চট্টগ্রাম,১১ এপ্রিল, ২০২৩:
পাঁচ দফায় চিনির দাম বেধে দেওয়া হলেও কোনবারই চিনির সরকারি নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হয়নি। উল্টো নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। এছাড়া নানা অজুহাতে বাজারে চিনির সংকট চলছে।
এবার আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৬ টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা, যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম কেজিপ্রতি ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে চিনি পরিশোধনকারীরা নতুন এই দামে চিনি বিক্রি করার অনুমতি পায়।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল বুধবার (১০ মে) মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ টাকায়। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি ১২৬ টাকা বিক্রি হয়। আর গত ২ মে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আরও ১০ দিন আগে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ১০০ টাকায়।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। আর নগরীর অলিগলির দোকানগুলো ১৪০ টাকা কিংবা আরো বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো চিনি আটকে রেখে দাম বাড়াচ্ছে। আগের মত বাজারে পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ দিচ্ছে না। চুরি করে সিন্ডিকেটের কাছে বেশি দামে চিনি বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব কোম্পানিগুলো চিনি বিক্রির রশিদও দিচ্ছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সর্বমোট চাহিদার কাছাকাছি চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৬ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা গ্রুপ প্রায় ৮ লাখ ৫৪ হাজার টন, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ চার লাখ ২৩ হাজার টন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার দুই লাখ ৮১ হাজার টন, আব্দুল মোমেন সুগার রিফাইনারি এক লাখ ৫ হাজার টন এবং দেশবন্ধু সুগার মিলস ৭৩ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। এছাড়া অন্য আমদানিকারকরা আরও দেড় লাখ টন চিনি আমদানি করে।
অথচ দেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা প্রায় ২২-২৩ লাখ টন। এর মধ্যে বেশিরভাগ আমদানির মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ করা হয়। বাকিটা সরকারি চিনিকল থেকে পাওয়া যায়। আর দেশীয় চিনিকল থেকে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন চিনি পাওয়া যায়।
নানা অজুহাতে বারবার চিনি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও নির্ধারিত দামে চিনি কিনতে পারছে না ভোক্তারা।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির প্রস্তাবিত মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে ১১৭ টাকা। পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা আর পরিবেশক পর্যায়ে যার দাম হবে কেজিতে ১২১ টাকা। কমিশন এ দাম প্রস্তাব করেছে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১১ টাকা হিসেব করে।