Portcity Link
আজ: মঙ্গলবার
৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন
No Result
View All Result
Portcity Link
No Result
View All Result
Home যুক্তিতর্ক

কাজী নজরুল ইসলামের কয়লাকুঠির দেশ

#শৈলজানন্দ মুখোপাধ‍্যায়

কাজী নজরুল ইসলামের কয়লাকুঠির দেশ
0
SHARES
36
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

আমিই ছিলাম কাজী নজরুল ইসলামের বাল্যবন্ধু। একই দেশে বাড়ী। একই সঙ্গে পড়েছি। একই দিনে কলকাতায় এসেছি। মাঝখানে মাত্র কিছুদিনের ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। উনপঞ্চাশ নম্বর, বাঙ্গালী পল্টনে নাম লিখিয়েছিলাম দুজনে একসঙ্গে। আমার এক বিত্তবান পরমাত্মীয়ের চক্রান্তে আমি ‘আনফিট্’ হলাম, নজরুল চলে গেল প্রথমে নৌসেরায়, তারপর করাচীতে। সেখান থেকে লেখা তার অনেকগুলি চিঠিপত্র ছিল আমার কাছে। তখন তো বুঝিনি নজরুল এত বড় হবে, তাই সে-সব চিঠি আমি যত্ন করে রাখিনি, হারিয়ে ফেলেছি।

আমরা লিখতে আরম্ভ করেছিলাম ইস্কুলে পড়বার সময়ে। নজরুল লিখত গল্প, আমি লিখতাম কবিতা। একদিন সে হঠাৎ একটি কবিতা লিখে বসলো। আমি তার কবিতা পড়ে তো অবাক! বললাম, তুমি আর গল্প লিখো না। তাই-না শুনে নজরুল কবিতা লিখতে লাগলো।

তার চুরুলিয়া গ্রামের বাড়ীর সামনে প্রকাণ্ড একটা মাটির ঢিপি আছে অনেকদিনের পুরনো। গ্রামের বুড়ো-বুড়ীরাও বলে, তারা নাকি জন্মাবধি ওই ঢিপিটা ঠিক অমনিই দেখেছে। এই নিয়ে কত কিংবদন্তি মানুষের মুখে মুখে ফেরে, কত লোক কত গল্প বলে। কেউ বলে, এ জায়গাটার নাম ছিল আলিপুর। এখানে নরোত্তম নামে ছিল এক হিন্দু রাজা। বর্গীরা এসে আক্রমণ করেছিল সেই রাজার প্রাসাদ। আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল রাত্রির অন্ধকারে। পুড়ে মরেছিল সবাই। সোনার নগরী ছাই হয়ে গিয়েছিল দেখতে দেখতে। তারপর সেটা পরিণত হয়েছিল পাহাড়ের মত একটা মাটির ঢিপিতে।
সেই মাটির ঢিপিটাকে নিয়েই নজরুল রচনা করেছিল তার প্রথম কবিতা। একটি কবিতার নাম দিয়েছিল-‘রাজার গড়’ আর একটির নাম দিয়েছিল-‘রাণীর গড়’।

এই কবিতা দু’টি আমাকে সে পড়তে দিয়েছিল।

ইস্কুলের ছেলে গল্প লিখছে, কবিতা লিখছে, গান গাইছে, গল্প- উপন্যাস পড়ছে-আমাদের কাছে সে-সব ছিল অমার্জনীয় অপরাধ। কাজেই আমাদের লিখতে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে। পাঠক ছিলাম আমরা দু’জন দু’জনের। নজরুল তার লেখা পড়তে দিত আমাকে, আমি দিতাম তাকে।

নজরুলের প্রথম লেখা সে কবিতা দু’টি আমি রেখে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম-কলকাতায় কোনও পত্রিকার আপিসে পাঠিয়ে দেবো ছাপবার জন্যে, পত্রিকা বলতে আমরা তখন চিনতাম মাত্র দু’টি পত্রিকা-একটি ‘বঙ্গবাসী’ আর একটি ‘হিতবাদী’।

