চট্টগ্রাম, ১৮ অগস্ট, ২০২২:
চা শ্রমিকদের বেতন ৩০০ টাকা করার আন্দোলন অব্যাহত থাকার মধ্যে বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন সংবাদপত্রে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চা শ্রমিকরা কোনো কোনো সুযোগ সুবিধা নিয়ে চা বাগানে কাজ করছে তার একটি ফিরিস্তি দিয়েছে।
গত ৯ আগস্ট থেকে ৩ দিন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন হিসাবে দৈনিক ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন তারা। ১৩ আগস্ট তারা পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট দুইদিন স্থগিত থাকার পর আবার ১৬ আগস্ট থেকে পূর্ণ দিবস ধর্মঘট পালন করে তারা।
আপাতত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করলেও দাবি আদায় না হলে ২৩ আগস্টের পর থেকে জোরদার আন্দোলনের গোষণা দিয়েছেন তারা।
এর মধ্যে বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন জানিয়েছে, আন্দোলনের কারণে দেশের চা শিল্প ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা জানায় চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবি করলেও তাদেও বর্তমান মজুরি ৪০০ টাকার সুযোগসুবিধা পায় বলে জানায়।
তারা বলেছেন, শ্রমিক কল্যানমূখী বাংলাদেশের চা শিল্প যখন বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে তখন আন্দোলনের নামে ৩,৫০০ কোটি টাকার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে আশংকা করছেন উদ্যোক্তারা।
টি এসোসিয়েশন জানায়, চা বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করা হলেও একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমান সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে জানিয়ে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন।
প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্তিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের উপর প্রশাসনিক ভাতার মাধ্যমে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুন নগদ অর্থ প্রদান করা হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন।
উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন রকম সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৮ টি বাণিজ্যিক চা উৎপাদনের বাগান কাজ করছে, যেখানে ১.৫ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে।২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশী চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।
আন্দোলনের কারনে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।
খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে মাস প্রতি শ্রমিক কে প্রতি মাসে প্রতি ৪২.৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন প্রদান করা হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪,২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বন্টন করা হয়েছে।
১৯০ বছরের পুরোনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা বাগানে। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছে নারী শ্রমিকরা।
একজন শ্রমিকের বসত বাড়ির জন্য পরিবার প্রতি ১ হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফিট করে বাড়ি সহ সর্বমোট ৫,৮০০ বিঘা জায়গা প্রদান করা হয়েছে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ০২ টি বড় গ্রুপের ও ৮৪ টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫ টি ডিসপেনসার সহ সর্বমোট ৮৯১ জন মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।
শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরনে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মাইল সর্বমোট ৭৬৮ টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ১ হাজার ২৩২ শিক্ষক দ্বারা বর্তমানে ৪৪,১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণ সূচি যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।
উল্লেখ্য যে বিগত ২০১২ সাল থেকে ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৬ হারে বৃদ্ধি পেলেও চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয় ৯৪.২০ শতাংশ ।
এদিকে গতকাল বুধবারও সিলেট মালনিছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ঊাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, শোকের মাস হিসাবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজপথ অবরোধে যাবে না শ্রমিকরা। বাগানের ভিতর মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল সহ কর্মসূচী পালন করবেন তারা।
সংকট নিরসনে ২৩ আগস্ট মন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এর আগে চা-শ্রমিকদের ধর্মঘট নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। বৈঠক থেকে কোনো আশানুরূপ ফলাফল আসেনি। ইতিমধ্যে চা শ্রমিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, চা শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলনে বাংলাদেশের ২৩১ চা বাগানের শ্রমিকরা যুক্ত আছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়। ছবি: সংগৃহীত
Discussion about this post