গত ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা তুলতেই বিএনপির ঘোর ভেঙ্গেছে । আজ ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব সির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভা থেকে তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া আগামীতে নির্বাচন হবে না।
অন্যদিকে নির্বাচনি ইশতেহার আপডেট করতে উপ-কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভা থেকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ক্ষমতাসীন দলটি। করোনা মহামারির মধ্যে এক বছর পর গণভবনে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ সভা চলে।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা হলেও নির্বাচনের বিষয়টা সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে, আর একটা সংসদ নির্বাচন যে বেশি দূরে নয় সেটা জনগণও অবহিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের পরবর্তি যে নির্বাচনি ইশতেহার হবে, সেই ইশতেহারে যে বিষয়গুলো থাকবে, সেগুলো আপডেট করার জন্য উপ- কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপ-কমিটির কয়েকজন সদস্য সচিবের বক্তব্যও শুনেছেন দলের সভাপতি। এলাকার ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। যেখানে যেমন সমাধান সেখানে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে কলহ-বিবাদ রয়েছে সেসব সমাধান করার নির্দেশও দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা।
এছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর চক্রান্ত চলছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে অপপ্রচারের মাত্রা বাড়ছে। এসব অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলা হয়। নির্বাচনে প্রস্তুতির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন বিভাগকে সেমিনারের মাধ্যমে যেমন-স্বাস্থ্য, শিক্ষার মত বিষয়গুলো আপডেট করার কথা বলা হয়।
তবে আওয়ামী লীগের এই সভার খবরে বিএনপি যেন নড়েচড়ে বসেছে। একই সাথে দলটির মধ্যে নির্বাচনি আমেজ ও উত্তেজনা তৈরির একটা বিষয়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচন করতে হলে কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করেছে তারা। যে কারণে- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি ছাড়াও তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সাথে জেলে থাকা বিএনপির অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যাদের আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। এর বাইরে কোনো নির্বাচন হবে না এদেশে। তিনি সত্যিকার নির্বাচন কমিশন গঠনের উপর জোর দেন বেশি।
এখন নির্বাচন নিয়েই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈনিক চাপান উতর নতুন মাত্রা পাবে। রাজনৈতিক মাঠ গরম করার একটা নতুন ইসু্য তৈরি হল।
অন্যদিকে নির্বাচনের খবরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। ঘরের ভেতর আলাপ আলোচনার বাইরে মাঠ গরম করার নতুন ইসু্য পাবে তারাও।
তবে বিএনপির শর্তগুলো আওয়ামী লীগ সরকার কতটা গুরুত্ব দেয় সেটাও দেখার বিষয়। এদিক থেকে জনগণ বিএনপির উপর হতাশ। দেশে যে একটা প্রকৃত বিরোধীদলের প্রয়োজন সেটা বিএনপি বিগত ১ যুগ ধরে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতায় না থাকলেও যে একটি দলের রাজনৈতিক দায়িত্ব থাকে সেটা তারা জনগণকে দেখাতে পারেনি- এমনটাই বিশ্লেষকদের ধারনা।
অন্যদিকে গত ১ যুগে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনীতি আর জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের মধ্যে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। আস্থা সৃষ্টিতেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল কাজে লেগেছে।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বিএনপির জন্য কঠিন পরীক্ষা। একটি অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করার অনন্য সুযোগও বটে।