খবরের কাগজের মত মস্ত বড় একখানি কাগজে ছাপা সাপ্তাহিক পত্রিকা। শহরে লাইব্রেরী একটি ছিল, সেখানে একখানি মাসিক পত্রিকা দেখেছিলাম তার ঠিকানাও লিখে এনেছিলাম। কিন্তু পাঠাতে ভরসা হয়নি। নিয়মাবলীতে লেখা ছিল-লেখার কপি রেখে পাঠাতে হয়। কপি করবার সময়ও পাইনি।

আসানসোল থেকে একটি কাগজ বেরুতো। নাম ছিল ‘রত্নাকর’ আদালতের নীলাম ইস্তাহার ছাপা হতো। একদিন রাণীগঞ্জ থেকে আসানসোল গেলাম ট্রেনে চড়ে ইস্কুল থেকে পালিয়ে। সম্পাদকের ভাগনের সঙ্গে পরিচয় ছিল। সেই বলেছিল মামীকে বলে আমি ঠিক ছাপিয়ে দেবো। মামী বললে, আহা অতদূর থেকে এসেছে, রতুব বন্ধু, দাও না ছেপে। মামার সেই এক কথা! ও-সব ছাই-ভস্ম আমরা ছাপি না। শেষে মামা রাজী হলো। বললে-ভালো বিপদে পড়লাম দেখছি! আচ্ছা তা’হলে এক কাজ কর। ভাল দেখে চার-পাঁচটা লাইনেব একটা ‘ষ্টান্‌ন্জা’ (Stanza) দিয়ে যাও। আসছে মাসে দেবো ছেপে।

সেখানে দিতে ইচ্ছে করেনি। ফিরে এসেছিলাম। কবিতার সেই ক’টি পাতা কেমন করে না জানি আজও আমার কাছে রয়ে গেছে। নজরুলের নিজের হাতের লেখা। নীচে তারিখ পর্যন্ত দেওয়া আছে-১২-৪-১৭। অর্থাৎ ১৯১৭ সালের বারোই এপ্রিল। এখন থেকে ঊনপঞ্চাশ বছর আগের লেখা নজরুলের অপ্রকাশিত কবিতা। নজরুলের বয়স তখন বোধ করি আঠারো পেরিয়েছে। আর আমি তখন ষোলো পেরিয়ে সতেরোয় পা দিয়েছি।

কবিতাটি এই রকম:

রাজার গড়

ঐ-গাঁয়ের দখিনে দাঁডায়ে কে তুমি
যুগ যুগ ধরি একা গো
তোমার বুকে ও কিসের মলিন রেখা গো?

এ কোন্ দেশের ভগ্নাবশেষ
কোন্ দিদিমার কাহিনীর এ দেশ?

দূর অতীতের আবছায়াটুকু রেখেছো পাষাণে ঢাকা গো।
কোন্ চিতোরের চিতার ভস্ম তোমার উরসে মাখা গো।

ওগো কে তুমি আমার পল্লী-মায়ের দুখের কাহিনী কহিছ?
নীরব নিঝুম গভীর ব্যথাটি গাহিছ?

মা নাকি ছিল রাজাব দুলালী
আজ অনাথিনী পথের কাঙ্গালী
মরমের ব্যথা মবমে চাপিয়া ঝাঁও হয়ে পুড়ে গিয়েছে-
নীরব কবির নীবব ভাষায় পেলব গাথাটি গাহিছ।

কভু তোমার বক্ষ জুডিয়া শোভিত
নবোত্তম বাজ-কেয়ারী,
মাঝে নাকি ছিল প্রাসাদ হাজাব দুয়ারী। আঁকডের ঝোঁপ এখন সেথায়
ঘিরেছে বোয়ান অলক্ লতায়
সকাল সাঁঝে খেলতো যেথায় সুগন্ধ ফুল কেয়ারী
হাতে হাত ধবে আসতো সেথায়-আসতো রাজার ঝিয়ারী

ঐ-তোমার শিয়রে এখনও জাগিয়া
বিশাল শিমুল গাছটি ওগো সব গেছে, সে শুধু ছাড়েনি কাছটি।

এখনও নিশীথে কে তব শাখায়

আকুল কাঁদনে গ্রামটি কাঁপায়,

স্বপনের ঘোরে আতকে ওঠেগো মায়ের কোলে বাছাটি
কেউ জানে না যে কত যুগ ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে গাছটি।

