চট্টগ্রাম, ১৮ আগস্ট, ২০২২
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পর দফায় দফায় পণ্যমূল্য বাড়ায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে হাহাকার উঠেছে। বিশেষ করে ডিমের হালি প্রতি দাম হয়েছে ৬০ টাকা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ, পোলট্রি মুরগি, শাক-সবজি, চিনি, ভোজ্য তেল, চালডাল, আটা, মরিচ, পেঁয়াজ সবকিছুর। বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে চলছে দিনের পর দিন।
এই অবস্থায় খাদ্যপণ্য নিয়ে কথা উঠলেই যেন দম আটকে যাবার দশা ভোক্তার। গত কয়েকদিনে ডিমের বাড়তি দাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা ডজন। এভাবে যেভাবে যেখানে যেমন সুবিধা ডিম বিক্রি করে ভোক্তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ডিম খাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে অনেকে।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দার হাটের নজরুল ইসলাম নামে বেসরকারি চাকরিজীবী এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বলেন, আমাদের গরিবের জন্য পুষ্টিকর খাবার ছিল এই ডিম। আগেও কোন কারণ ছাড়া প্রতিটি ৭ টাকা থেকে একে একে ডিমের দাম বাড়িয়েছিল বিক্রেতারা। কোন কারণ ছাড়া ডিমের ডজন ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এবার ১৮০ টাকা। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে যেভাবে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে তা যদি অন্য সব কিছুর ক্ষেত্রে বাড়ানো হয় তাহলে মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।
শুধু নজরুল ইসলাম নয়, ডিমের দাম নিয়ে আলোচনা সর্ব ত্র। আবুল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ডিমের দাম বৃদ্ধিতে ডিম বিক্রেতারা যে প্রশ্রয় পাচ্ছে, তা যদি সব ব্যবসায়ীরা প্র্যাকটিস করে তাহলে মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। কারণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে সকল ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে। জ্বালানির খরচ বাড়ার বিষয়টা শুধু ডিম বিক্রেতারা আলাদাভাবে বুঝাতে চাইছে ভোক্তাদের। এখন তাদের কাছ থেকে শিখে অন্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মানুষকে কষ্টে ফেলবে।
ইফেতেখার নামে এক ক্রেতা বলেন, এই কয়েকদিনে বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভোক্তাদের এই রক্তক্ষরণ দেখেও নীরব।
এদিকে সরকার ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সম্প্রতি ডিম আমদানির কথা বলাতেই ডিমের চড়া দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
ডিমের দাম একদিনের ব্যবধানেই ১৬০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও । অন্যদিকে ১০ টাকা কমে প্রতি হালি (৪টি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যের পরের দিনেই ডিমের দাম হালিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজারগুলোতে দেখা গেছে, লাল ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫০ টাকা করে। অথচ বুধবার বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা হালি। সেই হিসাবে খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম কমেছে ৮ থেকে ১০ টাকা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, দাম বাড়ার পরে অনেকে ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ১০ কেস ডিম বিক্রি হতো। এখন তার অর্ধেক বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েকদিন ৬০ টাকা হালি ডিম বিক্রি হচ্ছিল এখন ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়ত থেকে ডিম কম দামে কিনেছি। তাই কম দামেই বিক্রি করছি।
ডিম আমদানি করা হবে বলে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ডিমের দাম কমানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, আমরাও চাই ডিমের দাম কমাতে কিন্তু আমাদের উপায় নেই। তিনি বলেন, ডিমের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি কমেছে। আমাদের ব্যবসাও কমেছে।
কিন্তু ডিম ছাড়াও অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজারেও হাহাকার চলছে। প্রায় ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পোলট্রি মুরগির কেজি। বেড়েছে শাক সবজির দাম।
চাল, আটা, ডাল,ভোজ্য তেল, চিনি সব কিছুর অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর প্রশাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এভাবে দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে মানুষ নিষ্পেশিত হচ্ছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।
Discussion about this post