Portcity Link
আজ: রবিবার
২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন
No Result
View All Result
Portcity Link
No Result
View All Result
Home যুক্তিতর্ক

১৯৭১’র ১৬ ডিসেম্বর/ বাংলাদেশের জন্ম এবং পাকিস্তানের আত্ম সমর্পণের দলিল

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী

১৯৭১’র ১৬ ডিসেম্বর/ বাংলাদেশের জন্ম এবং পাকিস্তানের আত্ম সমর্পণের দলিল
0
SHARES
60
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

#রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী

জেনারেল মানেকশ’ দিল্লীর মার্কিন দূতাবাস এবং আকাশবাণীর মাধ্যমে লেঃ জেঃ এ. এ. কে. নিয়াজীকে সকাল ৯টার মধ্যে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব মেনে নেবার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেন। গতকাল বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত বিমান হামলা বন্ধ ছিল। নিয়াজী শেষ পর্যন্ত স্থির করলেন যে, জেনারেল মানেক শ’র প্রস্তাবই মেনে নেবেন। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী বেতারে নির্দিষ্ট তরঙ্গ মারফত মিত্রবাহিনীর সংগে যোগাযোগ করে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

২৭৬ দিনের মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হল। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম পৃথিবীর মানচিত্রে উৎকীর্ণ হল। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হল। ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে বাঙালী জাতি জাগ্রত হল। বিজয় দিবস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন পর্যন্ত দিনলিপি উপস্থাপন করা হল।

পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত ঢাকা:

বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকারের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের দলিল অনুসারে ৯১,৪৯৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের সহযোগী এবং পরিবারবৃন্দ আত্মসমর্পণ করেছিল। তন্মধ্যে, সর্বমোট যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে ৫১, ৯৯৮ জন ছিল নিয়মিত সেনাবাহিনীর, ১৮,২৮৭ জন আধা সামরিক বাহিনীর এবং ১৬,২৯৩ জন ছিল বেসামরিক ব্যক্তি।

মুজিবনগরস্থ বাংলাদেশ সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রাইটার্স বিল্ডিং-এ এক জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে মিঃ আর, গুপ্ত (আই সি এস) বাংলাদেশে পাক- বাহিনীর আত্মসমর্পণের সংবাদ জানান।
এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সর্বজনাব রুহুল কুদ্দুস, নুরুল কাদের খান, খন্দকার আসাদুজ্জামান, জয়গোবিন্দ ভৌমিক প্রমুখ সচিববৃন্দ সহ এবং আরও কয়েকজন। ভারত সরকারের বহু উর্দ্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। (১৫ খণ্ডঃ ২৯৩ পৃঃ)।
উল্লেখ্য, এই বৈঠকের পর পরই বাংলাদেশ সরকারের সচিববৃন্দ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মিলিত হন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমাণ্ড জনাব এ. কে. খন্দকার (এয়ার ভাইস-মার্শাল)-কে দুপুরের এক বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠান হয়। তিনি আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে কলকাতা থেকে আগরতলা হয়ে ঢাকা পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম. এ. জি. ওসমানী, এম.এন.এ ১৩ ডিসেম্বর থেকে সিলেট রণাঙ্গণ পরিদর্শনে কলকাতার বাইরে ছিলেন। কর্নেল ওসমানী পূর্বাঞ্চল সীমান্ত সফর শেষে ফেরার পথে তাঁর হেলিকপ্টার গুলিবিদ্ধ হয় এবং সহযাত্রী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ লেঃ কর্নেল আব্দুর রব, এম.এন.এ আহত হন। তাঁর হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাটি এতদিন ছিল রহস্যাবৃত। সম্প্রতি জানা গেছে, ভুলক্রমে মুক্তিবাহিনী থেকেই গুলি চালানো হয়েছিল। সে কারণেই প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) এম. এ. জি. ওসমানী, এম.এন.এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরেন।

আত্মসমর্পণের পূর্বরাগ:

‘সকাল আটটায় রাজধানী ঢাকা শহরের প্রান্ত সীমায় পৌঁছে ঢাকা মীরপুর সড়কের হেমায়েতপুর সেতুর উপর দাঁড়িয়ে মেজর জেনারেল নাগরা এক টুকরা কাগজ জীপের বনেটে রেখে শত্রু পক্ষের কমাণ্ডার আমীর আব্দুল্লাহ নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের জন্য পত্র লিখলেন। উল্লেখ্য, মেজর জেনারেল নাগরা ও লেঃ জেঃ নিয়াজী ব্রিটিশ আর্মিতে একই সালে কমিশন ও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
‘প্রিয় আব্দুল্লাহ, আমি এখানে। কোন চিন্তা করিও না। আমি তোমার ভার নেব। বৃথা রক্তপাত এড়িয়ে আত্মসমর্পণ কর। আমার পত্রবাহক মারফত জবাব দেবে আশা করি -ইতি, তোমার নাগরা।’

ঐ চিঠির প্রত্যুত্তরে আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে আসেন মেজর জেনারেল জামশেদ। সঙ্গে দু’জন লেঃ কর্নেল, একজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন ও কয়েকজন সেনা। তারা একটি মার্সিডিস বেঞ্জ ও দু’টি জীপে আমিনবাজার মসজিদের সামনে ঢাকা-আরিচা রাস্তায় এসে দাঁড়ান। যৌথবাহিনীর সেনাপতিরা দাঁড়ান সারিবদ্ধভাবে। মেজর জেনারেল নাগরার বামে ব্রিগেডিয়ার সান সিং (বাবাজী), তাঁর বামে বিগ্রেডিয়ার হরদেব সিং ক্লে ও সর্বশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী (বাঘা সিদ্দিকী)।

