চট্টগ্রাম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে জামিনে বের হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে যুবলীগ কর্মী শহীদুল ওরফে আকাশকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম হত্যাকা-ের ১ নং আসামি সহ তিনজনকে আটক করেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর আসামী মোঃ মামুন (২৫), পিতা-মিন্টু মিয়া, সাং-ইসলামপুরকে চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলী থানাধীন সিডিএ মার্কেট এলাকা হতে, মুকেশ চন্দ্র দাস, @ সৌরভ দাস (২৪), পিতা-তপন কুমার দাস, সাং-পশ্চিম পরাগপুর ও সন্দেহভাজন আসামী মোঃ ইকবাল (২২), মিন্টু মিয়ার পুত্র মো, ইকবালকে(২২) চাঁদপুর জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকা গ্রেফতার করা হয়। তাদের সকলের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়।
র্যাব-৭ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকার যুবলীগ কর্মী মোঃ শহিদুল ইসলাম আকাশকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত ভিকটিম শহিদুল এবং তার বাবা চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন চিনকিরহাট এলাকায় ফার্নিচারের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। প্রতিদিনের মত ঘটনার দিন শহিদুল এবং তার বাবা ফার্নিচারের দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মোঃ মামুন এবং তার সহযোগিরা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের দোকানে এসে মোঃ শহিদুল ইসলামকে গালাগাল করতে থাকে। শহিদুল ইসলাম এর প্রতিবাদ করা মাত্র আসামি মোঃ মামুন তাকে টেনে দোকানের বাইরে নিয়ে যায় এবং কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মাথার পিছনে গভীর জখম করে।
প্রচ- আঘাতে শহিদুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামি মোঃ মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দ্বারা শহিদুলকে গলায় এবং থুথনিতে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে শহিদুলের পিতা তার ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে আসামি মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং দোকানের সামনে রাস্তার উপর তার বুকের উপর বসে হুমকি দেয়- যদি সে বেশি নড়াচড়া করে তবে তাকে জবাই করে দিবে। এরপর দুস্কৃতিকারীরা তাদের হাতে থাকা ছুরি, কিরিচ এবং বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দ্বারা শহিদুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে দুস্কৃতিকারীরা গুরুতর আহত অবস্থায় শহিদুলকে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
এরপর শহিদুলকে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তার পিতা এবং বোন স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রথমে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ বিষয়ে নিহত ভিকটিম শহিদুলের বোন বাদি হয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় ১৪ জন জনের নাম উল্লেখ করে ও এবং ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার।
শহিদুলকে হত্যার কারণ হিসাবে মামুন জানায়, গত ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকার মোঃ মামুনের ছোট ভাই আফজাল হোসেনকে পারিবারিক, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কুপিয়ে হত্যা করে। এই সময়ে মামুন এবং তার অপর এক ভাই ইকবাল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় জেল হাজতে ছিল।
মূলত মামুন ও শহিদুলদের পরিবারে পূর্ব হতে পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল। পরবর্তীতে ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে মামুন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার সহযোগি মোতালেব, রাজু, নেজাম, হামিদ, মুকেশসহ শহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯ সেপ্টেম্বর জেল হতে জামিনে মুক্তি পাওয়ার ৫ দিনের মাথায় যুবলীগ কর্মী শহিদুলকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে।
গ্রেপ্তারকৃত ৩ জনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব।
Discussion about this post