চট্টগ্রাম, ৬ জানুয়ারি, ২০২৪:
আগামীকাল ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।
এবারের নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্গম ২ হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের আগের দিন আজ শনিবার ব্যালট পেপার পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া ভোটের দিন সকালে ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। ব্যালট পেপার পরিবহন ও বিতরণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সকাল আটটার আগেই সমাপ্ত হয়েছে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সকল প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতা এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোটগ্রহণ করবেন। আরো ১ লাখ স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। আমাদের ৯ লাখ জনবল প্রস্তুত আছে। আর আনসার-ভিডিপি, র্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও জাজেস মাঠে আছেন। পাশাপাশি বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি ৩০০ আসনের তপশিল ঘোষণা করেন। পরে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়। ভোট হবে ২৯৯ আসনে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে তাগিদ দেওয়া হলেও তা মানেনি আওয়ামী লীগ সরকার। যে কারণে বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আজ ও আগামীকাল তারা সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস যেমন দেখা যাচ্ছে পাশাপাশি উদ্বেগ-উত্কণ্ঠারও কমতি নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই নির্বাচনি সহিংসতায় কমপক্ষে পাঁচ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা যাবে।
৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এদিকে
নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন আনসার সদস্য। বাকিদের মধ্যে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। ইতিমধ্যেই গত ৩ জানুয়ারি থেকে ভোটের মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট আট দিন মাঠে থাকবেন তারা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরাও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
তবে এককভাবে আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে পাঁচ লক্ষাধিক আনসার ভিডিপি সদস্য দুই স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
তম্মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের পাঁচ জেলায় তিন হাজার একশত সত্তর ভোটকেন্দ্রে আটত্রিশ হাজার চল্লিশজন আনসার দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ প্রতি কেন্দ্রে তাদের ১২ জন সদস্য-পিসি, এপিসি ২ জন অস্ত্র সহ, ৬ জন পুরুষ, ৪ জনমহিলা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বিতীয় ধাপে আট হাজার পাঁচশ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য ২৫০ প্লাটুন এবং ১০০০ সেকশনে বিভক্ত হ য়ে স্টাইকিংরিজার্ভ ফোর্স হিসাবে ১৩ দিন ধরে নিয়োজিত থাকবে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে তারা মাঠেই আছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম রেঞ্জে পাঁচ জেলায় ২১ প্লাটুন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৮৪ সেকশনে মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আজ সকালে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ রাসেল এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো বলেন, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বদ্ধপরিকর। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
Discussion about this post