চট্টগ্রাম, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
চট্টগ্রামে ‘সেলুন পাঠাগার’ নামে সাধারণ মানুষকে বই পাঠে মনোযোগি করার জন্য একটি সুন্দর উদ্যোগ হাতে নিয়েছে কিছু সৃজনশীল মানুষ। তারা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সেলুনে বই দিয়ে সেলুনের কাস্টমারদের কিছু সময়ের জন্য বই পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যে সময়টুকু অন্য কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করে অন্য একজন চুল, দাঁড়ি কাটতে যাওয়া মানুষ সেই সময়টুকুতে যদি তিনি বই পড়েন। সেই উদ্যোগ হচ্ছে সেলুন পাঠাগার। নাপিতের দোকানগুলোয় কাস্টমারদের বিরক্তি উদ্রেক না করে অপেক্ষমাণ রাখার একটা ব্যবস্থা তারা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছিল। সেটা হচ্ছে সেলুনগুলোতে পত্রিকা রাখা। এটার কারণে তারা কাস্টমারকে অপেক্ষমাণ রাখতে পারে। যতক্ষণ চেয়ারে বসা কাস্টমারের চুল, দাঁড়ি কাটা শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ অন্য এজন কাস্টমারকে অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পত্রিকা হাতে দিয়ে সেটা সেলুনওয়ালা করতেন। কিন্তু সেলুন পাঠাগারের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্রটা অন্য জায়গায়। তা হচ্ছে- ইন্টারনেটের যুগ হওয়ায়- ইন্টারনেটের হাওয়ায় মানুষ পাঠবিমুখ হয়ে উঠছে। বইপত্র পড়ার ঝোঁক একেবারে কমছে। এই প্রবণতা বিশ্বজুড়েই। এ তো সেই লক্ষেই সেলুন পাঠাগারের স্লোগান হচ্ছে-‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’। বীজন নাট্য গোষ্ঠী মানে বীজন নাট্য গোষ্ঠী দল প্রধান কবি গোলাম মাওলা জসিমের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এই সেলুন পাঠাগারের যাত্রা শুরু। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে তারা ১০টি সেলুন পাঠাগার স্থাপন করেছে। ঢাকার বনানী ও তেজগাঁওয়ে এক এক করে দুটি সেলুন পাঠাগার স্থাপন করেছে তারা।
বিশ্বজুড়ে স্লোগানের আলোকে তারা ইন্ডিয়াতে দুটি সেলুন পাঠাগার করেছে। একটি কলকাতায়, অন্যটি জয়দেবপুরে। সিঙ্গাপুর, আফ্রিকা ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে এই সেলুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সেলুন পাঠাগারের মুল সমন্বয়কারী মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে সেলুন পাঠাগার স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছিল। এখন তারা পুরোদমে সেলুন পাঠাগার স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান পালাশ।
অবসরে বই পড়ুন’- স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ৩০ জুন নোয়াখালীতে রতনের সেলুনে বই ও আলমারি বিতরণের মাধ্যমে ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’র কার্যক্রম শুরু হয় বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ এর উদ্যোগে সেলুনে আসা সেবাগ্রহীতাদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে বুক সেলফ ও বই বিতরণ করে থাকি সেলুনে। ১৪ জুলাই চট্টগ্রামের দামপাড়ায় শান্ত হেয়ার কাটিং সেলুনে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, কবি গোলাম মাওলা জসিমের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রমের উদ্বোধন করে বীজন নাট্য গোষ্ঠীর দল প্রধান মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ বই ও সেলফ দেন সেলুনটিতে। সেুলনের ম্যানেজার বাবুল নাথের হাতে বই ও সেলফ তুলে দেন।
এভাবে চলছে তাদের ‘মশাল হাতে’ পথ চলা। এই কাজে আর দলভুক্ত হয়েছেন- বীজন নাট্য গোষ্ঠীর সহ দল প্রধান উম্মে কুলসুম কেয়া, সদস্য মান্নান হিমেল, অভিনেতা বাপ্পি হায়দার, আবৃত্তি শিল্পী আশিক আরেফিন, নাট্য কর্মী সৌরভ পাল সহ অন্যান্য আলোর সারথিরা।
সেলুন পাঠাগারের মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ আরো বলেন ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ এর এ উদ্যোগের ফলে মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে। এটাই আশা করছি।
সেলুন পাঠাগারের স্বপ্নদ্রষ্টা কবি গোলাম মাওলা জসিম জানান, বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এর ফলে মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কমে গেছে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বইয়ের পাঠক। পাঠবিমুখতা দূর করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে আমার এ উদ্যোগ।
সংগঠনের তথ্য থেকে জানা ইতিমধ্যে তারা সারাদেশে ৫০ টির মত সেলুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনকি গ্রাম-মফস্বলের সেলুনেও বই আর বইয়ের সেলফ দেয়া হবে। পাঠাগার স্থাপনে খুব শীঘ্রই যাবেন তারা দ্বীপকন্যা সন্দ্বীপে। এভাবে ‘ইন্টারনেটের ভূত’ তাড়াতে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।