চট্টগ্রাম, ৯ জুন, ২০২৫:
কোরবানির ঈদে প্রতিবছর চট্টগ্রাম থেকে কয়েক লাখ গবাদিপশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, হামজার বাগ ও আতুরার ডিপো এলাকায় সারা চট্টগ্রামের বেশির ভাগ চামড়া এনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু যে কয়দিন চামড়া সংগ্রহ ও চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলে ততদিন মুরাদপুর এলাকা দিয়ে চলাচল দুর্বিসহ হয়ে উঠে। দুর্গন্ধে চারপাশ ভরে উঠে। এ দুর্গন্ধ বাতাস বয়ে নিয়ে যায় কয়েক মাইল। আশেপাশে মানুষ বাসাবাড়িতে টিকতে পারে না।
দুপাশে সড়ক দখল করে রাখে চামড়ার আড়তদাদরা। চামড়ার স্তুপ সড়কে। তারপর সৃষ্টি হয় যানজট। চামড়ার দুর্গন্ধের মধ্যে সড়কের আটকে থাকে যাত্রীরা। আর পথচারিদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
এরমধ্যে সড়কের উপর চলে চামড়া বাছাই করা। চামড়ার কাটাকুটি- কান-লেজ, শিং ইত্যাদি।
রাস্তার উপর লবণ দেওয়া হয়। লবণ দিয়ে রাস্তা- ফুটপাতে ফেলে রাখা হয়।
সড়ক চামড়া ও রক্তের পচা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। লোনা পচা পানি দিনের পর দিন আটকে থাকে সড়কে, নালা-নর্দমায়।
খোলা আকাশের নিচে এভাবে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলে দিনের পর দিন। চামড়ার এসব ময়লা-আবর্জনা ও পচা পানি কাক সহ পাখিরা খেয়ে উজাড় হচ্ছে।
চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সাড়ে চার লাখ পিস চামড়ার ব্যবসা হয় শুধু কোরবানির ঈদে। সারা বছরের ব্যবসাও এর সমতুল্য।
কিন্তু পরিবেশবিরোধী ও জনস্বাস্থ্যবিরোধী এ প্রক্রিয়ায় আর কতদিন মুরাদপুর এলাকায় এ ব্যবসা চালানো হবে? এ প্রশ্ন নগরবাসীর।
সাধারণত এসব দেখভালের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হলেও তাদের সবটাই দায়সারা। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই দেখা যায় না।
বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক লাভ লোকসানের নানা হিসাব-নিকাশ করা হলেও চট্টগ্রামে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম পরিবেশবিরোধী। একই সাথে এতে চামড়ার গুণগত মান কতটা নিশ্চিত করা সম্ভব সেটাও প্রশ্ন।
দেশে বর্তমানে দুই শতাধিক ট্যানারি রয়েছে যার অধিকাংশ প্রযুক্তি ও পরিবেশ সম্মত নয় বলে বিদেশিদের মধ্যে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশের চামড়া ক্রয় কর না। কারণ কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়ে না উঠায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ মিলছে না বাংলাদেশের। চামড়া ও চামড়া পণ্যের বাজারের জন্য ২০১৭ সালে সাভারের হেমায়েত পুরে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করা হলেও সেটা থেকে পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্পের বিকাশ সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে ১৪২ টা কোম্পানির মধ্যে কারো কমপ্লায়েন্স সুবিধা নেই।
তথ্যমতে দেশে কোরবানির ঈদে সময় পুরো বছরের পঞ্চাশ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এ সংগৃহীত চামড়া পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারে না বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়। ধর্মীয় এ বিধান ত্যাগের মহিমাই নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক জীবনেও বড় প্রভাব ফেলে।
তাই কোরবানির পর—গবাদিপশুর চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কতটা পরিবেশসম্মত?
বাংলাদেশ একসময় চা ও পাটের চামড়া রপ্তানি ছিল অন্যতম। ঈদের সময় প্রাপ্ত কাঁচা চামড়া দেশের চামড়া শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল।
কিন্তু অতিরিক্ত লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কারণে মাটি ও পানি দূষিত হয়। উন্মুক্ত জায়গায় লবণাক্ত পানি মিশে যাওয়ায় আশপাশের কৃষিজমিতে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
সাভারেও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় নদী দূষণ, মাটি দূষণ এবং বাতাসে দুর্গন্ধ একটি নিয়মিত সমস্যা।
এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ: কসাই, স্বেচ্ছাসেবক ও সংগ্রহকারীদের চামড়া সংগ্রহের পরিবেশবান্ধব কৌশল শেখানো জরুরি।
চামড়া সংরক্ষণের বিকল্প পদ্ধতি: লবণ ছাড়া বা কম লবণযুক্ত পরিবেশসম্মত সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কড়াকড়ি: ট্যানারির জন্য কঠোর পরিবেশ আইন প্রয়োগ ও নিয়মিত তদারকি করা।