কাজী নজরুল ইসলাম আর আমি। আমরা যে জায়গায় জন্মেছি, বাল্যাবধি যেখানে মানুষ হয়েছি, সেটা কয়লাকুঠির দেশ। চারিদিকে ঢেউ-খেলানো কাঁকর-পাথরের ডাঙ্গা আর ধানের ক্ষেত। তারই মানে মাঝে কয়লার কুঠি, আর স্নিগ্ধ শ‍্যামল গাছপালায় ঘেরা ছোট ছোট গ্রাম। নজরুলের জন্মভূমি চুরুলিয়া গ্রামের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে অজয় নদী। নদী বলতে যে-ছবি আমাদের চোখের ওপর ভেসে ওঠে এ-নদী কিন্তু সে-নদী নয়। সারা বছর নদীতে জল থাকে না। খর বৈশাখের সূর্য্যের তাপে তেতে-ওঠা বালি শুধু মরুভূমির মত ধূ-ধূ করে, হাওয়ায় ওড়ে সাদা কাশের ফল, আর দূরে হয়ত কোন্ ঘুঘু-ডাকা প্রান্তরেব পারে ছোট্ট একটি মাটির ঘরেব ভেতর বসে বসে সুর করে মহাভারত পড়ে, রামায়ণ পড়ে দরিদ্র এক মুসলমানের ছেলে দুধু মিঞা, আর হিন্দুর মেয়েরা হাত জোড় করে শোনে সেই মহাকাব্যের অবিস্মরণীয় কীর্তিকাহিনী।

বর্ষায় কিন্তু এই নদীর রূপ হয় প্রলয়ঙ্করী। পশ্চিম থেকে গিরিমাটির ঢল নামে। দু-কূল ভাসিয়ে বয়ে যায় কদম খণ্ডীর ঘাটের দিকে-পঞ্চপাণ্ডবের অজ্ঞাত বাসকালে প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি শিবমন্দিরের পাশ দিয়ে মহাকবি জয়দেবের পুণ্যতীর্থ কেন্দুবিল্বে।

গৈরিকবসনা ভৈরবীর দেশ। মনে হয় যেন বীরভূম আর বর্ধমানের এই সঙ্গমতীর্থে অজয়ের তীরভূমির মৃত্তিকা স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছে এক পিঙ্গলকেশা পিঙ্গলনেত্রা রুদ্রাণী ভৈরবী। গলায় তার রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ত্রিশূল!

একদিকে মৃত্তিকার ওই রুদ্রাণী রূপ, আর একদিকে আকাশে বাতাসে প্রেমিক কবি জয়দেবের গীত-গোবিন্দের ‘দেহি পদপল্লব- মুদারসে’র সুর।
এইখান থেকে এসেছে কবি নজরুল।

আমাদের ছেলেবেলার কথা কিছু বলি।

আমি পড়তাম রাণীগঞ্জ স্কুলে, আর নজরুল পড়তো শিয়াড়শোল স্কুলে। ইস্কুল দুটোর নামই শুধু আলাদা, কিন্তু দুটো ইস্কুলই খুব কাছাকাছি।

শিয়াড়শোল স্কুল শিয়াড়শোল রাজাদের স্কুল।
সেই রাজাদের অনুগ্রহে নজরুল ভর্তি হলো শিয়াড়শোল ইস্কুলে। ইস্কুলে মাইনে লাগবে না। বোর্ডিং-এ থাকবার এবং খাবার খরচও লাগবে না।
রাণীগঞ্জ থানার সামনে আমার মাতামহ রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চ্যাটার্জির রাজবাড়ীর মতন বিরাট বাড়ী। আমি থাকি সেই বাড়ীতে, আর নজরুলের থাকবাব ব্যবস্থা হলো শিয়াড়শোল স্কুলের ‘মোহমেডেন্ বোর্ডিং’-এ।  আমাদেরই বাড়ীর কাছে একটি পুকুরের ধারে ছোট্ট একটি বাড়ী। তারই একখানি ঘরে থাকে পাঁচজন মুসলমানের ছেলে। এই পাঁচটি ছেলের ভেতর একটি ছেলে হলো দুধু মিঞা। ভাল নাম-কাজী নজরুল ইসলাম।

