চট্টগ্রাম, ১৮ আগস্ট, ২০২২:
চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিজ সন্তানের গুলিতে নিহত সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারের হত্যাকারী ছেলে মাইনুল ইসলামকে(২৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে র্যাব-৭ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
জাতীয় পার্টির সদ্যপ্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে গত ১৬ আগস্ট দুপুরে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার ছেলে মাঈনুল ইসলাম(২৯) পিস্তল দিয়ে গুলি করে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ভিকটিম লুটিয়ে পড়লে তার মেয়ে প্রতিবেশিদের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তার মাকে হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহতের মেয়ে বাদি হয়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
র্যাব এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঘটনার পর থেকে আসামি মাইনকে ধরার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পাওে, জেসমিন আকতার হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মাঈনুদ্দিন কেরানীরহাট হতে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি পরিবহনযোগে রওনা হয়েছে। তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ আগস্ট বিকালে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি দুধর্ষ আভিযানিক দল পথিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার নতুন ব্রিজ এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মাঈনুদ্দিন মোঃ মাঈনুকে (২৯) গ্রেপ্তার করে। আসামির মুখের স¦ীকারোক্তি ও তার দেখানো মতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘর হতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি দিয়ে সে তার মাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে বলে স্বীকার করে।
মাঈনের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মাস্টার মৃত্যুর এক মাস না যেতেই সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয় মেয়ে ও ছেলের মধ্যে। গত ১৩ জুলাই শামসুল আলম মাস্টার বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মৃত্যুকালে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। শামসুল আলমের ছোট ছেলে এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ঈদ-উল ফিতরের সময় তারা দেশে আসেন। শামসুল আলমের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে ও মেয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। শামসুল আলমের বড় ছেলে মাঈনুলের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব ছিল। নিহত জেসমিনের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। মাঈনুল অভিযোগ করে আসছিল মা তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে মেয়েকে সব সম্পত্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে একাধিক বার বৈঠকও হয়। সম্পত্তি নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। মাইনুলের সন্দেহ ছিলো মা সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাইনুল তার মা জেসমিন আকতারকে গুলি করে হত্যা করে।
র্যাব গ্রেপ্তাকৃত আসামি মাঈনকে পটিয়া থানায় হস্তান্তর করেছেন।
Discussion about this post