এ প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিক। লিখেছেন, ‘মেজর জেনারেল জামশেদ যৌথবাহিনীর সেনানায়কদের সামনে দাঁড়িয়ে সামরিক আভিবাদন করার পর নাগরার সামনে এসে কোমর থেকে রিভলভার খুলে দুই হাত প্রসারিত করে জেনারেল নাগরার সামনে বাড়িয়ে দিল। মেজর জেনারেল নাগরা ছ’টি বুলেট খুলে রেখে রিভলভারটি আবার জামশেদের হাতে ফেরত দিলেন। এরপর জামশেদ আগের মত দুই প্রসারিত হাতে তার সামরিক টুপিটি নাগরার হাতে অর্পণ করলো। মেজর জেনারেল নাগরা লাইন থেকে বেরিয়ে জামশেদের টুপিটি আমার হাতে তুলে দিলেন। জামশেদ তার গাড়ীর ‘জেনারেল ফ্ল্যাগ’ এনে নাগরার হাতে তুলে দিল। নাগরা জেনারেল ফ্ল্যাগটি ব্রিগেডিয়ার সান সিংয়ের হাতে অর্পণ করলেন। মেজর জেনারেল জামশেদ সবশেষে তার কোমর থেকে বেল্ট খুলে নাগরার হাতে দিল। নাগরা তা ব্রিগেডিয়ার ক্লের হাতে দিলেন। তিনি সাময়িকভাবে ব্যবহারের জন্য জামশেদকে বেল্টটি ফিরিয়ে দিলেন। মেজর জেনারেল নাগরার গাড়ী থেকে যৌথবাহিনীর ‘জেনারেল ফ্ল্যাগ’ (যৌথবাহিনীর ছিল না) খুলে আত্মসমর্পিত পাকিস্তান বাহিনীর মার্সিডিস বেঞ্জে লাগিয়ে জামশেদকে নিয়ে আমরা অবরুদ্ধ শত্রু ঘাঁটির দিকে এগুলাম।’ সকাল দশটা পাঁচ মিনিটে আমাদের গাড়ী নিয়াজীর ১৪তম ডিভিশন সদর দপ্তরের সামনে এসে দাঁড়ালো। জামশেদ আমাদের নিয়াজীর দপ্তরে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। সকাল দশটা দশ মিনিটে নিয়াজী তার অফিস ঘরে এল। অফিসে ঢুকে তাঁর চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বিজয়ী সেনাপতিদের সামরিক অভিবাদন জানালো। তারপর আলোচনা হলো সময় ও স্থান নিয়ে, কোথায় আত্মসমর্পণ হবে।
(স্বাধী: ৭১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৮৩)।

বা১৯৭১ ১৫ ডিসেম্বন আনন্দবাজার পত্রিকা ৬ কলাম শিরোনামে সংবাদ ‘নিয়াজীর আরজি-যুদ্ধ বিরতি চাই’ ॥ মানেকশঃ না, আত্মসমর্পণ’

সংবাদটি নিম্নরূপ:
‘ঢাকায় নিরুপায় পশ্চিম পাকিস্তানী সেনানায়ক নিয়াজী এখন নতজানু। রণসাধ তাঁর মিটেছে। তাই এখন তিনি চান যুদ্ধ বিরতি। তাঁর এই আরজি ভারতের সেনানায়ক জেনারেল মানেক ‘শ সমীপে পাঠিয়ে দিয়েছেন দিল্লির মার্কিন দূতাবাসে। সঙ্গে সঙ্গে মিলেছে জেনারেলের উত্তর। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ বিরতি নয়, আত্মসমর্পণ করুন। আমি আশা করি, বাংলাদেশে আপনার আজ্ঞাবহ সৈনিকদের অবিলম্বে যুদ্ধ থামাতে বলবেন এবং আমার আগুয়ান সেনাবাহিনীকে যেখানেই দেখা যাবে সেখানে তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করারও হুকুম দেবেন। বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে জেনারেল মানেকশ’ জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ ঢাকার ওপর আজ বিকাল পাঁচটা থেকে আগামীকাল সকাল ন’টা পর্যন্ত বিমান বাহিনীর আক্রমণ বন্ধ। তবে স্থল বাহিনী এবং মুক্তিফৌজ যথারীতি কাজ চালিয়ে যাবেন। জেনারেল মানেক ‘শ’র উত্তরও গিয়েছে মার্কিন দূতাবাস মারফত।
নিয়াজীর বার্তায় সাক্ষী হিসাবে সই করেছেন পূর্ব বাংলার জঙ্গীশাহীর গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ফরমান আলি। এবং ধারণা, নিয়াজীর এই আরজিতে রয়েছে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গোপন সমর্থন। (আ:বা:প:)।’

