চট্টগ্রাম,১০ এপ্রিল,২০২২:
গ্রেপ্তারের ১৯ দিনের মাথায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে জামিন মিলল ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগের মামলায় কারাবন্দী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের। আজ রবিবার মুন্সীগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়া মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করেন। তৃতীয় দফা জামিন শুনানির পর তিনি মুক্তি পেলেন। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এর আগে গত ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তার জামিন চাওয়া হলেও নামঞ্জুর করা হয়েছিল।
কেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল গ্রেপ্তার হন:গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদি হয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির মানবিকের বিজ্ঞান ক্লাসে এক ছাত্র ধর্মের প্রসঙ্গ তুললে হৃদয় মণ্ডল তাদেরকে তা বুঝিয়ে দেন। তাতে পক্ষে বিপক্ষে কথায় তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞানের পার্থক্য বুঝিয়ে দেন। এ কথোপকথনের ভিডিও গোপনে ধারণ করে এক দল ছাত্র। তারা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে অভিযোগ করেন। এই প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
কিন্তু ছাত্ররা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে পরের দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ এসে হৃদয় চন্দ্রকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিদ্যালয় থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়।
কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগের মামলায় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তার ও তার জামিন না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারে তারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন।
গত বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হৃদয় চন্দ্রের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই ঘটনাকে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবি জানায়।
এছাড়া বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে মুক্তি না দিলে তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দেন তিনি।
ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধনও করা হয়েছে।
এদিকে হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের জামিন মুক্তির পর আইনজীবী এড. শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ২২ বছরের শাশ্বত শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠী যে কুচক্রী চিন্তা করেছিল, তার অবসান হয়েছে। জামিনের রায়ে হৃদয় মন্ডল তার অধিকার ফিরে পেয়েছেন।
Discussion about this post