একদিকের একটি জানলার পাশে ছোট একটি খাটিয়া। খাটিয়ার ওপর পরিষ্কার একটি বিছানা পাতা। দেখলেই চেনা যায়-অগোছালো কোন্ এক ছন্নছাড়া ছেলের আস্তানা।

এই ঘরে থাকতো আরও চারজন ছাত্র। কি তারা পড়তো, কোথায় তাদের বাড়ি কিছুই জানি না। তবে তাদের মধ্যে একজনের কথা আমার আজও বেশ মনে আছে! তার ভাল নাম আমার জানা নেই। ডাক-নাম ছিল ছিনু। প্রথম যেদিন তাকে দেখলাম-দেখলাম, ঝাঁটা হাতে নিয়ে সে ঘর ঝাট দিচ্ছে। সে আজ কতদিনের কথা, তবু আজও মনে আছে, তাব কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়তাম আমরা। সামান্য কথা কিন্তু বলবার ভঙ্গী তাব এমনিই রহস্যময় যে, না হেসে কেউ থাকতে পারতো না।
নজরুলকে সে খুব ভালবাসতো।

নজরুলের বিছানার চাদর কাচতো, জামায় কাপড়ে সাবান দিয়ে দিতো। বই-পত্তর গোছ-গাছ করে রাখতে।।

ইস্কুলের ছুটির পর’বইখাতা বাড়িতে রেখে কিছু খেয়েই ছুটতাম ওদের বোর্ডিং-হাউসে। আমাকে দেখলেই খেজুর পাতার একটা চাটাই নিয়ে ছিনু আসতো ছুটে। বলতো, দাঁড়াও, এইটে আগে পেতে দিই। তা’ পরে বসো।

এই বলে খাটিয়ার ওপর থেকে বই-টই সরিয়ে সেই চাটাইটা বিছিয়ে দিয়ে বলতো, নাও এইবার শোও, বোসো, যা খুশি তাই কর।

বিছানার চাদরটা ময়লা হলে তাকেই কাচতে হবে-তাই তার এই সতর্কতা।

ছিনু বলে বসলো-বিছানার ওপর তোমরা মই-মাড়ন্ কর আর আমি মরি তোমার চাদর কেচে।

নজরুল হো হো করে হাসতো। পবিত্র নির্মল হাসি! নিতান্ত সহজ সরল শিশুর মত নিষ্কলঙ্ক সে হাসি!

বিস্কুটওলা এসে দাঁড়াতো জানলার পাশে। মিশমিশে কালো গায়ের রং, গলায় শুভ্র যজ্ঞোপবীত। বাঁশের চুপড়িতে নানারকমের বিস্কুট পাউরুটি।

ছিনু বলতো, কি হে বাপু তুমি বামুন তো?

বিস্কুটওলা বলতো, হাঁ বাবু, আমার বাঁকুড়া জেলায় বাড়ি।

ছিনু বলতো, দেখো মিছে কথা বলে আমাদের জাত মেরে দিও না। দাও। ওই বাবুদের দাও, আমি ততক্ষণ চা আনি।

নজরুলের টাকা-পয়সা থাকতো তার বিছানার তলায়। টাকা- পয়সা বলতে শিয়াড়শোল রাজবাড়ি থেকে পাওয়া মাসিক বৃত্তির কয়েকটি টাকা। ইস্কুলে বেতন দিতে হতো না, বোর্ডিং-এর খরচ দিতে হতো না। কিন্তু সে টাকা আর কতক্ষণ! বিছানার তলাতেই থাকতো, সেইখান থেকেই খরচ হতে হতে একদিন ফুরিয়ে যেতো।

টাকার বেশির ভাগ নিতো এই বিস্কুটওলা। তারপর চলতো ধার। সে ধার শোধ করতাম হয় আমি, নয় ‘আমাদের আর-এক সহপাঠী বন্ধু শৈলেন ঘোষ। সে ছিল ক্রিশ্চান। বড় ভাল ছেলে। সে দিত।

