চট্টগ্রাম, ৬ জুন, ২০২৫:
আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির ঈদ।
ঈদুল আযহার প্রধান জামাতের জন্য জমিয়তুল ফালাহের মসজিদ ময়দানে ঈদ জামাত প্রস্তুতি পর্ব সহ নগরীর সকল ঈদগাহ ময়দানগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এর মধ্যে আগামীকাল চট্টগ্রাম নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে।
গতকাল ৫ জুন জমিয়তুল ফালাহ ময়দান পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, প্রধান জামাতের জন্য জমিয়তুল ফালাহ ময়দান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
সেখানে কাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া নগরীর অন্যান্য সকল ঈদ জামাতের ঈদগাহগুলোর শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল। যেখানে কাল সকল ঈদগাহগুলোয় ঈদের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা।
কোরবানির গবাদিপশু বাজারে কেনাকাটার শেষ দিন
আজ কোরবানির গবাদিপশু ক্রয়ের শেষ দিন। চট্টগ্রাম নগরের তিনটি প্রধান পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা বাজার, বিবির হাট বাজার ও পোস্তার পাড় বাজার। এসব বাজারে চলছে শেষ সময়ে কোরবানি পশু ক্রয়ের ব্যস্ততা। এছাড়া নগরীতে রয়েছে সাতটির বেশি অস্থায়ী পশু বিক্রির হাট। পাশাপাশি কোরবানি পশু বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে নগরের ছোট বড় খামারিরা। তরুণ উদ্যোক্তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ির খোলা জায়গায়ও পশু বিক্রি করছেন।
তবে শেষদিনে চট্টগ্রাম নগরীতে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সাগরিকা গবাদি পশুর বাজারে ক্রেতাবিক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এ পশুর বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারিরা পশু নিয়ে হাজির ছিল সপ্তাহ খানেক আগে থেকে। তবে এতদিন বৃষ্টির কারণে বাজারে বেচাবিক্রি কিছুটা কম থাকলেও এখন ক্রেতাবিক্রেতা মশগুল ছোটবড় সকল বেপারিরা। ক্রেতাদেরও অপেক্ষার আর সময় নেই। ঝুঁকি নেওয়ার সময়ও নেই।
এদিকে সাগরিকা গবাদিপশুর হাটে কোরবানির উপলক্ষে বেচাবিক্রি উভয় পক্ষের স্বস্তি অস্বস্তি রয়েছে। তবে ক্রেতা বিক্রেতারা বলছেন, সাগরিকা বাজারে এ বছর কোরবানির পশু তুলনামূলক কম এসেছে। আবার বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাও কম। কিন্তু আজ অপেক্ষার পালি শেষ। তাই শুধু দরদাম করে বাজারের পরিস্থিতি দেখার আর সময় নেই।
এদিকে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরীর কামারশালা, দা বটি, ধামা সহ মাংস কাটার নানা হাতিয়ার বিক্রেতারা। দা, ছুরি, ধামা সহ নানা হাতিয়ার নির্মাণ ও পুরনো মাংস কাটার হাতিয়ারে শান দিতে ব্যস্ত তারা।
মূলত পবিত্র ঈদুল আযহার মাসে অন্যরকম এক বস্ততা শুরু হয় কামারশালা ও দা ছুরি বটির দোকানগুলোতে। কামারশালায় বাড়ে নতুন দা ছুরি তৈরির ব্যস্ততা। দা- ছুরি শান দেওয়া ও লবণ পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয় মাংস কাটার হাতিয়ার। যে কারণে বাড়তি আয় রোজগারও হয় বিক্রেতা সহ সংশ্লিষ্টদের। তাই তাদের অনেকের দম ফেলারও সময় থাকে না। দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয় উঠে কামারের দোকান। দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরি করতে তাই ব্যস্ত সকলে। আর সংশ্লিষ্ট কারিগরদের আয়রোজগারও বাড়ে কোরবানি উপলক্ষে।
সাথে কোরবানির মাংস কাটার সরঞ্জামাদি কিনতে প্রতিদিন কামারদের কাছে ভিড় করছেন কোরাবানিদাতা ও সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া নগরীর মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির মাংস কাটার সরঞ্জাম। গাছের গুড়ি, মাদুর, গরুর খড়-বিচালি বিক্রি করে অনেকে কোরবানির গরু বিক্রির মৌসুমে কিছু বাড়তি আয় রোজগার করার চেষ্টা করছে।
ঈদে বাড়ি ফেরা
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে বাড়ি ফেরা শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের। দিন দিন যাত্রীর ভিড় বাড়তে বাড়তে আজ শেষদিনে রেল স্টেশন ও বাস স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভিড়।
ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের জন্যও রেল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ৩১ মে থেকে ঈদ যাত্রা শুরু হয়। নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-১ ও ২ চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল শুরু করছে। যাত্রা নির্বিঘ্ন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিকী। তিনি বলেন,
গত ২১ মে থেকে ঈদযাত্রীদের জন্য অনলাইনে রেলের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। গত ৩০ মে থেকে শুরু হয় যাত্রীদের জন্য ফিরতি টিকেট বিক্রি। গতকাল ৫ জুন পর্যন্ত ফিরতি যাত্রীদের টিকিট বিক্রি করা হয়।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাস স্টেশনগুলোতে ভিড় বাড়িতে যাওয়া নানা শ্রেণিপেশার মানুষের। তবে স্টেশনগুলোতে সড়কপথের দূরপাল্লার যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় নগরের কদমতলী, একে খান, অলঙ্কার মোড়, মুরাদপুর, অক্সজেন ও বহদ্দার হাট সহ বিভিন্ন বাস স্টেশনগুলোতে।
সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি শুরু হবার পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।