[বিঃ দ্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকার অন্য এক সংবাদে বলা হয়, বুধবার কলকাতার একজন সামরিক মুখপাত্র জানান, ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী এখন ঢাকার চতুর্দিক থেকেই নাগপাশের মত এঁটে ধরেছেন। মিত্রবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে আছেন। খবর পাওয়া গিয়েছে, ঢাকার যেসব অসামরিক লোকজন বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, শত্রুসৈন্যরা তাঁদের পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘরে ঢুকে ঘাঁটি গেড়েছে। দলে দলে সৈন্যরা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে নরসিংদীর উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর আর একটি দলও দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে আগুয়ান। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট অর্ধেক ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে। খুলনার শিরোমণি মুক্ত, গত পাঁচদিন ধরে পাক-সেনারা জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মাগুড়ায় প্রচণ্ড লড়াইয়ের মুখে পাক-সেনারা মধুমতি নদী পার হয়ে ফরিদপুর সরে মধুমতিতে সৈন্য চলাচলের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ব্রিজ তৈরি করেছে। আগামীকালই গোয়ালন্দ, ফরিদপুর মুক্ত হবে। সিলেটে বালুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানি পাক-সেনা বুধবার মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। যমুনা নদীর এপারে সিরাজগঞ্জ ও ওপারে জগন্নাথ ঘাটের দিকেও ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সৈন্যরা অগ্রসরমান। উদ্দেশ্য পাক-সেনাদের পালাবার পথ রোধ করা। দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরে পাক-সেনারা প্রচণ্ড বাধা দেয়।

– দু’দিন যুদ্ধের পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ডিসেম্বর ১০ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রামের মহকুমা শহর রামগড় মুক্ত করে।

– পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে আগামী ১৭ ডিসেম্বর রাত্রি পৌনে আটটায় বেতার ভাষণ দেবেন, পাকিস্তান রেডিও এ খবর জানায়।

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা (বিশেষ সংখ্যা) বিকেলে প্রকাশিত হয়। সংবাদ শিরোনামে ছিলঃ “পাকিস্তান হার মানল, নিয়াজীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ”

প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ ‘বাংলাদেশে দখলদার পাক ফৌজের সর্বাধিনায়ক লেঃ জেঃ নিয়াজী আত্মসমর্পণের শর্তাদি নিয়ে আলোচনার জন্য ইষ্টার্ন কমান্ডের অধ্যক্ষ মেঃ জেঃ জেকবকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। জেঃ জেকব তদনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালেই হেলিকপ্টারে ঢাকা রওনা হয়ে যান। এই সম্পর্কে নয়াদিল্লী থেকে প্রকাশিত এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয়েছে: জেনালের মানেক ‘শ আত্মসমর্পণের যে আহবান জানিয়েছিলেন, আজ সকালে লেঃ জেঃ নিয়াজী তাতে সাড়া দেন। ঢাকা থেকে মাইক্রোওয়েভ মারফত তিনি আত্মসমর্পণে রাজি হওয়ার কথা জানান। জেনারেল মানেকশ’ আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা। কিন্তু তখন পর্যন্ত জেঃ নিয়াজীর কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ায় ভারতীয় বিমানবহর ঢাকার সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলির উপর বোমাবর্ষণ এবং সৈন্যবাহিনী পুনরায় ঢাকার সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। এর কিছু পরেই পাওয়া যায় আত্মসমর্পণের খবর। জেনারেল নিয়াজীর কাছ থেকে সর্বশেষ যে বার্তা পাওয়া গিয়েছে তাতে তিনি আরও ছয় ঘন্টা বোমাবর্ষণ বন্ধের জন্য আরজি জানিয়েছেন। সেই আরজিতে সায় দিয়ে বেলা তিনটা পর্যন্ত বোমাবর্ষণ মুলতবি রাখা হয়েছে।’

নয়াদিল্লী থেকে ইউ এন আই সংবাদ সংস্থা জানায়: পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী আজ বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন, পাক-বাহিনী প্রধান লেঃ জেঃ নিয়াজী এবং ভারতীয় বাহিনীর ইষ্টার্ণ কমাণ্ডের জিওসি-ইন-সি লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং অরোরা। লেঃ জেঃ অরোরা এই উদ্দেশ্যে আজ দুপুরে বিমানযোগে বাংলাদেশের রাজধানীতে গিয়েছিলেন। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে এই নথি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী পূর্ণ মুক্তি লাভ করলো। (যুগান্তর)

পাক বাহিনীর ঢাকায় বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় পক্ষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ও উল্লাসে ফেটে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর অপরাহ্নে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রদত্ত ঐতিহাসিক ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপ :

শ্রীমতী গান্ধীর লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রদত্ত বিবৃতির বাংলা রূপান্তরঃ

“আমার একটি ঘোষণা আছে। পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা বাংলাদেশে শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। আজ ভারতীয় সময় ৪টা ১ মিঃ ঢাকায় লেঃ জেনারেল এ. কে. নিয়াজী পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশ বাহিনীর জিওসি ইন-সি লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণপত্র গ্রহণ করেছেন। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত রাজধানী।

এই সংসদ ও সমগ্র জাতি এই ঐতিহাসিক ঘটনায় আনন্দিত। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে তাঁদের এই বিজয়লগ্নে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বীরত্ব ও আত্মত্যাগের জন্যে আমরা মুক্তি বাহিনীর সাহসী তরুণদেরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তাদের যোগ্যতা প্রতিপন্ন করেছে। আমরা তাদের জন্য গর্বিত। তাদের নিয়মানুবর্তিতা ও একাগ্রতার কথা সুবিদিত। যারা জীবন দিয়েছে ভারত তাদের ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের সাথে জেনেভা চুক্তি অনুসারে ব্যবহার এবং বাংলাদেশের জনগণের সাথে মানবিক আচরণ করার জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেনেভা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সুযোগ যদিও হয়নি, তবুও বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধবন্দীদের সাথে অনুরূপ আচরণ করবে বলে ঘোষণা করেছে। কোন প্রতিশোধমূলক ঘটনা যাতে না ঘটে তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার, মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর।