একবার একটা ভারি মজা হয়েছিল। মাসের প্রথমেই রাজবাড়ী থেকে সাতটি টাকা নজরুল নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে। বোর্ডিং-এ এসে দেখে, তার ছোট ভাই আলি হোসেন এসেছে গ্রাম থেকে। সচ্ছল সংসার নয়। অনটন সব সময়। দারিদ্র্যের জ্বালা লেগেই আছে। দুঃখ কষ্টের কথা পাছে বেশি শুনতে হয় তাই তাড়াতাড়ি সাতটি টাকাই আলি হোসেনের হাতে দিয়ে নজরুল তাকে বিদেয় করে দিয়েছে।

গিয়ে দেখি, ছিনু কি যেন বলছে আর নজরুল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

যাবামাত্র নজরুল বললে, চল বেড়িয়ে আসি।

আমি আর বসলাম না। বললাম, চল।

ছিনু বললে, জানো মিঞা-সাহেব, দুখু মিঞার ছোট ভাইটার বিড়ি-সিগ্রেটের খরচই মাসে সাত টাকা।

ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি। ছিনু বুঝিয়ে দিলে।

বললে, ওই সাতটা টাকা ওর মায়ের হাতে দেবে কিনা ওর ভাইটা! বিড়ি-সিগ্রেট খেয়েই ফুঁকে দেবে।

হাসতে হাসতে নজরুল বললে, বিড়ি-সিগ্রেট ও খায় না।

ছিনু বললে, খায় ‘না-খাবে।

নজরুল বললে, আর তুই যে হুঁকো টানিস!

ইস্কুলের ছেলে-হুঁকো টানে! তাজ্জব ব্যাপার!

ছিনুকে জিজ্ঞাসা করলাম, সত্যি?

মুহূর্তে ছিনু যেন মিইয়ে গেল। কথাটা বলতে তার ভারি লজ্জা!

না মিঞা-সাহেব, মিছে কথা। আমি চা আনছি। বোস্। বলে সে পালিয়ে গেল।

নজরুলও যেন বাঁচলো সেই অপ্রীতিকর প্রসঙ্গ থেকে রেহাই পেয়ে।

মিঞা-সাহেব।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি, বিস্কুটওলা এসে দাঁড়িয়েছে। বললে, ঝালরুটি এনেছি। দেবো?
লঙ্কা নুন আর মরিচের গুড়ো দিয়ে শক্ত শক্ত এক রকম পাঁউরুটি তৈরি করে ওরা। তাকেই বলে, ঝালরুটি। আমিই তাকে আনতে বলেছিলাম একদিন।

বললাম, দাও।

কিন্তু তুমি আমাকে মিঞা-সাহেব বললে কেন হে?

ছিনু এলো একটি কলাইকরা থালার ওপর ডাঁটভাঙা কাপে চা নিয়ে। বিস্কুটওলাকে দেখেই বললে, তুমি বাপু আমাদের জাত মেরে দিয়েছ। কাল থেকে আর এ পথে এসো না।

বিস্কুটওলা হাসতে লাগলো।

ছিনু বললে, হাসি নয়। তুমি বামুন নও, আমি সব খবর নিয়েছি।

বিস্কুটওলা কথাটা গ্রাহ্যই করলে না। আনা-চারেকের ঝালরুটি দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি তার দাম মিটিয়ে দিলাম।

ছিনু বললে, তুমি বেহেস্তে যাবে মিঞা-সাহেব। খোদাকে আজ রাতেই আমি বলে দেবো।

-রাত্রে তোমার সঙ্গে বুঝি দেখা হবে খোদার?

