চট্টগ্রাম, ২৫ আগস্ট, ২০২২:
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক নিজ বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শরনার্থি ক্যাম্পে বসবাসের আজ ৫ বছর অতিবাহিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে আজ ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে শরনার্থি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ২০১৭ সালে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন।
তবে এদিনে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘বড় সংখ্যক’কে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তিতে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিলেও মোট কত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হবে, তা বিবৃতিতে স্পষ্ট করেননি।
অন্যদিকে জাপানও আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে বলে জানিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে এলেও ভারত, থাইল্যান্ডসহ আরও ২০টি দেশেও এই জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ আশ্রয় নিয়ে আছে। যেসব দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন ব্লিংকেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও সমন্বিত মানবিক সাড়াদানের অপরিহার্য একটি উপাদান হিসাবে আমরা বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে কাজ করছি, যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন খুঁজে নিতে পারে।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। তৃতীয় দেশে শরণার্থীদের স্থানান্তর একটি স্থায়ী সমাধান। এটা শরণার্থীদের চাপ আন্তর্জাতিকভাবে ভাগাভাগি করার সুযোগ। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে জাপান পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় রোহিঙ্গাসহ ৫৪ পরিবার ও ২০০ লোককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আরও বেশি রোহিঙ্গাকে জাপানে স্থানান্তরের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে পারি।
তবে আজকের রোহিঙ্গাদেও পালিত কর্মসূচীতে তাদেও আকৃতি ছিল তাদেও মাতৃভ’মি মিয়ানমার ফিওে যাওয়া। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ২০টি ক্যাম্পে পৃথকভাবে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে তারা তাদেও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
‘গো ব্যাক হোম’- এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে গণহত্যার বিচার ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দাবিতে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্প ও ব্লকভিত্তিক কমিউনিটি রোহিঙ্গা নেতারা। এসময় উপস্থিত সাধারণ রোহিঙ্গাদের হাতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা এক বাক্যের প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। রোহিঙ্গা নেতাদের বক্তব্যে ছিল স্বদেশে ফেরার আকুতি
অনুমতি ছিল শ’খানেক রোহিঙ্গা হাজির হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার। কিন্তু সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে গণহত্যার বিচার ও প্রত্যবাসনের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধনে জড়ো হন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এতে মানববন্ধন সমাবেশে রূপ নেয়। এসময় রোহিঙ্গা নেতারা তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান ।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা বিশ্বের সকল নাগরিকের কাছে দাবি জানাচ্ছি ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করুন। আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করুন। আর আমাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের সহায় সম্বল ফিরিয়ে দিন। এসব দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সমাবেশে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা। সকাল থেকে লোকজন কুতুপালং খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী-শিশুরাও যোগ দেন।
সমাবেশের শেষদিকে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাত চলাকালে অত্যাচার-নিপীড়নের বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কুতুপালং ছাড়াও বালুখালী, পালংখালী, থাইংখালীর তাজনিমারখোলাসহ ২০টি ক্যাম্পে এ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Discussion about this post