চট্টগ্রাম, ১৮ জুন, ২০২২:
দিনব্যাপি লাগাতর বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা এলাকায় গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় দুই নারী সহ চার জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনায় নিহত দুই সহোদর বোন শাহীনুর আক্তার(২৪) ও মাইনুর আক্তার(২০)। ফয়সলেক লেকভিউ আবাসিক এলাকার আর একটি পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত হন – লিটন(২৩) ও ইমন(১৪)।
পাহাড় ধসে আহত হয়ে মাইনুর ও শাহীনুরের বাবা ফজলুল হক (৭০) ও মা রানু বেগম (৬০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে মাইনুর ও শাহীনুরের এক বছর ও ছয় মাস বয়সী দুটি শিশু ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন আকবর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাত একটার দিকে চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উভয় ঘটনায় চার জনকে মৃত ঘোষণা করে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রাত একটার দিকে বরিশাল ঘোনা এলাকায় ও রাত তিনটার দিকে লেকসিটির বিজয় নগর এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪৮ দশমিক৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, হালিশহরের কিছু কিছু এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার প্রবল বৃষ্টির কারণে রাত ৩টা পর্যন্ত নগরীর ষোলশহর শহর, ২নংগেইট, মুরাদপুর এলাকা কোমড় পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগর জীবনে দেখা দেয় ভোগান্তি। বিশেষ করে নগরের নিম্ন এলাকাগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়।
এদিকে লাগাতর বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং ও সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে ভারী বর্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, কাট্টলী ও চান্দগাঁও সার্কেলাধীন ১৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুইদিন ধরে কখনও হালকা থেকে মাঝারি, আবার বৃহস্পতিবার সকালে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে দিন ভর ভারী বৃষ্টি হলে নগরের বাটালি হিল, মতিঝর্না, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ এবং বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’সলেক সংলগ্ন১ নম্বর ঝিল, ২নম্বর ঝিল, ৩ নম্বরঝিল, আমিন জুট মিল এলাকার পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে থেকে মাইকিং করছেন সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার ভূমি।
সূত্রমতে সীতাকুণ্ড উপজেলা, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, লোহাগাড়াতেও পাহাড় ধস এবং ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাডের বিষয়ে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে।
Discussion about this post