চট্টগ্রাম, ১০ এপ্রিল,২০২২:
পাকিস্তানের মসনদের খেলাটা এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত কি হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এক পক্ষের চাল অন্য পক্ষ আইনের দোহাই দিয়ে মাত করতে চাইছিল। কিন্তু এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি’ পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ আনছিল।
কিন্তু মধ্যরাত পর্যন্ত আদালতের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সব সমাধান করতে হল। অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে পাকিস্তানের গদি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এই অনাস্থা ভোট আয়োজনের জন্য পাকিস্তানের হাইকোর্ট গত বৃহস্পতিবার বেশ কতদিন আলাপ আলোচনা করে স্পিকারের ভেঙ্গে দেয়া পার্লামেন্ট আবার বসানোর আদেশ দেয়। সেখানেই ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণের আহ্বান জানায়।
ইমরান খান সরকারের পতনের ডাক দিয়ে প্রথম লংমার্চ করেছিল ২০১৯ সালে পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান। সেসময় আজাদী মার্চে অংশ নিয়েছিল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দলই। ইমরান সরকার গঠনের পর সেটাই রাজপথে প্রকাশ্যে ইমরান খান বিরোধী তৎপরতা। কিন্তু এবার ইমরান খানের সাথে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মনোমালিন্যই পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন-র (পিএমএল-এন) বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, মাওলানা ফজলুর রহমান ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে ব্যাপক সুযোগ এনে দেয়। সেনা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসাবে সেনাপ্রধান কামার বাজওয়ার প্রস্তাব ইমরান মানতে চায়নি।
তবে ইমরান বেশিরভাগ সময় বলেছেন বিদেশী রাষ্ট্র তথা যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্রে তাকে সরানোর জন্য জোট বেধেছে পাকিস্তানের বিরোধি দল। এই সুযোগে ইমরান খান সরকারের শরীক দলকে টোপ দিয়ে বিরোধী শিবিরে ভিড়ানো হয়। ইমরানের দলের এমপিকেও তারা জোটভুক্ত করে। মূলত ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ চলাকালীন ইমরান খান রাশিয়া গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠক করাতেই আমেরিকা রুষ্ট হয়ে উঠে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটের খড়ক ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের কারণে আর রক্ষা করতে পারেনি তার গদি। গত ৩ এপ্রিল নানা নাটকীয়তার মধ্যে সংসদ অধিবেশন শুরু হলেও সেখানে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব অসাংবিধানিক বলে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলে ডেপুটি স্পিকার কাসেম খান সুরি। তিনি বলেছিলেন, এই অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের সংবিধানের ৫ ধারার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলফিকে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের আদালত পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়াকে বেআইনি ঘোষণা করে আবার আবার পার্লামেন্ট ডাকার আদেশ দেন। তাতে গতকাল দিনব্যাপী নানা নাটকিয়তা ছাড়াও চারবার পার্লামেন্ট মুলতুবী করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। তিনি কোনোভাবেই ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে রাজী ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনিই পদত্যাগ করেন স্পিকারের পদ থেকে। মধ্যরাত গড়ায় অনাস্থা ভোটাভুটি।যেখানে ৩৪২ ভোটের মধ্যে ১৭৪ ভোট পড়ে ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে। যেখানে প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোট।
ইমরানের এই পরাজয়কে বিরোধী জোটের নেতা শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের নতুন ভোর উদয় হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। বলেন, পাকিস্তান গভীর সঙ্কট থেকে রক্ষা পেল।
Discussion about this post