ছিনু বললে, হ্যাঁ রোজ রাত্রে তামাক খেতে আসে।

ছিনুর এই সব তুচ্ছ সামান্য কথা শুনতাম আর হেসে হেসে পেটে খিল্ ধরে যেতো।

ছিনুকে বলেছিলাম, আমাকে মিঞা-সাহেব বোলো না ছিনু। আজ বিস্কুটওলা পর্যন্ত আমাকে মিঞা-সাহেব বলে ডেকে গেল।

ছিনু বললে, তোমার দাদামশাই-এব খেতাব রায়-সাহেব। সরকার দিয়েছে। আর তোমার খেতাব মিঞা-সাহেব। আমি দিলাম। আমি-এই ছিনু-সরকার। আজ রাত্রে খোদাকে বলে আমি ওটা মঞ্জুর করিয়ে নেবো।

নজরুল আর আমি। একদিন বিকালে বেড়াতে বেরিয়ে ছিলাম। ফিরতে গা-ঘোর সন্ধ্যে হয়ে গেল। দেখি, বোর্ডিং-এর পেছন দিকে আগাছার জঙ্গলের ভেতর লণ্ঠন নিয়ে কে যেন কি খুঁজছে।

আবদুল ছিল দোরের কাছে দাঁড়িয়ে। চাকরের কাজও করে। তাকেই জিজ্ঞাসা ওই দিকটায় কে গেল? ‘আবদুল রান্নাও করে।

আবদুল বললে, ছিনু মিঞা তার হুঁকো খুঁজছে।

-হুকো খুঁজছে?

আবদুল বলল, হ্যাঁ বাবু, তোমাদের ইস্কুলের পণ্ডিত এসেছিল তোরাব-সাহেবের কাছে। ছিনু মিঞা ওই জানলার কাছে বসে বসে তামাক খাচ্ছিল, দেখতে পায়নি। তার পর যেই পণ্ডিতকে দেখা, আর অমনি আগুন-সুদ্ধ হুঁকো-কলকে ওই জানলা গলিয়ে ফেলে দিয়েছে ওই দিকে।

-তাই বুঝি ?

আবদুল বললে, হ্যাঁ। ওদিকে ভাত চাপিয়েছি। এখনও লণ্ঠনটা আনলে না।

পরের দিন দেখলাম, ছিনুর হুঁকোটি জানলার ঠিক পাশেই নামানো। নারকেলের মালার এখানে-ওখানে সাদা চুন লাগানো হয়েছে। পাথরের ওপর পড়ে ফেটে গেছে হুঁকোটি।

ছিনু মিঞার সঙ্গে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে সেই কতদিন আগে।

রাণীগঞ্জে থাকতে থাকতেই হঠাৎ একদিন শুনলাম, ছিনু দেশে চলে গেছে। দেশে গিয়েছে ‘শাদি’ করবার জন্যে।

কিন্তু সেই যে গেল, সে’আর ফিরে এলো না।

তার স্মৃতিচিহ্নের মধ্যে ভাঙা চুনকামকরা সেই হুঁকোটি পড়ে রইলো বারান্দার এক কোণে।

এখন থেকে ছ’সাত বছর আগে, কি একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম আসানসোল। স্টেশনে ট্রেনটা গিয়ে পড়লো সন্ধ্যায়। চারি দিকে উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠেছে। দিনের মত পরিষ্কার। প্ল্যাটফর্ম ধরে এগিয়ে চলেছি, হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাকলে, শৈলবাবু।

এ-নাম ধরে কে ডাকলে? থমকে দাঁড়ালাম।

পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি, একটি লোক ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। শীর্ণকায় এক বৃদ্ধ মুসলমান। মুখে কাঁচা-পাকা কয়েক গাছা পাতলা দাড়ি-গোঁফ। মাথার চুল খুব ছোট কবে ছাঁটা। কাছে এসে সে আমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ।

-চিনতে পারছেন শৈলবাবু?

চেনবার মত কিছুই ছিল না সে-মুখে, তবু চিনতে দেরি হলো না।
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই বোধ করি এমন একটা সময় আসে, তখন যা-কিছু সে দেখে, শুধু চোখ দিয়ে দেখে না, মন দিয়ে দেখে, তাই মন তাকে আব ভুলতে পাবে না সারা জীবনেও। আর সে সময়টা মানুষের কৈশোর। তাই বোধ হয় আমরা ইস্কুলের সহপাঠীদের কোনদিন ভুলতে পারি না। কিন্তু কলেজের বন্ধুদের ভুলে যাই।

বললাম, চিনেছি। তুমি ছিনু।
ষ্টেশনের বাইরে গিয়ে তোমার সঙ্গে দুটো কথা বলি। কতদিন পরে দেখা হলো বল তো?

