চট্টগ্রাম, ২০ মে, ২০২২:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশের কবজি কেটে নেয়া দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মো. কবির আহমদকে(৪৩) তার এক সহযোগিসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এবং জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দল লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকা অভিযান পরিচালনা করে মোঃ কবির আহমদ (৪৩) ও তার সহযোগী মোঃ কফিল উদ্দিনকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ নূরুল আবছার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় , ঘটনার পর কবির তার সহযোগী কফিলকে নিয়ে বান্দরবান এর দক্ষিণ হাংগর এলাকার একটি দুর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে। অতঃপর সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে কবির তার সহযোগীসহ দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পুনরায় লোহাগাড়া থানার বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়।
অভিযানে গ্রেফতারকৃত কবির তার নিকট থাকা অস্ত্র দিয়ে র্যাব সদস্যদেরকে লক্ষ করি গুলি ছুড়লে একজন র্যাব সদস্য আহত হয়। প্রতি উত্তরে র্যাব পাল্টা গুলি চালায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হতে কবিরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে পুলিশ সদস্যদেরকে হামলায় ব্যবহৃত ১টি দা, ১টি ওয়ান শুটার গান, ৩ রাউন্ড গুলির খোসা, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ২ টি হাসুয়া, ১ টি ছুরি, ১৮০ পিস ইয়াবা, ২ টি মোবাইল ও ২ টি সীম কার্ড।
সর্বশেষ গত ১৯ মে র্যাব-৭ এর অভিযানে তারা গ্রেফতার হয়।
র্যাব -৭ জানায়, গ্রেফতারকৃত কবির স্থানীয় এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছে। কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত। গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রটি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর নিকট হতে ক্রয় করে। তার নামে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত কফিল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় সে পাশের দেশ হতে মাদক নিয়ে এসে চট্টগ্রাম ও তার কাছাকাছি এলাকায় মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেট পরিচালনা করত। সে গ্রেফতারকৃত কবির এর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতা। সে এলাকায় বিভিন্ন মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তার নামেও বিভিন্ন থানায় মাদক, হত্যাচেষ্টা ও মারামারি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে।
#যেভাবে পুলিশ সদস্যের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করেছিল সন্ত্রাসী কবির : গত ১৫ মে সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামী কবির আহমদকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায় পুলিশের একটি আভিযানিক দল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবির অস্ত্রসহ ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হয়। প্রথমে সে তার বাসা সনাক্তকারী ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্য জনি খান তাকে বাধা দিলে কবির তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জনি খানকে সজোরে আঘাত করে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্য শাহাদত হোসেনকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পলায়ন করে। উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত পুলিশ সদস্যদের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তন্মধ্যে পুলিশ সদস্য জনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য র্যাবের হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয় এবং অতঃপর ঢাকার মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৬ মে ডাঃ সাজেদুল রেজা ফারুকী দীর্ঘ ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কব্জিটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন। ওইদিন রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার কেয়াজুপাড়া এলাকা থেকে কবিরের স্ত্রী রুবি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। উক্ত ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং ১৯ মে অভিযান চালিয়ে র্যাব- ৭ কবির ও তার সহযোগীকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করে।
Discussion about this post