আমাদের উদ্দেশ্য সীমিত। আমাদের লক্ষ্য ছিল ত্রাসের রাজত্ব থেকে দেশকে মুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের বীর জনতা ও মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করা এবং আমাদের মাতৃভূমির উপর আক্রমণ প্রতিহত করা। প্রয়োজনের বেশি একদিনও ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে থাকবে না। যে লক্ষ লক্ষ লোক তাদের ঘরবাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করেছিল তারা ইতিমধ্যেই ফিরে যেতে শুরু করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশের পুনর্বাসনের জন্যে সরকার ও জনগণকে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি ও বিশ্বাস করি যে, এই নতুন দেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জনগণের মধ্যে যথাযোগ্য স্থান গ্রহণ করে বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন। সোনার বাংলায় একটি সার্থকতাপূর্ণ ভবিষ্যৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আত্মনিয়োগ করার জন্যে বাংলাদেশের জনগণের সময় এসেছে, তাদের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা রইল। তাদের এই বিজয় শুধু তাদের একার নয়। যেসব জাতি মানবিক চেতনার মূল্য দিয়ে থাকে সেসব দেশ এ বিজয়কে মুক্তির সন্ধানে মানুষের বিরাট সাফল্য হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

পাকিস্তানী বাহিনীর লেঃ জেঃ নিয়াজী ভারতীয় বাহিনীর লেঃ জেঃ অরোরার কাছে প্রদত্ত যে আত্মসমর্পণ পত্রে স্বাক্ষর করেন তাতে আছেঃ

॥ আত্মসমপর্ণের শর্ত ॥

‘এতদ্বারা পূর্বাঞ্চলের ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জিওসি-ইন-সি লেঃ জেনারেল অরোরার কাছে পাক-বাহিনীর ইষ্টার্ন কমান্ড বাংলাদেশস্থিত সমস্ত পাকিস্তানী সশস্ত্র সৈন্যের আত্মসমর্পণের কথা স্বীকার করছে। আত্মসমর্পণ যারা করেছে তাদের মধ্যে আছে পাকিস্তানী স্থল, বিমান ও নৌ-বাহিনীসহ প্যারা মিলিটারী বাহিনী ও অসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর সমস্ত সৈনিক।

এই সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিকরা যে যেখানে আছে সেখানকার লেঃ জেনারেল আরোরার অধীনস্থ সৈন্য বাহিনীর কাছে অস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করবে। এই নথি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানী ইষ্টার্ন কমান্ড লেঃ জেনারেল অরোরার অধীন হয়ে যাবে। এই আদেশ যে অবজ্ঞা করবে তাকে আত্মসমর্পণ শর্তের পরিপন্থী বলে মনে করা হবে এবং যুদ্ধের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আত্মসমর্পণ শর্তাবলী সম্পর্কে কোন সন্দেহ দেখা দিলে লেঃ জেঃ অরোরা সে বিষয়ে যে ব্যাখ্যা করবেন তাকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হবে। লেঃ জেনারেল অরোরা এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, যেসব সৈন্য আত্মসমর্পণ করবে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে জেনেভা চুক্তির শর্তানুযায়ী সম্মান ও মর্যাদাযুক্ত ব্যবহার করা হবে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে। লেঃ জেনারেল অরোরার অধীন সেনাবাহিনীর সাহায্যে বিদেশী নাগরিক, সংখালঘু সম্প্রদায় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে।’ উল্লেখ্য, আত্মসমর্পণের ব্যাপারে সমস্ত ব্যবস্থা করেন ইষ্টার্ণ কমাণ্ডের চীফ অব ষ্টাফ মেজর জেনারেল জে. এফ, আর, জেকব। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর আত্মসমর্পণের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মেজর সিদ্দিক সালিক লিখেছেন: “বিকেলের শুরু হতেই জেনারেল নিয়াজী গাড়ী করে ঢাকা বিমানবন্দরে গেলেন ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে। তিনি পত্নীকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে এলেন। এক বিরাট সংখ্যক বাঙ্গালী জনতা ছুটে গেল তাদের মুক্তিদাতা ও তার পত্নীকে মাল্যভূষিত করতে। নিয়াজী তাঁকে সামরিক কায়দায় স্যালুট দিলেন এবং করমর্দন করলেন। একটি হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য। বিজয়ী এবং বিজিত দাঁড়িয়ে আছে প্রকাশ্যে বাঙ্গালীদের সামনে আর বাঙ্গালীরা অরোরার জন্যে তাদের গভীর ভালবাসা এবং নিয়াজীর জন্যে তীব্র ঘৃণা প্রকাশে কোনরূপ গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে না। উচ্চকণ্ঠে চীৎকার ও শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে তাদের গাড়ী রমনা রেসকোর্স-এ এলো। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্যে মঞ্চ তৈরি করা হয়। বিশাল ময়দানটি বাঙ্গালী জনতার উদ্বেল আবেগে ভাসছিল। তারা প্রকাশ্যে একজন পশ্চিম পাকিস্তানী জেনারেলের দর্পচূর্ণের দৃশ্য দেখবার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তান সেনাবহিনীর একটি সুসজ্জিত দলকে হাজির করা হলো বিজয়ীকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্যে। অন্যদিকে একটি ভারতীয় সেনাদল বিজিতের প্রহরায় নিযুক্ত হলো। প্রায় দশ লাখ বাঙ্গালী এবং কয়েক কুড়ি বিদেশী সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরা ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করলেন। ঢাকা দখলের নিদর্শনস্বরূপ জেনারেল নিয়াজী তার রিভলভার বের করে অরোরার হাতে তুলে দিলেন। রিভলভারের সাথে তিনি পূর্ব পাকিস্তানকেও তুলে দিলেন’। (নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল, পৃঃ ২০৯)।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, এ দিন বিকাল চারটা চল্লিশ মিনিটে পঁচিশ-ছাব্বিশটি ভারতীয় চৈতক হেলিকপ্টার ঢাকার তেজঁগা বিমান বন্দরে অবতরণ করেছিল। পাক সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চল প্রধান লেঃ জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজী বাংলাদেশ ভারত যৌথবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বিজয়ী সেনাপতি লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাকে প্রথমে স্বাগত জানালেন। এরপর বিজয়ী বাহিনীর মেজর জেনারেল স্বগত সিং, মেজর জেনারেল নাগরা, ব্রিগেডিয়ার সান সিং, (মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বাবাজী নামেই পরিচিত) পঁচিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তিনি প্রশিক্ষক। মেঘালয়সহ পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবির সরাসরি তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লে, মেজর জেনারেল স্বগত সিং, মেজর হায়দার, ফ্লাইট লেঃ ইউসুফ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী জেনারেল অরোরাকে স্বাগত জানালেন। লেঃ জেনারেল নিয়াজীর সাথে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, মেজর জেনারেল জামশেদ যিনি সকাল ন’টায় আত্মসমর্পণের সংবাদ জেনারেল নাগরাকে জানান। তার পিস্তল, কোমর বেল্ট ও হেড ক্যাপ খুলে দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন আত্মসমর্পণের সত্যতা। আমিনবাজারের মসজিদের সামনে এ প্রাথমিক আত্মসমর্পণ করে। হেলিকপ্টারে জেনারেল অরোরার সাথে এসেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ বাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ. কে. খোন্দকার, জেনারেল অরোরার সহধর্মিনী শ্রীমতি অরোরা আর এসেছিলেন কলকাতা থেকে ষাট সত্তর জন বিদেশী সাংবাদিক।
বিমান বন্দর নয়, ও যেন এক জনসমুদ্র। সবাই আনন্দে উচ্ছ্বাসে বিহবল, উল্লাসে আত্মহারা। নিয়াজীর গাড়ীতেই অরোরা উঠলেন। গাড়ীর পিছনের সিটে নিয়াজী ও অরোরা, সামনের সিটে অরোরার সহধর্মিনী।

বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিজিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেঃ জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজী ও ভারত বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর প্রধান বিজয়ী জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন কমাণ্ডার এ. কে. খোন্দকার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ২নং সেক্টরের গেরিলা বাহিনীর অনন্য প্রশিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মেজর হায়দার, ফ্লাইট লেঃ ইউসুফ ও অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক কাদের সিদ্দিকী (বাঘা সিদ্দিকী)। নিয়াজীর আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর দান শেষ হতেই একশজন পাকবাহিনীর অফিসার ও একজন জোয়ান আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে তাদের অস্ত্র মাটিতে নামিয়ে রেখেছিলেন।
পাক বাহিনীর পরাজয়ের কারণগুলো নির্ণয় করতে গিয়ে জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে (ডিসেম্বর ১৭) বলেন, পাক বাহিনী মেঘনা ও মধুমতির দুপারে সৈন্য সমাবেশ করতে পারলে মিত্রবাহিনীকে কয়েকমাসের জন্য প্রতিরোধ করতে পারতো।
সাংবাদিক মোহাম্মাদ মোদাব্বের বিজয় দিবস সম্বন্ধে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেনঃ অবশেষে এলো ১৬ ডিসেম্বর। রক্তে রঙীন সূর্য যেন সঙ্গে নিয়ে এলো মহাবিজয়ের মহা ইঙ্গিত। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ভোর হতে না হতে প্রস্তুত। আর দেরী যেন তাদের সহ্য হয় না। দেখতে দেখতে সকাল ৭টা বেজে গেল। দেখা গেল পশ্চিম- উত্তর কোণ থেকে একখানি বিরাটকায় হেলিকপ্টার এসে সৈন্যদের ছাউনির কাছে নেমে পড়লো। হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে এলেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ক্লিয়ার, ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিং এবং মুক্তি বাহিনীর অধিনায়ক বাঘা সিদ্দিকী। সাভার মোটর ষ্ট্যান্ডের এক মাইল দক্ষিণে যেখানে রাস্তাটা বিরাট রকম বাঁক নিয়েছে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী কমান্ডাররা সেখানে নেমে এগিয়ে চললেন। পায়ে হেঁটে তারা চলছেন রাস্তার দুই পাশ ধরে সামনে। কোন সাড়া শব্দ নেই। মিরপুরের কাছাকাছি এসে গেছে মিত্র বাহিনী, তখন দেখা গেল ৫/৬ জন সৈন্য প্রাণপণ দৌড় দিয়ে মিত্র বাহিনীর দিকে আসছে। কারা ওরা? শত্রু না মিত্র? অধিনায়করা উৎসুক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এমন সময় দেখা গেল মুক্তি বাহিনী মিরপুর পুলের উত্তর দিকের গ্রামগুলিতে অবস্থান নিয়েছে যাতে ভুল করে তাদের উপর হামলা করা না হয়, সে জন্য ওরা এত ব্যস্ত হয়ে সংবাদ দিতে এসেছে। শত্রু সেনারা মিরপুর পুলের পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়েছে। দুঃসাহসী সবুর এত আগে মিরপুর এলাকায় এসে গেল জেনে অধিনায়করা অবাক হয়ে গেলেন।

