করেছি। পাওয়ার টিলার, রিকশা ও অটোরিকশা প্রদান সহ নানা সহযোগিতাও অব্যাহত আছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা অডিটরিয়ামে এন এন কে ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাধীন তহবিলের অর্থ বিতরণ, বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগীদের সাহায্যার্থে চেক বিতরণ, দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ ও বিভিন্ন মাদ্রাসায় বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান- ২০২২-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এন এন কে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আবদুর রউফ মাস্টারের সভাপতিত্বে এতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, পৌর মেয়র শাহজাহান সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম তালুকদার, জসীম উদ্দিন শাহ, রেড ক্রিসেন্টের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রায় দুইশ মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে তথ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল ও তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এন এন কে ফাউন্ডেশনের চেক সহ সেলাই মেশিন ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী , আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতনী সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় সব সময় শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। কিন্তু কুচক্রীরা সবসময় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। তথ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়ার পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে প্রতি ইউনিয়নে পূজামণ্ডপভিত্তিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। একই সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
এতে রাঙ্গুনিয়া পৌর সভা মেয়র শাহজাহান সিকদার, যুবলীগ নেতা শামসুদ্দোহা সিকদার সহ আওয়ামী লীগ ও উপজেলার শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকারী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post