চট্টগ্রাম, ৮ জুন, ২০২৫:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক ব্যক্তিকে সশস্ত্র হামলার পর মীমাংসার জন্য সালিশি বৈঠক ডাকা হলে সেখানেও অভিযুক্তরা ফের হামলা করে সালিশে মধ্যস্থতাকারী ও এক মহিলা সহ ৮ জনকে আহত করেছে। আজ ৮ জুন দুপুরে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়কুল নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মধ্যস্থতাকারী এলাকার মো. ইদ্রিস মিয়া (৬৫), মুরাদ হোসেন (২৭), মো. শেফায়েত (২৭), মো. জুনায়েদ (২৫), মো. ছাবের হোসেন (২৮), মো. শফিক (২০), মাহমুদুল হক (৫০) ও জোবেদা খাতুন (৪৫) আহত হয়েছেন।
আহতদের অনেকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন। কেউ কেউ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সাতকানিয়া থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগকারী পাহাড়কুল নয়াপাড়ার বাসিন্দা রবিউল আউয়াল বলেন, ঈদের আগের দিন আমার ঘরের টিনেরচালে ঢিল ছুড়ে রেজাউল করিম, মো. আরাফাত ও মো. আয়াত। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করেন। বিষয়টি আমি সমাজপতি ইদ্রিস মিয়াকে জানানোর পাশাপাশি সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এর পর ইদ্রিস মিয়া উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সালিশি বৈঠক আহ্বান করেন। কিন্তু সালিশি বৈঠকটি পণ্ড করার জন্য একই এলাকার মো. আয়াত (১৮), রেজাউল করিম (২০), মো. মহিউদ্দিন (২৫), মনির হোসেন (২২), জামাল হোসেন (৪৫), বেলাল হোসেন (২২), সৈয়দ আমিন (৪০), আনোয়ার হোসেন (২৮), হেলাল উদ্দিন (২০) ও মো. আরাফাত (১৮) সমাজপতি ইদ্রিসের ওপর হামলা চালায়। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা চার রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুনরায় এলাকাবাসীর উপর হামলা চালায়।
মধ্যস্থতাকারী আহত মো. ইদ্রিস বলেন, পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে আমিসহ সমাজের অন্যান্য লোকজন উপস্থিত হলে অন্তত প্রায় দেড় শতাধিক যুবক আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এর মধ্যে এক হামলাকারী শর্টগান নিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। এ সময় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক সালিশের মাধ্যমে মাদক, ইভটিজিংসহ নানা বিষয়ে সমাধানের কথা ছিল। কিন্তু ইউপি সদস্যের কথায় সালিশের সময় একদিন পিছিয়ে দেয়া হয়।
সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রী এবং পুত্রবধূর উপর হামলা চালিয়ে ঘরের স্বর্ণালঙ্কার লুট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইদ্রিস। তিনি বলেন, বৈঠকে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকের মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আমি তাদের ৩ জনের হাতে শর্টগান দেখেছি। দূরে তাদের আরও একটি গ্রুপ ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা আমাকে বেদমভাবে মারধর মাটিতে ফেলে দেয়।
উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ওই সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এক পক্ষের লোকজন বিপুলসংখ্যক এলাকাবাসী নিয়ে সালিশি বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু অপর পক্ষের লোকজন সালিশি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় বৈঠকটি একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর একপর্যায়ে সালিশি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা লোকজন দলবল নিয়ে সমাজপতি ও এলাকাবাসীর অতর্কিতে হামলা করে। ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।
অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত মো. আয়াতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম দু’পক্ষের সংঘর্ষের সত্যতা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। গোলাগুলির বিষয়ে স্থানীয়রা আমাদেরকে জানিয়েছেন। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।