চট্টগ্রাম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
সাতকানিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে থানা পুলিশ ৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি মিনি ট্রাক, ২টি লম্বা দা ও ১টি তালা কাটার যন্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (২০সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের দস্তিদারহাটের পূর্ব পাশে রহিম কলোনির সামনে থেকে ডাকাতদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, চট্টগ্রামের ভুজপুর থানার ভুজপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড আজিমপুর আদর্শ গ্রামের এজাহার মিয়ার ছেলে মো.এরশাদ (৪০), বান্দরবানের আলীকদমের আলীকদম ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সিলটি পাড়ার মৃত শামশুল আলমের ছেলে মো. নুরুল কবির (৩১) এবং কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউপির ৫নং ওয়ার্ড নাপিতখালীর মো. আবদুল্লাহর ছেলে মো. হাবিব (১৯)।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তাকৃতরা পেশাদার অপরাধী। তারা চুরি, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তালা কাটার যন্ত্র, ট্রাক ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা গরু চুরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে পুলিশ জানায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নস্থ কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের দস্তিদারহাটের পূর্ব পাশে রহিম কলোনির সামনে একদল ডাকাত গরু ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওচমান আলী রাতে অপরাধ দমনে সড়কে টহলরত অবস্থায় ডাকাতদের দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ওই স্থানে গিয়ে ডাকাতদের গ্রেপ্তার ও ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে কেঁওচিয়া ইউনিয়নটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এ ইউনিয়নে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের আড্ডা ও কেনা-বেচা চলে হরদম। মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারা ও মাদকের নিরাপদ স্থান দখল- বেদখল নিয়ে প্রায় সময় সমানতালে চলে মারামারি। পরবর্তীতে তা সংঘর্ষে রূপ নিয়ে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো ঘটনা। এমন সংঘর্ষে অনেকেই এখনও পর্যন্ত গুরুতর আহত হয়ে লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা। আবার অনেকেই কিছুটা সুস্থ হয়ে বহন করছেন সেই আঘাতের চিহ্ন। মাদকের ক্রয়-বিক্রয় চলমান থাকাকালীন নতুন করে শুরু হয়েছে মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু ডাকাতির ঘটনা। সম্প্রতি গরু ডাকাতির ঘটনা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেলে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওচমান আলী মাঝে মাঝে রাতের বেলায় চৌকিদার-দফাদার ও তার সমর্থকদের নিয়ে টহলে বের হন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গরু ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চেয়ারম্যান তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলে ডাকাতদল ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয়।
এ ব্যাপারে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওচমান আলী বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য রাতের বেলায় চৌকিদার-দফাদার এবং এলাকার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে নিয়ে টহল দেয়ার চেষ্টা করি। ঘটনার দিন রাতেও ইউনিয়নের অন্যান্য এলাকা টহল শেষে দস্তিদার হাট গেলে অপরিচিত এক লোকের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উল্টাপাল্টা তথ্য দিলে আমার সন্দেহ হয়। পরে তার সাথে থাকা ডাকাতরাও
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। তখন আমি তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে ডাকাতদের থানায় নিয়ে যায়।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, গ্রেফতারকৃত ৩ জন ছাড়াও আরও ৪/৫ জন ডাকাত পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এরশাদের বিরুদ্ধে ভুজপুর ও সীতাকুণ্ড থানায় ২টি করে ৪টি অস্ত্র, ফটিকছড়ি ও ডবলমুরিং থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ ৬টি এবং নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চান্দগাঁও থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। গতকাল (বুধবার) সকালে তাদের বিরুদ্ধে থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা হয়েছে এবং সকালেই তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post