চট্টগ্রাম, ৩১ অক্টোবর, ২০২১
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আজ রবিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে জানিয়েছেন, ফ্লাইটটি আজ সকাল ৯ টা ২৭ মিনিটে হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্লাসগোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মন্ত্রীপরিষদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও বিদেশী মিশনের কূটনিতিকগণ।
আজ বিকালে ফ্লাইটটি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর প্রেস্টউইক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সম্মলনে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা, জলবায়ু তহবিলের কার্যকর বাস্তবায়ন সহ তিনটি প্রস্তাব বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকইজেনের যৌথভাবে লেখা একটি প্রবন্ধ আমেরিকান সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইককে ছাপানো হয়েছে। যেখানে তারা লিখেছেন, আমাদের জলবায়ু সঙ্কট হচ্ছে বৈশ্বিক। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রতিটি দেশে সমভাবে এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। চারটি মহাদেশের ৪৮টি দেশের একটি গ্রুপ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে একেবারে অস্তিত্বের হুমকি। আর এটি অতিশয়োক্তি না।’
প্রবন্ধে তারা লিখেছেন, ‘জলবায়ুর উন্নতি ঘটাতে সিভিএফ দেশগুলোর জন্য বিপুল অর্থের যোগান দেয়া হলে জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে তারা পদক্ষেপ গ্রহণে সমর্থ হবে। আর তা বর্তমানে মহাবিপদের মুখে থাকা ৪৮টি দেশের জন্য ভাল হবে। এভাবে তার যৌথ প্রবন্ধাকারের সাথে সহমত প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সঙ্কট থেকে নিজেদের বাঁচাতে বিশ্বের বড় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সম্মেলনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখেতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস (এনডিসি)’ ঠিক করা, ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলো তুলে ধরবেন সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকে। শেখ হাসিনা আগামী দুই দিন সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন এবং সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচি তুলে ধরা হল:মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমানপরিবহন ও পর্যটনগ্লাসগোতে অবস্থানকালে, ১ নভেম্বর (সোমবার) সকালে, প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ ইভেন্ট ক্যাম্পাসের কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিএফভি-কমনওয়েলথ হাই লেভেল প্যানেল ডিসকাশন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক একটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি’র সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী কপ ২৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং ভাষণ দেবেন।
শেখ হাসিনা শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি গোটাবায় রাজাপাকসে’র সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্যাভিলিয়নে ‘একশন এন্ড সলিডারিটি-দ্য ক্রিটিক্যাল ডিকেড’ শীর্ষক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
একই দিন বিকেলে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘কপ-২৬’ এর ভিভিআইপি সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
সন্ধ্যায় স্কটল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি কতৃর্ক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।
২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সকালে প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ প্যাভিলিয়নে ‘ওমেন এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
শেখ হাসিনা দুপুরে স্কটল্যান্ডের ফাস্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
বিকেলে প্রিন্স চার্লস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপরেই ইউকে সভাকক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তিনি সভাকক্ষ-৪ এ ‘ফোর্জিং এ সিভিএফ কপ ২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সী প্যাক্ট’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী ‘ওয়াল্ড লিডার্স সামিট’র সমাপনী পর্বে অংশগ্রহণ করবেন।
সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা স্কটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ পার্লামেন্টে ‘এ বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক ভাষণ দেবেন।
৩ নভেম্বর (বুধবার) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীগণ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট যোগে গ্লাসগো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
ঐ দিন লন্ডনে পৌঁছার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোইলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’, লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের নাগরিক সংবর্ধনাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
৯ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্যারিসের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন।
শেখ হাসিনা ওই দিন এলিসি প্যালেসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
একই দিনে তিনি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সের সঙ্গে ফ্রান্সের সরকারি বাসভবন ম্যাটিগননে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো সদর দফতরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’-র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং একই স্থানে ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা আগামী ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেয়া সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৩ নভেম্বর ঢাকার উদ্দেশে প্যারিস ত্যাগ করবেন এবং ১৪ নভেম্বর সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
Discussion about this post