বেলা প্রায় ৯টার সময় মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর কমাণ্ডাররা মিরপুর সেতুর পশ্চিম ধারে উপস্থিত হলেন। সৈন্যদের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা। পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে না প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাবে এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। যদি প্রতিরোধ সংগ্রাম চালায় তা’হলে বেসামরিক জনসাধারণের জীবনও বিপন্ন হবে। সুতরাং সে সংগ্রাম পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে সমর নায়করা ম্যাপ খুলে পরিকল্পনা করতে লাগলেন। তারপর পায়ে হেঁটে তাঁরা এগিয়ে চললেন। সংগে মাত্র এক ব্যাটালিয়ান সৈন্য। বাকী সৈন্যরা অনেক পিছনে পড়ে গেছে। বেতারে জেনারেল মানেক ‘শ ঘন ঘন ঘোষণা করছেন ‘হাতিয়ার ডাল দো’। কিন্তু জেনারেল নিয়াজীর কাছ থেকে আত্মসমর্পণের কোন সাড়া নেই। মানেক ‘শ’র দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে যাচ্ছে। কাজেই দুশমনরা আত্মসমর্পণ না করলে শেষ আঘাত হানতে হবে। কাজেই মিত্র বাহিনীর জেনারেল নাগরা মিরপুর পুলের উপর থেকেই নিয়াজীকে নিম্নলিখিত পত্রখানি লিখলেন: প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখানে। কোন চিন্তা করিও না, আমি তোমার ভার নেব। বৃথা রক্তপাত এড়িয়ে আত্মসমর্পণ কর। আমার পত্রবাহক মারফত জবাব দিবে আশা করি। ইতি, তোমার নাগরা। সকাল ৯-১৫ মিনিটে জেনারেল নাগরার চিঠি নিয়ে মিত্র বাহিনীর একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেন এবং কয়েক জন জোয়ান একটি জীপে সাদা পতাকা উড়িয়ে মি- রপুর পুল পার হয়ে পাক-বাহিনীর ২৬তম ব্রিগেডিয়ার কমাণ্ডার মেজর জেনারেল জামশেদের সঙ্গে দেখা করলেন। মিরপুর পুলের উপর অপেক্ষারত নাগরা, সত্ত সিংহ, কল ও বাঘা সিদ্দিকী প্রহর গুণছেন। পাক-বাহিনী ভারতীয় অফিসারদের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না তার কারণ ওদের সে ঐতিহ্য আছে। ৯ই ডিসেম্বর তারিখে জামালপুরে বিগ্রেড়িয়র কল দূত পাঠিয়েছিলেন জামালপুরের পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে। জবাবে কর্নেল সুলতান চিঠির মধ্যে একটা বুলেট ভর্তি করে জবাব দিয়েছিল। জেনারেল জামশেদ নিয়াজীর আত্মসমর্পণের সম্মতিপত্র নিয়ে মিরপুর পুলের দিকে রওনা হলেন। মিত্রবাহিনীর পত্রবাহক অফিসাররা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঝড়ের বেগে ফিরে আসতে লাগলেন, কিন্তু পথে কখন যে হাফ সাদা পতাকাটি বাতাসে উড়ে গিয়েছে, তা টের পাননি। ঝড়ের গতিসম্পন্ন গাড়ীটিকে দুশমনের গাড়ী মনে করে মুক্তিবাহিনীর জওয়ানরা এমব্যুশ থেকে গুলী চালায়। জীপের গতি থেমে গেল। কিন্তু সে কয়েক মুহূর্ত। তারপর জীপটি এগিয়ে চলল। জীপের মধ্যে মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেনের মৃতদেহ। গাড়ীর চালক মেজর বুঝতে পারলেন সাদা পতাকাটি পড়ে যাওয়ায় ভুল বুঝাবুঝির জন্য এই বিষাদময় ঘটনাটা সংঘটিত হলো। এত আনন্দের মধ্যেও সমগ্র মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেজর জেনারেল জামশেদ জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণের পত্র নিয়ে মিত্র বাহিনীর অধিনায়কদের সামনে হাজির হলেন। জেনারেল নাগরা চিঠি পেয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রওয়ানা হওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন। জেনারেল জামশেদের গাড়ীতে উঠলেন জেনারেল নাগরা, ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিংহ ক্লিয়ার ও কাদের সিদ্দিকী। মিরপুর সড়ক থেকে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত রাস্তায় দুশমনের সৈন্য পাহারায় মোতায়েন। তার মধ্যদিয়ে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর চারজন সমরনায়ক চলেছেন শত্রু শিবিরে। সঙ্গে আর কোন সৈন্য নেই। বিপদে পড়লে অচিরে সাহায্য পাওয়ার আশা নেই। তবুও তাঁরা চলেছেন অকুতোভয়ে। প্রায় ১০. ৩০ মিনিটের সময় তাঁরা নিয়াজীর অফিস কক্ষে প্রবেশ করলে মিনিট দশেক পরে নিয়াজী এলেন। সামরিক কায়দায় মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর অধিনায়কদের অভিবাদন করে আসন গ্রহণ করলেন। এরপর শুরু হলো আত্মসমর্পণের প্রাথমিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি হলো সুপ্রতিষ্ঠিত। আর এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করলেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় শিষ্য তরুণ সমরনায়ক কাদের সিদ্দিকী (পূর্বদেশঃ ১৬. ১২.৭২)।

