চট্টগ্রাম, ২৭ মে ২০২৫:
চলতি বছর গ্রীষ্মকাল যেন আগাম বর্ষাকে ডেকে আনল। মৌসুমী বায়ুর অতি সক্রিয়তার জন্য আবহাওয়ার চরিত্রেও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন আবহ। প্রখর তাপমাত্রার মধ্যে হানা দিচ্ছে হঠাৎ বৃষ্টি। এরমধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগের সব অঞ্চলে গত ২ থেকে ৩ দিন যাবত থেমে থেমে অস্থায়ীভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাব এখনো আছে।
তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আমবাগানে ১৯ মিলি মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পতেঙ্গায় ২৭ মিলি মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত আমবাগানে সব্বোর্চ তাপমাত্রা চিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনি¤œ ছিল ২৬ ডিগ্রি সে.। দেশের সব্বোর্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে-৩৮.৪ ডিগ্রি সে.। সর্বনি¤œ ছিল ১৪.৪ ডিগ্রি সে. ছিল বান্দরবানে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান বলেন এ মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও দেশের পূর্বাঞ্চলে- চট্টগ্রাম, ফেনি নোয়াখালী কুমিল্লায়।
এরমধ্যে সমুদ্রে লঘুচাপের গর্জন। আকাশজুড়ে মেঘের আনাগোনা বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস সিলেট অবধি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। লঘুচাপের বার্তায় আপাতত বিধ্বংসী কোনো পূর্বাভাস না থাকলেও লঘুচাপটি নি¤œচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ সময় ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস হতে পারে। লঘুচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত ঘোষণা করেছে আবহাওয়া অফিস।
আবদুর রহমান খান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার থেকে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। আজকে সকালে এটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। বর্তমানে এটি শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটির যে গতিবিধি এবং এটির বিভিন্ন ডাটা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি এটি আরও একটু শক্তিশালী হতে পারে। শক্তিশালী হয়ে সে হয়ত নি¤œচাপে পরিণত হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটি নি¤œচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে এক থেকে দুদিনের মধ্যে। এর প্রভাবে দেশের যে উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে- চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে যা পেয়েছি বিধ্বংসি কোনো শক্তি এটির নেই। তবে এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হবে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছি গত তিন দিন আগে থেকে। আজ থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে বুধবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার বৃহস্পতিবার, শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা আছে।
এতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া বুলেটিনে সতর্কতা বার্ত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
তিনি বলেন, “লঘুচাপটি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ উপকূলের খুব কাছাকাছি। সুতরাং এসব অঞ্চলে সাগর এখন উত্তাল । সেজন্য গতকাল থেকে সামুদ্রিক বন্দরগুলোতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত জারি করেছি। সে সাথে আমরা বলেছি সাগরে যে মাছধরা নৌকা এবং ট্রলারগলো আছে তারা যেন উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করে- পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।”
তিনি বলেন, “ এ বছর আমাদের দেশে বর্ষা প্রভাব বিস্তার করেছে একটু আগে থেকেই। আমরা মে মাসে বৃষ্টিপাত পেয়েছি। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে বৃষ্টিúাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল, এবং উত্তর পূর্বের যে- ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের যে অঞ্চলগুলো আছে, রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম. নীলফামারি এসব অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, “এর আগে যে ছিল- ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল পর্যন্ত আমরা ওইভাবে বৃষ্টিপাত পায়নি। অর্থাৎ বর্ষাটা আগাম তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হয় জুন মাস থেকে। জুন মাসের সাত দিন আগে বা সাতদিন পরে হতে পারে। এ বছর কিন্তু বর্ষাকাল মে মাসের একুশ বাইশ তারিখ থেকে পেয়েছি। চট্টগ্রামের টেকনাফ থেকে শুরু হয়েছে। একটু আগাম পেয়েছি বর্ষাকালটা।
তবে কোরবানির সময় পর্যন্ত আবহাওয়ার ইতরবিশেষ হবার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘতম দিনগুলোর প্রখর সূর্যালোকের পাশাপাশি বৃষ্টির সম্ভাবনাও থাকবে বলে আবহওয়া অফিস জানিয়েছে।
আবহওয়া অধিদপ্তরের ডেপুটি ডাইরেক্টর বলেন, “আগামী দুদিন যেহেতু ভারী বৃষ্টিপাত হবে সেহেতু ঈদের সময় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে পারে। মেঘলা আকাশ, সাথে গরম পড়বে। যেহেতু সূর্য এখন আমাদের মাথার উপর আছে, দিন অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এ সময় প্রচুর জলীয়বাস্প ঢুকছে মৌসুমী বায়ুর সাথে বঙ্গোপসাগর থেকে। জলীয় বাস্পগুলো যখন সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয়ে যায়, মানুষের জন্য একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গরম থাকবে, মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কোরবানির ঈদের দিনও। ”
Discussion about this post