ছিনু তার বোঁচকাটি তুলে নিয়ে ধীরে ধীবে আমার পাশে পাশে চলতে লাগলো। বললে, বেঁচে থাকলে দেখা হয় তা’হলে? আমি আপনাকে দেখেই চিনতে পেরেছি।

বললাম, ও কি ছিনু, তুমি আমাকে ‘আপনি বলছো কেন?

ছিনু বললে, বলবো না?

-কেন বলবে? কখনও বলেছ?

ছিনু এতক্ষণ পরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচলো। বললে, ভয়ে ভয়ে বলছিলাম মিঞা-সায়েব। দুধু মিঞা কেমন আছে ভাই?

তার কি হয়েছে তুমি জানো?

ছিনু বললে, শুনেছি সে নাকি পাগল হয়ে গেছে। যেদিন শুনেছিলাম সেদিন লুকিয়ে কি কান্নাই-না কেঁদেছি। আচ্ছা ভাই এখন কি করে সে? তোমাকে চিনতে পারে?
বললাম, না। চিনতে পারে না। কাউকে নয়।

ShareTweetShare
Previous Post

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অক্টোবরে

Next Post

ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাই কাজ করেছেন: প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী

Related Posts

বাংলাদেশে স্টার লিঙ্কের ব‍্যবসায়িক যাত্রা শুরু
বিজ্ঞানপ্রযুক্তি

বাংলাদেশে স্টার লিঙ্কের ব‍্যবসায়িক যাত্রা শুরু

এনসিটি ঝড় ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে
চট্টগ্রাম বন্দর

এনসিটি ঝড় ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সামরিক গুরুত্ব অপরিসীম: ফরহাদ মজহার
চট্টগ্রাম

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সামরিক গুরুত্ব অপরিসীম: ফরহাদ মজহার

হালদা নদীতে কার্পের ডিম সংগ্রহকারীর শিরনি দান
চট্টগ্রাম

হালদা নদীতে কার্পের ডিম সংগ্রহকারীর শিরনি দান

চট্টগ্রামে ৪টি নতুন হাসপাতালের উদ‍্যোগ প্রধান উপদেষ্টার
লীড

চট্টগ্রামে ৪টি নতুন হাসপাতালের উদ‍্যোগ প্রধান উপদেষ্টার

বক্সিরহাট রোডে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের শৈশব
চট্টগ্রাম বন্দর

দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আশার আলো: অধ্যাপক ইউনূস

Next Post
ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাই কাজ করেছেন: প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী

ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাই কাজ করেছেন: প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী

Discussion about this post

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 ১২
৩৪৫৭৮৯
১০১১১১৩৪১৫১৬
১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৯৩০
৩১  

সম্পাদক ও প্রকাশক :

সম্পাদকীয় কার্যালয় :

৪০ মোমিন রোড, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম

মোবাইল : 
ইমেল:

Copyright © 2018: portcitylink II Design By : F.A.CREATIVE FIRM

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাদেশ
    • নগর-মহানগর
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • আন্তর্জাতিক
  • প্রেস রিলিজ
  • বিনোদন
  • শিল্প-সাহিত্য
  • আইন ও বিচার
  • চট্টগ্রাম
    • চট্টগ্রাম বন্দর
  • অন্যান্য
    • শিল্প ও বাণিজ্য
      • শেয়ারবাজার
    • শিক্ষা
    • ধর্ম
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • বিজ্ঞানপ্রযুক্তি
    • প্রকৃতি-পরিবেশ
    • যুক্তিতর্ক
    • এন্টি জার্নালিজম
    • বিদেশী গণমাধ্যম
    • তারুণ্য
    • নারী
    • চা-বিস্কুট/আড্ডা
    • ঢাকায় থাকি
    • পথেপথে
    • প্রবাসী
    • ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়া
    • বই থেকে
    • ব্যক্তিত্ব
    • ভ্রমণ-পর্যটন
    • মনপ্রাণ
    • সম্প্রীতি
    • সাজসজ্জা
    • স্বপ্ন ও উদ্ভাবন