চট্টগ্রাম,২০ এপ্রিল, ২০২৫:
গত ১৭ এপ্রিল ছিল বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। এ উপলক্ষে ১৯ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার ও চমেক হাসপাতালের উদ্যোগে একটি র্যালি হাসপাতাল এলাকা প্রদক্ষিণ করে। র্যালি উদ্বোধন করেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার জসীম উদ্দিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, চমেক হাসপাতালের হেমাটোলোজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার গোলাম রব্বানি, বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার কামরুল হাসান, ডাক্তার তানজিলা চৌধুরী, প্যাথলজি বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার জসীম উদ্দিন, হিমোফিলিয়া সোসাইটি, চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
র্যালি শেষে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, হিমোফিলিয়া সাধারণত পুরুষদের জন্মগত রক্তক্ষরণজনিত রোগ। যা নারীদের মাধ্যমে বংশানুক্রমে বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশে সতর হাজারের মত হিমোফিলিয়া রোগী আছে যাদের সকলকে চিহ্নিত করা যায়নি। শরীরে কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। শরীরের অভ্যন্তরেও এ রক্তক্ষরণজনিত রোগ হতে পারে। এ রকম লক্ষণ দেখা গেলে দুই ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শমত রোগীর চিকিৎসা করতে হবে।
হিমোফিলিয়া রোগের আরো লক্ষণ: হিমোফিলিয়া এ রোগীর রক্তক্ষরণ অতি দ্রুত গতিতে হয় তা নয় বরং তাদের রক্ত ক্ষরণ দীর্ঘক্ষণ ধরে হতে থাকে। রক্ত জমাট বাধার উপকরণ ফ্যাক্টর এইট’র ঘাটতির জন্য হিমোফিলিয়া ‘এ’ এবং ফ্যাক্টর নাইন’র ঘাটতির জন্য হিমোফিলিয়া ‘বি’ হয়ে থাকে।
সাধারণত শিশুর দুই তিন মাস বয়সে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমন- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল কালো হয় জ্বলে ওঠা, শক্ত ও গরম হয়ে যাওয়া হামাগুড়ির সময় বিভিন্ন ছোপ ছোপ দাগ পড়া লাফালাফি করা সময় ঠোঁটের উপরের অংশ ছিঁড়ে যাওয়া, জিভ ঠোঁট কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া।
দ্বিতীয় পর্যায়ে শিশু যখন মাঠে খেলতে যায়, অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি, লাফালাফি করার কারণে তার হাঁটু, গোড়ালি, মাংসপেশি ফুলে ওঠা, প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, হাত পা বাঁকা হয়ে যাওয়া।
অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে-মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ঘাড়ে বা গলায় রক্তক্ষরণ, পেটের অভ্যন্তরে বা অস্ত্রে রক্তক্ষরণ, বুকে রক্তক্ষরণ, তলপেটে রক্তক্ষরণ। রোগী বিশেষে হিমোফিলিয়া রোগ তিন রকম। মৃদু হিমোফিলিয়া, মাঝারি হিমোফিলিয়া, মারাত্মক হিমোফিলিয়া
হিমোফিলিয়া ‘এ’ এবং ‘বি’ উভয় রোগীদের এই তিন অবস্থা হতে পারে।
হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা:
এখন পর্যন্ত এ রোগের স্থায়ী কোন চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে সম্ভাব্য বড় ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব। এ রোগের রোগীকে সুস্থ রাখার জন্য ঘাটতিকৃত ফ্যাক্টর ৮/৯ ইনজেকশন রোগীকে শিরার মাধ্যমে সঞ্চালন করে সুস্থ রাখা যায়। তবে এই ইনজেকশন দেশে উৎপাদিত ঔষধ নয় এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় তা সাধারণের সক্ষমতার মধ্যে নেই। অবশ্য তার বিকল্প হিসেবে তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা/ রক্ত পরিসঞ্চালন করে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার ২ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এ পর্যন্ত হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রায় ৩০০০ জন রাগী চিহ্নিত করে সমিতিতে নিবন্ধিত করেছে।
হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা ও ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন প্রাপ্তির স্থানসমূহঃ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন, ঢাকা
হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা। এসব হাসপাতালগুলোতে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন প্রদান করা হয়।
#এ লেখার সকল তথ্য হিমোফিলিয়া সোসাইটি প্রকাশিত প্রচার পত্র থেকে নেওয়া।