চট্টগ্রাম, ২২ এপ্রিল, ২০২৫:
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনালর নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আজ। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের চুক্তির আওতায় প্যাকেজ এক কার্যক্রমে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনালের নির্মাণের পাশাপাশি ভবন, পেভমেন্ট, রিটেইনিং ওয়াল, সি ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, ড্রেজিং, ল্যান্ড রিক্লেমেশন, জরুরি জেনারেটর, সৌর বিদ্যুৎ, টার্মিনাল ইউটিলিটি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ত/বৈদ্যুতিক কাজ নির্মাণ/সংগ্রহ/স্থাপন, টার্মিনাল এরিয়াতে কনটেইনার রাখার জন্য মোট পাঁচ হাজার ১শ’টি গ্রাউন্ড স্লট নির্াণ কার্ক্রমও থাকবে।
আজ ২২ এপ্রিল সকালে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান এবং পেন্টা ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার তোমোকাজু হাসেগাবার মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এটি কেবল একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে বড় জাহাজের ধারণক্ষমতা বাড়বে (প্রায় এক লাখ ডিডব্লিউটি পর্যন্ত), বিদ্যমান বন্দরগুলোতে যানজট কমবে, সরবরাহ শৃঙ্খলা আরও গতিশীল হবে এবং কক্সবাজার-মহেশখালীর নতুন শিল্পাঞ্চলে সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। এতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে পরিণত হবে।
এ চুক্তির ফলে যে দুটি জেটি নির্াণ হবে তার একটির দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটার। অপরটি মালটিপারপাস জেটি-৩০০ মিটারের।
৪ বছরের মধ্যে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কন্টেনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করবে। দুইটি জেটির জন্য সমন্বিতভাবে নির্মাণ করা হবে একটি টার্মিনাল।
৪৬০ মিটার দৈর্র জেটিতে শুধুমাত্র কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। অপরটি মাল্টিপারপাস জেটি। দুইটি জেটিতে একইসাথে বড় আকৃতির তিনটি, মাঝারি আকৃতির চারটি মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং জাইকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কল্যাণে মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্পের গভীর চ্যানেল তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। কয়লা নিয়ে জাহাজও ভিড়ছে জেটিতে। তবে বন্দরের মূল জেটি নির্মাণের কার্যক্রম এতদিন ছিল শুধু কাগজ-কলমে। আজ সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জাপানের বিখ্যাত দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্যাকেজ-১ তথা সিভিল ওয়ার্কস ফর পোর্ট কনস্ট্রাকশন কাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল।
মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য ইতোমধ্যে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গভীর চ্যানেল এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে। এমন সক্ষমতা আগে কোনো বাংলাদেশি বন্দরের ছিল না।
মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের কাজ সম্পন্ন হলে এটি এ অঞ্চলের বাণিজ্য ব্যবস্থারও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালকবাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন খায়রুল আলম সুজন। প্রতিবেশি দেশগুলোর আমদানি রপ্তানির কারণে এটি একটি আঞ্চলিক ট্রানজিট হাবে রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। মাতারবাড়ীর বড় সুবিধা হবে এখানে আট হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার কনটেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আড়াই-তিন হাজারের কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে। বড় জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো গেলে পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে। সবচেয়ে বড় কথা ইউরোপ-আমেরিকায় সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু করা যাবে। এর ফলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরও সুবিধাজনক অবস্থানে যাবে।