১৬ ডিসেম্বর লন্ডনের সান্ধ্য-দৈনিক “দি ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড”-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী আজ পূর্ব বংগে আত্মসমর্পণ করছে। জেনারেল নিয়াজীর পক্ষে প্রাণহানির সম্ভাবনা দূরে হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা এবং এক শ’ লক্ষ বাস্তুত্যাগির স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য ভারতের যুদ্ধ প্রচেষ্টা অনেকেই সমর্থন করবে। সবকিছু বিবেচনা করে বলা চলে, দুনিয়ার ইতিহাসে অযোগ্য নেতাদের মধ্যে অন্যতম বিবেচিত ইয়াহিয়া খান মিসেস গান্ধীকে অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য করে। (“দি ইভনিং স্টান্ডার্ড”, ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)। ঢাকা থেকে মিস ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদে বলা হয়, আত্মসমর্পণের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র ১০ মিনিট আগে পূর্ব বংগে নিয়োজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় নির্দেশ মেনে নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটের সময় জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ অফিসার জন কেলী পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল ফরমান আলী কর্তৃক আত্মসমর্পণের সংবাদ জাতি সংঘের নিজস্ব বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়। (“দি ডেইলি টেলিগ্রাম”, ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)। ঢাকা থেকে এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদে বলা হয়, ঢাকা র রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত এক সামরিক অনুষ্ঠানে পূর্ব বংগে নিয়োজিত পাকিস্তানী বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজী পূর্বাঞ্চলে নিয়োজিত ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিকট ৪টা ৩১ মিনিটের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের শর্ত সম্বলিত দলিলে দস্তখত করার সময় নিয়াজীর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়। (“দি ডেইলি টেলিগ্রাম”, ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)। উপরোক্ত অনুষ্ঠান পূর্ব বংগে ২৪ বছর যাবৎ পাকিস্তানী শাসনের অবসান সূচনা করে। ইয়াহিয়া খান কর্তৃক প্রদত্ত বেতার ভাষণে পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক আত্মসমর্পণের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। সে শুধু পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয় হয়েছে বলে উল্লেখ করে। এই পদ্ধতি তাদের “অনিষ্টকারী ও নির্মম” প্রতিবেশী কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বংগে আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের সে “ইসলামের সৈনিক” বলে অভিহিত করে: পূর্ব বংগে পরাজিত হওয়ার ফলে যুদ্ধ শেষ হয়নি। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তারা জয়ী হবে। শত্রুকে তাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান ক্ষান্ত হবে না। পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্যদানের জন্য চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সে কৃতজ্ঞতা জানায়। (“দি টাইমস্”, ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)
পাকিস্তান সৈন্য বাহিনীর আত্মসমর্পণ সম্পর্কে ১৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রদত্ত ভাষণে মিসেস গান্ধী বলেন, পাকিস্তান বাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী। নতুন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দেশের জনগণের মধ্যে ন্যায্য আসন গ্রহন করে বাংলাদেশকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন বলে মিসেস গান্ধী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন সফল করার জন্য সুযোগ উপস্থিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের শুভেচ্ছা থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। এই বিজয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিজয় নয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যেসব জাতি শ্রদ্ধাশীল তারা এই বিজয়কে মানব স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য পথনির্দেশ বলে গন্য করবে। (“দি টাইসম”, ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)। দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, পূর্ব বংগে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিপর্যয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও কূটনৈতিক বিপর্যয় বলে গণ্য হওয়া উচিত। শেষ মুহূর্তে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে নিরস্ত করার উদ্দেশ্যে “হোয়াইট হাউস” (অর্থ্যাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট) কর্তৃক মস্কোর প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ এবং বঙ্গোপসাগরের দিকে মার্কিন নৌ-বহর পাঠিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখে আমেরিকার মর্যাদা রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়।
এই নিবন্ধে আরো বলা হয়, উপমহাদেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমেরিকাকে বহুলাংশে দায়ী করা চলে। পূর্ব বংগে সংগঠিত পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতন সম্পর্কে মৌনভাব অবলম্বন করে এবং পাকিস্তানকে ২৫শে মার্চের পরেও সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যদান অব্যাহত রেখে নিক্সন প্রশাসন ভারতকে রাশিয়ার দিকে ঠেলে দেয়। পূর্ব বংগ সমস্যার বাস্তব পরিস্থিতি- ভিত্তিক রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে ভারতের উপর সোভিয়েত প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব ছিল। মার্কিন এ সম্বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। ইসলামাবাদে সামরিক চক্রটির থাকার সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সামরিক এক নায়কতন্ত্র একগুঁয়ের মত সমর্থনদান করে প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধির সহায়ক হন। (“দি নিউ ইয়র্কটাইমস্”, ১৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)
জয় বাংলা’ সাপ্তাহিকীর ৫-কলাম ব্যাপী ৩৬ পয়েন্টে লাল অক্ষরের সংবাদ শিরোনাম ছিলঃ ঢাকা আমাদের।। মহানগরীর সরকারী বেসরকারী ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকাঃ বঙ্গবন্ধু দীর্ঘজীবি হোন ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। অগ্রসরমান মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় জওয়ানদের সম্মিলিত অভিযানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নগরী মুক্ত এবং সকল সরকারী বেসরকারী ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন হয়েছে। জয় বাংলা’। মুজিবনগর থেকে শীঘ্রই স্বাধীন বাংলার প্রশাসনিক সদর দফতর ঢাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

– এদিন মুজিবনগর থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের জনগণের ও সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকার, মিত্রবাহিনী, মুক্তিবাহিনীর গৌরবজনক ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্বাধীন বাংলার সংবাদে আরো বলা হয়, যুদ্ধবন্দীদের সাথে জেনেভা চুক্তি মোতাবেক আচরণ করা হবে। যদিও বাংলাদেশ জেনেভা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। সর্বত্র শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানান হয়।

