চট্টগ্রাম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪:
পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সাথে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বৈঠকের পর ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদেও বিভিন্ন দাবি পূরণের জন্য এই ধর্মঘট আহ্বান করেছিল তারা। যে আন্দোলন মূলত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চুয়েটের(চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) দুই ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার পর থেকে সূত্রপাত।
এদিকে আজ ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, সড়কে কোন ধরনের চাঁদাবাজি চলবে না। যত্রতত্র গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানো যাবে না। যে বা যারা সড়কে চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে পরিবহণ নেতৃবৃন্দ আপাতত ধর্মঘট স্থগিত করেন।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক কল্যাণের জন্য আপনারা যে চাঁদা নেন, সেটি আপনারা আপনাদের অফিসেই নেন। যদি গাড়ি থামিয়ে কোন চাঁদাবাজি করা হয় তা কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
ইতিমধ্যে র্যাব এ নিয়ে অভিযান শুরু করেছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আপনাদের যদি চাঁদাবাজির বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবো। যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করা যাবে না। যদি এমন কেউ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশেনে যাবো।
এ সময় জেলা প্রশাসক চুয়েটের ভিসিকে অনুরোধ করে বলেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের যে দাবি আমরা প্রায় সবগুলো দাবি মেনে নিয়েছি। বাকি দাবিগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট। সে দাবিগুলোর যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন কওে সেজন্য অনুরোধ করছি।
গাড়ি ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, হামলায় গাড়িগুলো কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি বিআরটিএ দেখবে। এরপর আমরা সেটির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবো। ক্ষতিপূরণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব। যাতে আপনাদের তিন গাড়ির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে।
সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন,
সড়কের মধ্যে দাড়িয়ে যে চাদাঁবাজি করা হচ্ছে সেটি আমরা বন্ধ করুন। না হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। নোবেল চাকমা। সড়কে যত্রযত্র গাড়ি থামানো যাবে না।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, কাপ্তাই সড়কে গাড়ি চললে চট্টগ্রামের সব সড়কে গাড়ি চলবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনা। আমরা সবমসময় সরকারকে সহযোগিতা করেছি। আমরা গাড়ি চালাবো। আপাতত আমাদের দাবিগুলো আপনি পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন আমরা আপনার আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সভায় বিভিন্ন গণ পরিবহণের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আজ সারাদিন চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহন সঙ্কটে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয় জনসাধারণ। সকাল থেকে সড়কে কোনো যানবাহন ছিল না চাকরিজীবীদেও কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য। দুই, একটা গাড়ি আসলেও তাতে যাত্রীদের বিপদজনক হুড়োহুড়ি ছিল। ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ গাড়িতে উঠতে পারলেও অধিকাংশ যাত্রী সিএনজি অটো রিকশা ও প্যাড়েল চালিত রিকশায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়। ভোগান্তির পাশাপাশি জনসাধারণকে চারপাঁচগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।
Discussion about this post