চট্টগ্রাম, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
বেলাল কখনো এসপি, কখনো ওসি, এসআই। কিংবা সিআইডি, পিবিআই. বিজিবি ও র্যাব অফিসার। এভাবে প্রশাসনের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহ মানুষ থেকে হাতিয়ে নিত টাকা পয়সা। মোবাইল ফোনের বিকাশ বা অন্যান্য টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সন্ত্রস্ত মানুষ তাকে টাকা পাঠাত। এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদস্থ অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাবের কাছে অভিযোগে জনৈক মোহাম্মদ খোরশেদুল আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৬টার দিকে ফোনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা দায়ের করার হুমকি প্রদান করে আমার নিকট ২০,০০০ টাকা দাবি করে।
খোরশেদ জানান, সরল বিশ্বাসে উক্ত প্রতারকের দেয়া নাম¦ারে ১৬ আগস্ট রাতে ২০,৪০০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত প্রতারক থানার ওসি সেজে পুনরায় তার নিকট টাকা চাইলে খোরশেদ আলম ১৭ আগস্ট সকালে ৩,০৬০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। ওইদিন আবার উক্ত প্রতারক সার্কেল এএসপি সেজে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৫০,০০০ টাকা দাবি করলে ভিকটিম ১৭ আগস্ট রাতে আরও ২৯,৫৮০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। এরমধ্যে সেই প্রতারক বেলাল এসপি সেজে ভিকটিমের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এভাবে প্রতারক বেলাল খোরশেদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সর্বমোট ৫৩,০৪০ টাকা হাতিয়ে নেয়। অতঃপর প্রতারক তাকে পুনরায় র্যাবের অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন দেয় এবং জানায় মামলাটি বর্তমানে র্যাবের নিকট এসেছে এবং সে উক্ত মামলার বিষয়ে খোঁজ খবরের নাম করে তার নিকট পুনরায় টাকা দাবি করে।
এভাবে বেলাল প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে। ব্যবহার করত একটি প্রাইভেট কারও। ২০২১ সালের মে মাস হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের কাছে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর/র্যাব বাহিনীর সদস্য হিসাবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে বেড়াত এবং বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি মামলার তদন্তকারী অফিসার, পিবিআই, সিআইডির কোন অফিসারের নাম, কখনো বা র্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করত এবং টাকা না দিলে কিংবা দিতে দেরি করলে হুমকি ধমকি দিত। কিন্তু খোরশেদের ঘটনায় বেলাল ধরা পড়ে র্যাবের জালে।
প্রতারণার শিকার খোরশেদের সব ঘটনা সন্দেহজনক মনে হলে ভুক্তভোগী খোরশেদ র্যাব-৭, চট্টগ্রামকে অবহিত করে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়। অতঃপর র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা নজরধারির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম¦র রাত ১ টার দিকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা হতে আসামি মোঃ বেলাল হোসেন(৩১), পিতা-মৃত আব্দুল মালেক, সাং-বক্তপুর, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা-চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক খোরশেদ অকপটে স্বীকার করে যে, সে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র্যাবের অফিসার সহ নানা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। একই কায়দায় খোরশেদ আলমের নিকট হতে মোট ৫৩,০৪০ টাকা আদায় করেছে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তারকৃত বেলালের বিরুদ্ধে এসব তথ্য দিয়েছে। খোরশেদের সাথে তার এক সহযোগিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, প্রতারক বেলালের প্রতারণা কেউ বুঝে উঠতে পারত না। সে নিজে কোনদিন কারো সাথে দেখাও করত না। টাকা নিত বিকাশে এবং বিকাশের দোকানেও যেত না। বিকাশের দোকানকে অন্য নম্বরে টাকা সেন্ড করাতে বলত। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে সে লোকজনকে প্রতারিত করে আসছে। সে নিয়মিত প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে মোবাইলে কথা বলত এবং ফোনের অপর পাশে থাকা ভিকটিমরা তাকে ঊর্ধ্বতন অফিসার বলে মনে করত।
বেলাল প্রথমে তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনকে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার বা র্যাবের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাতো। তারপর ২০২১ সালের মে মাসে সে একটি মুদির দোকানে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে সর্বপ্রথম ৫০০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া সে থানার ওসি সেজে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদারের নিকট হতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম¦ার পদ প্রার্থীদের মোবাইল নম¦র সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তাদেরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করে। সর্বশেষ রাউজান থানায় একটি বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনায় মৃতের পিতার নিকট ময়নাতদন্তের ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে নির্মমভাবে ৫০০০ টাকা আদায় করেছে।
এই প্রতারক বেলাল অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠান থেকে নানা সমস্যার সম্মুখীন মানুষের মোবাইল নাম¦ার ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করত এবং তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা আদায় করত। তার দেওয়া ভাষ্যমতে, গত দেড় বছরে প্রতারনাই ছিল তার একমাত্র আয়ের উৎস এবং পেশা। গ্রেফতারকৃত আসামি বেলাল ইতিপূর্বে মুরগির ব্যবসা করত বলে র্যাবকে জানায়। প্রতারক বেলালের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে র্যাব জানায়।
Discussion about this post