চট্টগ্রাম, ২ জুন,২০২৫:
জুলাই আন্দোলন এখন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বাস্তবতা। প্রায় ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মিলন মোহনা গত বছরের ৫ আগস্টে স্বৈরাচারের পতন। তাই ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ যোদ্ধা ও জুলাই অভ্যূত্থানের সকল আলামত, চিহ্ন, উপকরণ, উপাদান, তথ্য ও চিত্র সংগ্রহ এ বছর ৫ আগস্টের মধ্যে চালু করা হবে জুলাই স্মৃতি যাদুঘর।
১ জুন জুলাই শহীদদের পরিবারের স্বজনদের দেখতে গিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ৫ আগস্ট যাতে জুলাই যাদুঘর ওপেন হয়। জুলাই যাদুঘরের প্রধান কাজটা হচ্ছে, দেখেন খুনি এখনও বলছে, সে কোনো খুন করে নাই। আপনি তার ফোন কনভারশেসনগুলো দেখেন, তাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নাই। জুলাই যাদুঘরের কাজ হবে। খুনির সব অপরাধ জাতির সামনে তুলে ধরা যেন পঞ্চাশ বছর পর তখন আমরা কেউ থাকব না, বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর পরের যে প্রজন্ম তারা যেন ওই যাদুঘরে গিয়ে দেখতে পায় আসলে কী হয়েছিল।
তিনি এ সময় জুলাই আন্দোলনে নিহত লালখান বাজারের শান্তর মার সাথে কথা বলেন। সাংবাদিকদের সন্থান হারা শান্তর মায়ের মানসিক অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আপনারা এতক্ষণ যে শান্তর মায়ের কথা শুনলেন উনার দিকে তাকানো যায় না। উনি যখন কথা বলেন, যে কারো কান্নায় বুক ভেঙ্গে যায়। আপনি সহ্য করতে পারবেন না। ওয়াসিমের বাবার চোখের দিকে তাকানো যায় না। প্রত্যেকটা ফ্যামিলিতে কিন্তু, এটা সহ্য করতে পারবেন না তাদের চোখের দিকে তাকালে। এই যে তাদের বেদনাটা যেটা আমরা এখানে দেখলাম আমাদের কাজ হবে জুলাই যাদুঘরে এ বেদনাটা যে ভিজিট করবে তার কাছে ট্রান্সফার করা।
এজন্য চট্টগ্রামে এসেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। এসময় তিনি অন্যান্য জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে ছিলাম ষোলো বছর, জুলাই শুধু বীরত্বের নয় আমাদের কাছে বেদনারও গল্প। এ গল্পগুলো যেন মানুষের কাছে একই পরিমাণ যে বেদনা শান্তর মায়ের কথায় শুনলেন একই বেদনা যেন যাদুঘরের ভিজিটর বুঝতে পারে। এটা আমাদের কাজ এবং সে কাজ করার জন্য আমরা এখন আজকে তিন-চারটা জায়গা থেকে কিছু অবজেক্ট কালেক্ট করছি শহীদদের। আর শুধু অবেজক্ট না শান্তর বাসায় আমাদের টিম একটা ফটো ডকুমেন্টশন করেছে। আপনারা যদি শান্তর বাসায় যান, শান্তর মায়ের যেমন এক রুম থেকে আর এক রুমে যেতে হাহাকার লাগে, কারণ উনি শূন্যতা দেখে। শান্তর শূন্যতা উনি বিভিন্ন জায়গায় দেখেন। যে শূন্যতা উনি ফিল করছেন সেটা যেন আমাদের ফটো ডকুমেন্টেশন সিরিজে উঠে আসে সেজন্য কাজ শুরু করেছি।
সুতরাং আমরা অবজেক্ট নেয়া আর শূন্যতাকে কিভাবে ধারণ করা যায় এই দুটার কাজ চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সফরকারী সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী জুলাই যাদুঘরের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বিষয়ে আরো বলেন,
এজন্য আমাদের একটি বড় টিম তৈরি হয়েছে। তারা সারা দেশ জুড়ে কাজ করছে। আগামী দেড়মাস কাজটা করবে। এজন্য কমিটি হয়েছে অনেকগুলো সাব কমিটি হয়েছে। আশা করি আমরা দেড় মাসের মধ্যে কাজটা শেষ করে জুলাই যাদুঘর ওপেন করতে পারব ৫ আগস্টের মধ্যে।
তিনি আরো বলেন,
আমাদের সময়টা অল্প। সাধারণত এমন একটি যাদুঘর করতে এক-দেড় বছর লাগার কথা। আমরা সব্বোর্চ চেষ্টা করছি।
জুলাই অভ্যূত্থান বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের এক মাহেন্দ্রক্ষণ এনে দিয়েছে বলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন। যে কারণে জুলাই যাদুঘর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি হয়ে থাকবে বলে তারা আশা করছেন।
Discussion about this post