বিদ্যালয়ে ফিরে উচ্ছ্বাসমুখরিত শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ শিক্ষার্থীদের এমন দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা কেউ ভাবেনি। প্রায় ১৮ মাস পর বিদ্যালয়ে গিয়ে বন্ধু ও সহপাঠীদের সান্নিধ্য পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। তারপর শিক্ষকদের সান্নিধ্য, ¯েœহস্পর্শ। সেই অমূল্য দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে তাদের।
করোনা মহামারি এত দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা তৈরি করবে কেউ ভাবেনি। তারপরও সরকারের ঘোষণায় খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই সাথে মহামারির স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা সকলের জন্য অনিবার্য। তাই শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে মাস্কে নাক-মুখ ঢেকে প্রবেশ করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া ান্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ছিল বিশেষ নির্দেশনা।
আজ সকালে ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিয়া নূর বলে, অনেক দিন ক্লাশ রুমে আসতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। বাসায় থাকতে আর ভালো লাগছিল না। একদম অসহ্য হয়ে উঠেছিল সবকিছু। তবে সবকিছু যেন আগের মত হয়ে উঠে আল্লাহর কাছে সেটাই প্রার্থনা করি।
চট্টগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান সাদ বলেন, চেনাজানা বন্ধুদের চেহেরাটাই এর মধ্যে অপরিচিত হয়ে উঠেছিল। এরমধ্যে সকলের মুখ মাস্ক ঢাকা। কিন্তু এটা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অন্তত এভাবে যাতে আমরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া আসা করতে পারি সেটাই চায়। আর সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম। আমরাও সতর্ক আছি।
বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ক্লাসে ফিরেছে, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, সবার মধ্যে একটা সাজ সাজ রব আছে। একই সঙ্গে শত শত মেসেজ, ইমেইল আছে যে (স্কুল) ‘খুলবেন না’।
“আসলে সবদিকেই মতামত আছে, তারপরেও আমাদের খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে।”
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, প্রথমদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বেশি না হলেও একেবারে কম ছিল না।আর সেই আগের মতই বিদ্যালয়গুলোর সামনে অভিভাবকদের ভিড় ছিল।
তবে ভিড় কিছুটা কম হবার কারণও আছে। বিদ্যালয় খোলার নিয়মে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশগুলো ৬ দিনই চলবে। এছাড়া অন্যদের ক্লাশ হবে সপ্তাহে একদিন। এছাড়া প্রাক প্রাথমিকের ক্লাশ আপাতত বন্ধ থাকবে।
বিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯ টি নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেশিওলজি) পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগদান এবং ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার ৭. ০৩ শতাংশ। তবে এটা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হবে, সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। তখন শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারবো বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে রাজধানীর কয়েকটি স্কুল পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।তখন শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারবো বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে রাজধানীর কয়েকটি স্কুল পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনিশিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। তাহলে শিক্ষার্থীরা শতভাগ সুরক্ষায় থাকবে। তিনি অভিভাবকদেরও সন্তানদের সুরক্ষায় সচেতন থাকার জন্য বলেন। তিনি বলেন, নিশ্চিন্তে আপনাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠান। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে নিয়মিত মাস্ক (কাপড়ের) পরিধান করতে হবে, শ্রেণি কক্ষে প্রবেশের আগে প্রত্যেককে তাপমাত্রা পরীক্ষা ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। তাছাড়া প্রতি বেঞ্চে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভেতরে বাইরে চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উপরও জোর দেন।
অন্যদিকে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে করোনা মহামারির বাইরেও শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি ডেঙ্গুর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
Discussion about this post