– এ দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি জনাব জুলফিকার আলি ভুট্টো নাটকীয়ভাবে সবক’টি খসড়া প্রস্তাব ছিড়ে ফেলে সদলবলে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বেরিয়ে যান। পূর্বে তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, এটাই বোধ হয় আমার শেষ বক্তৃতা। আমরা আত্মসমর্পন মেনে নিতে আসিনি।
ইউপিআই- এর সংবাদে আরো বলা হয়, জাতিসংঘকে জালিয়াতি ও ধোকার পীঠস্থান’ আখ্যা দিয়ে মিঃ ভুট্টো বলেন, আমার দেশ এবং দেশের জনগন যখন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে, জাতিসংঘ তখন কথার ফুলঝারি ছুটিয়ে চলেছে।

পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা থেকে এ সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠক ডিসেম্বর ৪ তারিখে ডাকা হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েট ইউনিয়ন ও চীনের ভূমিকা সম্বন্ধে কিছু মন্তব্য রেখে মিঃ ভুট্টোর শেষ কথা: চললাম যুদ্ধ করতে। এদিন রাত ২টা পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশেন মূলতবি রাখা হয়। (আঃ বাঃ পঃ) উল্লেখ্য নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ বুশ (পরে প্রেসিডেন্ট) অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা, ভারত-পাকিস্তানের সৈন্য স্ব-স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের উপর সোভিয়েটের নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধি মিঃ জ্যাকব মালিকড তিনবার ভেটো (গর্ণম) প্রয়োগ করে, ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়। মুক্তিবাহিনী-মিত্রবাহিনীর-যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী পূর্বাঞ্চলীর বাহিনীর আত্মসমপর্নের মাধ্যমে । উল্লেখ্য ৬ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকার প্রথম স্বীকৃতিদানের প্রেক্ষিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতীর উদ্দেশে ভাষণে অনুরূপ বক্তব্য রাখেন।

#লেখক পরিচিতি: লেখক রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর ‘৭১ এর দশমাস’ গ্রন্থের স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যূদয় ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১’ অধ্যায়টি সংক্ষেপে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাস্থ্য ও শরণার্থীবিষয়কমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানের বিশেষ সহকারী। পরবর্তীকালে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের ভেতর রয়েছে- ‘৭১-এর দশ মাস’, ‘ছয় দফা থেকে বাংলাদেশ’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র’। বাংলাদেশ সরকারের (স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়) জনসংযোগ অফিসার হিসাবে সরকারি চাকরিতেযোগদান করেছিলেন ত্রিবেদী। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন সদস্য। প্রাক্তন উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর। তিনি
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ছিলেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ ভারতের মালদায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস : তালমা, ফরিদপুর। তিনি ফরিদপুরের জেলা স্কুল (১৯৫৭-১), রাজেন্দ্র কলেজ (১৯৬২-৬৬),ফরিদপুর-এ অধ্যয়ন শেষে স্নাতক (বিজ্ঞান), স্নাতকোত্তর ডিএইচই (মাদ্রাজ) পাশ করেন।ছিলেন সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষিত। শিক্ষকতা ও সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিক (৬৭-৭০) সংগঠক, যুক্তিবাদী বক্তা ও গবেষক। স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয়
সংগঠক। ১৭ এপ্রিল ‘৭১ তারিখ মুজিবনগরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়) জনসংযোগ অফিসার হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন সদস্য। প্রাক্তন উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর। : ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা (১৯৬৯), প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি; জেলা সমিতির আজীবন সদস্য, বিসিএস: তথ্য সাধারণ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। তিনি একপুত্র সন্তানের জনক।ফরিদপুরের নগরকান্দায় গ্রামের বাড়িতে ২০১৯ সালে ২ মার্চ ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

ShareTweetShare
Previous Post

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন/ শেষ পর্যন্ত ইসিতে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২৭৫ জন

Next Post

বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ

Related Posts

কোরবানি ঈদের সর্বশেষ ব‍্যস্ততা চলছে
লীড

কোরবানি ঈদের সর্বশেষ ব‍্যস্ততা চলছে

৫ আগস্টের মধ‍্যে হবে জুলাই যাদুঘর: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
লীড

৫ আগস্টের মধ‍্যে হবে জুলাই যাদুঘর: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

স্থল নিম্নচাপ ঘুরছে মধ‍্যাঞ্চল থেকে উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে
লীড

স্থল নিম্নচাপ ঘুরছে মধ‍্যাঞ্চল থেকে উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে

দিশেহারা বিবিএ পাস অটোরিকশা চালক আমির,  চুরি হওয়া গাড়িটি উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আকুতি
চট্টগ্রাম

দিশেহারা বিবিএ পাস অটোরিকশা চালক আমির, চুরি হওয়া গাড়িটি উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আকুতি

মে মাস থেকে বৃষ্টি, দেশে আগাম বর্ষার সাথে সাগরে লঘুচাপ
লীড

গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার উপকূল অতিক্রম করছে

মে মাস থেকে বৃষ্টি, দেশে আগাম বর্ষার সাথে সাগরে লঘুচাপ
প্রকৃতি-পরিবেশ

মে মাস থেকে বৃষ্টি, দেশে আগাম বর্ষার সাথে সাগরে লঘুচাপ

Next Post
বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ

বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 ১২৩৪৫
৭৮৯১০১১১১৩
৪১৫১৬১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৯৩০  

সম্পাদক ও প্রকাশক :

সম্পাদকীয় কার্যালয় :

৪০ মোমিন রোড, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম

মোবাইল : 
ইমেল:

Copyright © 2018: portcitylink II Design By : F.A.CREATIVE FIRM

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন