চট্টগ্রাম, ২৩ জুন,২০২২:
যে দলের লড়াই-সংগ্রামে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভিত্তি রচনা হয়েছে, রচিত হয়েছে ৫২, ৬২ এর গণ আন্দোলন, যারা রচনা করেছিলেন ৬ দফা আন্দোলনের ভিত্তি, ৬৯ এর দুর্বার গণ অভ্যূত্থান সেই দলটি আওয়ামী লীগ।
সেই দলটির নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পদ্মা সেতু গড়ার আনন্দ- উৎসব এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আনন্দ বহু যুগের অপেক্ষার। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু করেছি নিজেদের অর্থে।’ যা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের পর বড় অর্জন।
যে দলের পতাকা উড্ডীন করে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধি পান। তার সেই দলটি নেতৃত্ব ও দুর্বার লড়াইয়ে রচিত ৭১ এর মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি জাতি বাঙালি বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে বরণ করে। এই মহাকাব্যিক দেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। ওই কমিটিতে তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ করা হলেও পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দলের নাম করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’ । তার পর ১৯৫৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পর ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করা হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাদ দেয়া হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে দলটি সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। দলীয় প্রতীক করা হয় নৌকা। সেটা ১৯৭০ সাল থেকে। মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ।
আজ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে দলটি। সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই দিন সকাল আটটায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পদ্মা সেতু করেছি নিজেদের অর্থে অথচ এটা নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তোলে, যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা তারা আবার প্রশ্ন তোলে কোন মুখে? সে প্রশ্নও তিনি উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরাতো কিছুই করে যেতে পারেনি। জাতির পিতা তাঁর প্রথম জাপান সফরে যে যমুনা সেতু করার উদ্যোগ নেন সেটা তাঁকে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান বন্ধ করে দেন।
তিনি আরো বলেন, তার দল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাওয়ায় দেশের মানুষের কাছে নৌকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এছাড়াও আজ টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া সারাদেশে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে।
এদিকে গতকাল বুধবার বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বাণীতে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
। আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, এটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের গঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনের মহত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগ কয়েক দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের লক্ষ্যে অবিচল বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, চৌষট্টির দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই করেছে। এই দলটির নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের জনতা এই দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই -সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দেশের সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ছবি: আওয়ামী লীগের পতাকা ও প্রতীক (সংগৃহীত)
Discussion about this post