চট্টগ্রাম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রামের শিল্প এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শিল্প কারখানার মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভা আজ ১১ সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কক্ষে আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প পুলিশের প্রধান এআইজি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, চট্টগ্রামের এসপি মোহাম্মদ সুলাইমানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিশিষ্ট শিল্পপতি পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফী মিজানুর রহমান, বিজিএমইএ চট্টগ্রামের প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এছাড়া ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, শিল্পজোনের কর্মকর্তাবৃন্দ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ মত বিনিময়ে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, শিল্পকারখানায় উৎপাদন ও শ্রমিক মালিক সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিল্প পুলিশ সহ সকলের সাথে দ্রুত তথ্যের আদানপ্রদান করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ডলার মার্কেট স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানান। কোভিডের মত বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে যুদ্ধকালীন ব্যবসাবান্ধব পলিসি গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এআইজি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন,
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশ থাকবে। ব্যবসা ও শিল্পখাতে কোনো অরাজকতা ও অস্থিরতা মেনে নেওয়া হবে না।আপনাদের সঙ্গে থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখব। দেশের অগ্রযাত্রাবিরোধীদের পরাজিত করব।
সভায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কর্মকর্তারা শিল্প কারখানায় যে কোনো অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক, মালিক পক্ষ ও প্রশাসনের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। গোয়েন্দা তথ্য যথাযথভাবে আদান প্রদানের কথা বলেন। শ্রমিকদের সাথে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক না রেখে শ্রমিকদের সাথে ব্যবসায়িক অংশীদার, পরিবারের সদস্যের মত সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তারা অস্থিরতা সৃষ্টির আগে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান। শ্রমিকরা যাতে বুঝতে পারে – কারখানায় গোলমাল সৃষ্টি হলে তারাও যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা তাদের বোঝাতে হবে বলে মতামত তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ প্রত্যেক শিল্পজোনে শিল্প পুলিশের ইউনিট স্থাপনের আহ্বান জানান।
তারা বলেন, পাটের সেই সোনালী আঁশ আর নেই। পাট ধ্বংস হয়েছে। তৈরি পোষাক রপ্তানি ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। অর্ডার কমে যাচ্ছে। অভাব আসছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলিসিগত সাপোর্ট দরকার। চারদিকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে তারা বক্তব্যে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী করোনায় ব্যবসায়িদের ২লাখ ডলার দিয়েছেন। এটা পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এসএমই খাতেও দিয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ব্যবসায়িদের দুর্দিনে তারা সরকারকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ কমাতে ব্যবসায়িরা ডলার মার্কেটকে স্থিতিশীল রাখার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা বলেন, এই পরিস্থিতিতে যেহেতু ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না, সেহেতু আমদানির স্থান বদল হচ্ছে, এজন্য আগের মূল্যে পণ্য ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ডলারের রেট বাড়লে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে। এতে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। তাতে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। ইমপোর্টের খরচ বাড়লে দেশের মানুষ খেতে পারবে না। কোভিডের পর যুদ্ধ মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক দেশ ব্যবসা করতে পারছে না।
অন্যদিকে দেশের ভেতর পণ্য আনানেওয়ায় পণ্যবাহী গাড়ি থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান ব্যবসায়িরা। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কথাও উঠে আসে।
সামনে জাতীয় নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে ব্যবসায়িরা বলেন, আমাদের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। আগামী দেড় বছর কোনো ধরনের ব্যবসায়িক অস্থিতিশীলতা করতে দেয়া হবেনা। এজন্য পলিটিক্যাল স্টাবিলিটি প্রয়োজন। অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব। ইমেজ সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় এজন্য মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার কোনো বিকল্প নেই।