চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪:
দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাটের ব্যবসায়ীদের খুন ও গুমের হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি করে আসছে দুর্বৃত্তরা। চাঁদাবাজ ‘এলাকার বাদশা’ পরিচয় দিয়ে এই পর্যন্ত ২৫ জন ব্যবসায়ীকে চাঁদার জন্য ফোন দিয়েছে। আতঙ্ক ছড়াতে দুটি দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা সাতকানিয়া থানায় ১২টি লিখিত অভিযোগ ও একটি জিডি করেছেন।
অভিযোগ ও জিডি দায়েরের ২০ দিন অতিক্রম করলেও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি থানা পুলিশ।
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ব্যবসায়ীরা আজ মাইকিং করে মানববন্ধনের ডাক দেয়। তবে ৭দিনের মধ্যে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পুলিশের আশ্বাসে স্থগিত করা হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচী।
এলাকায় নজিরবিহীন এই ঘটনায় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
কেরানীহাটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গত রোববার (১৯নভেম্বর) পর্যন্ত প্রায় এক মাস ধরে উপজেলার কেরানীহাট বাজারের অন্তত ২৫ জনের অধিক মুদি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে দু’টি মোবাইল ফোন (নম্বর ০১৬১৮৩০৬২৮৩ ও ০১৮৬৬৯১৬০৬৩) থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা দাবি করা ব্যক্তি নিজেকে ‘এলাকার বাদশা’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তার চাহিদা মত চাঁদা না দিলে বোমা মেরে দোকানে আগুনসহ প্রাণে মেরে ফেলার অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এর পর থেকে অনেক ব্যবসায়ী আতঙ্কিত হয়ে রাত জেগে দোকান পাহারা ও আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ৩০ অক্টোবর একটি মুদি দোকানে আগুন ও ১৫ নভেম্বর একটি ম্যাট্রেসের দোকানে বোমা সদৃশ্য জিনিস দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই দুর্বৃত্ত ফোন করে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে মোবাইল ফোনে ওই দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের স্বীকার করে।
কেরানিহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘এলাকার বাদশা’ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের অব্যাহত হুমকি-ধমকির মাধ্যমে চাঁদা দাবির ঘটনায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা আতংকে আছেন। শুধু তাই নয়, দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় দু’টি দোকানে ইতোমধ্যে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
ফলে নিজেদের জান-মাল রক্ষার্থে উৎকণ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই রাত জেগে দোকান পাহারা এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানান।
তবে ফলপ্রসূ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যবসায়ীরা মহাসড়ক অবরোধ সহ কঠোর কর্মসূচীর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করা হবে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেন সাতকানিয়া থানার ওসি।
চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন কেরানিহাট বাজারের লাকি স্টোরের কবির আহমদ।
তিনি বলেন, ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে দোকানে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি মোবাইল নম্বর (০১৬১৮৩০৬২৮৩) থেকে ফোন দিয়ে বলে, ওই নম্বরে (নগদ করা আছে) ২০ হাজার টাকা দিতে। তার পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে ‘এলাকার বাদশা’ পরিচয় দিয়ে বলে- ‘কেরানীহাটে ব্যবসা করতে হলে আমার কথা শুনতে ও মানতে হবে’। তার কথা শুনবো না বললে, সে আমাকে প্রাণে হত্যা, ব্যবসা করতে দিবে না, প্রতিষ্ঠানে আগুন এবং একা পেলে খুন করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেয়।
অভিযোগকারী মামুনুর রশিদ নামে এক মুদি দোকানদার বলেন, আমাকে ফোন করে দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোর পর থেকে ৩ দিন ধরে ঘরে যাচ্ছিনা। রাতেও দোকান পাহারা দিচ্ছি। থানায় অভিযোগ দিয়েছি, পুলিশ এখনও অপরাধীকে ধরতে পারেনি। শুধু আমি নয়, অনেক ব্যবসায়ী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানদার বলেন, আমাকে প্রতিদিন ২০ বারের অধিক একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কে আমি মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপন করেছি।
শুধু কবির আহমদ ও মামুনুর রশিদ নয়, কেরানীহাটের অনেক ব্যবসায়ী এভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। কেরানিহাট নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহর মুল্লুক বলেন, মার্কেটের অন্য ব্যবসায়ীরাও চাঁদা দাবি করবে এমন আতঙ্কে রয়েছে।
চাঁদা দাবিকারী ওই ফোন করা নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কেরানিহাট প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বলেছিলাম। তবে পুলিশ ৭ দিন সময় চেয়েছে। কোনো সুরাহা না হলে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর কর্মসূচী দিবেন ব্যবসায়ীরা ।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, অপরাধীকে ধরার জন্য কাজ করছি। আশা করি, শীঘ্রই একটি ভালো খবর পাব।
Discussion about this post