চট্টগ্রাম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩:
আবু নাইম সোহাগের জন্য বাফুফের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েই ‘বাফুফে’ সকলে দায়মুক্তি নিয়ে নিল সংবাদ সম্মেলনে।
অথচ মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের পাঠাত না পারার ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
বাফুফের বিরুদ্ধে এই সমালোচনা শুরু হয় ৬৬ লাখ টাকা যোগাড় করতে না পারার অজুহাত দেখিয়ে গত ৬ এপ্রিল থেকে মিয়ানমারে শুরু হওয়া অলিম্পিকের এশিয়ান বাছাই পর্বে মেয়েদের ফুটবল দল পাঠাতে না পারার ব্যর্থতায়। বাফুফে বলেছে, মিয়ানমারে দল পাঠাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল তারা। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছেও অর্থসহায়তা চেয়েছিল তারা। কোনো জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সফর বাতিল করে বাফুফে। বাফুফেকে জরিমানাও গুণতে হয়েছে নিবন্ধন করে সরে আসায়।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাফুফে প্রধান কাজী কাজী সালাউদ্দিন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে নিয়েও খোঁচা দেন ।
তার কথার প্রতিউত্তর দিতে গিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমার কাছে খারাপ লাগছে মেয়েরা যেতে পারল না। তা–ও মাত্র ২০ লাখ (বাফুফে বলেছে ৬০ লাখ) টাকার জন্য! এর চেয়ে দুঃখ-কষ্ট আর কী হতে পারে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি কষ্টটাই না পেয়েছেন!বিসিবি সভাপতির চোখে টাকার অভাবে সাফ চ্যাম্পিয়নদের মিয়ানমারে খেলতে না পাঠানোটা দেশের জন্যই বড় লজ্জার, ‘দেশের জন্য এর চেয়ে বড় বদনাম হতে পারে না।
তিনি বলেছেন, বাফুফেকে এই টাকা চাইলে আমার অনেক ক্রিকেটারও দিতে পারতেন। বাফুফের অনেকের ডেইলি খরচও আছে বিশ লাখ টাকা।
নাজমুল হাসান পাপন এই কথা বলার পর মেয়েদের টিম মিয়ানমারে পাঠাতে না পারায় বাফুফেকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় সেখান থেকে।
আর কাজী সালাউদ্দিন তার কথায় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঘাঁড়েও দায় চাপান। একদিকে বাফুফের দল পাঠাতে না পারার ব্যর্থতা অন্যদিকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপর দায় চাপানোর কারণে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসানও চটে যান বাফুফের উপর। তিনি বলেন, মিয়ানমারে বাফুফের দল পাঠানোর ইচ্ছা ছিল না। এজন্য নাটক সাজিয়েছে তারা।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, সরকার বা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়নি এ জন্য দল পাঠাতে পারেনি। তারা যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এ জন্য কখনোই আর্থিক সহযোগিতা এর আগে সেভাবে চায়নি। তারপরও আমরা ২৭ মার্চ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সেখানে উল্লেখ ছিল ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের অবগত করানো- যে তাদের ৯২ লাখ টাকা প্রয়োজন। অথচ এক দিন পরই তারা জানালেন যে টাকা পাচ্ছেন না বলে টিম পাঠাতে পারছে না। কীভাবে এটা হয়?’ এই উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
আর এর মধ্যেই বোমা ফাটে ১৪ এপ্রিল বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিয়ে। আর্থিক জালিয়াতির কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ) জরিমানাও করা হয় তাঁকে। ফুটবলের বৈশ্বিক ফুটবল এই সংস্থা জানায়, বাফুফেকে দেওয়া ফিফার টাকার হিসাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় বাফুফে আগের মত গুরুত্ব না দিলেও আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে। তবে ১৭ এপ্রিল, সোমবার বাফুফে ভবনের এই সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে কোনো ধরনের দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেছে। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও অর্থ কমিটির প্রধান সালাম মুর্শেদী ‘কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং ’ ফিফা কোনো দুর্নীতির কথা বলেনি বলে জানান। আর্থিক কেলেংকারি এবং বিল-ভাউচার জালিয়াতির দায়ে ফিফার নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আবু নাঈম সোহাগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তবে সোহাগের বিরুদ্ধে বাফুফের দুয়ার চিরতরে বন্ধের কথা জানালেন মুর্শেদী। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সংস্থাটি। ঘটনা তদন্তে তাদের জরুরি সভায় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সালাউদ্দিন বলেন, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করার শাস্তি পেয়েছেন সোহাগ।
Discussion about this post