চট্টগ্রাম, ১১ জুন, ২০২৫:
গত ৯ জুন, সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে ব্রিটেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১০ জুন লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে ড. ইউনূসকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি।
ব্রিটেন সফরে তিনি তিনি বাকিংহাম প্যালেসে রাজা চার্লসের সাথে দেখা করবেন। রাজা অধ্যাপক ইউনূসকে পুরস্কৃত করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।প্রধান উপদেষ্টার এ সফরে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সম্ভাব্য তিনটি বৈঠকের কথা বাংলাদেশের রাজনীতির পালে জোরে ধাক্কা দেয়। অর্থাৎ বেশ কৌতূহলের জন্ম দেয়।
তিনটি বৈঠকের একটি হবার কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে। এরমধ্যে বিস্ময়কর খবর ছিল -যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি। যে চিঠিতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বসার আগ্রহের কথা জানান।
ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন ভ্রমণের সময় সাক্ষাৎ করতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস টিউলিপের কোনো চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন। যে কারণে প্রধান উপদেষ্টার সাথে টিউলিপের বৈঠক হচ্ছে না সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।
তবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সাথে একটি বৈঠকের কথা ছিল। তবে এখন সংবাদ মাধ্যমগুলো লিখেছে- লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্টারমারের বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, কিয়ার স্টারমার কানাডা সফরে গেছেন। তিনি বলেছেন,সময় ও শিডিউল ম্যাচ (সূচি মিললে) করলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হতে পারে।
আর একটা বৈঠক হবার কথা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে। বৈঠকটি হচ্ছে ১৩ জুন সকালে লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে। এখন এ বৈঠকটা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশ বেশ সরগরম। কারণ- প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক জিয়ার মধ্যে বৈঠকে কী আলোচনা হতে পারে?
জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছিল। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সূচি ও রোড ম্যাপ নিয়ে বিএনপির সাথে দিন দিন দূরত্ব আরো বাড়ছে।
সর্বশেষ ড. ইউনূসের আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণার পর বিএনপি আরও বেশি রুষ্ট হয় উঠে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূসের প্রতি।
গত ২৮ মে বিবিসি পরিবেশিত সংবাদে তারেক রহমানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি বলেছেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করার আহ্বান জানান নেতাকর্মিদের।
কিন্তু জাপানে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এক সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। যেখানে তিনি বলেন, একটি দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে। এ কথায় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিএনপি।
অবস্থা দেখে ড. ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্যে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। এতে আরো নাখোশ হয়ে উঠে বিএনপি
এরপর বিএনপি নেতৃবৃন্দ ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যুক্তিতে একের সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিতে থাকে।
ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি তারেক জিয়ার সাথে বৈঠক হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূরীভূত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।