#খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস
(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন স্মরণে)
চট্টগ্রাম, ১৭ মার্চ, ২০২৫:
‘মুজিববাদের দার্শনিক পটভূমি ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি’ আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মতবাদের দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার একমাত্র দর্শন ও বিজ্ঞান হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ কারো পছন্দ হোক বা না হোক, শোষণহীন সমাজব্যবস্থা তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার আর কোনো দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নেই, অস্ত্রও নেই। সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ ও তাদের অনুরূপ বিশ্ব শোষক শ্রেণি শোষণহীন সমাজব্যবস্থা বা সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে দেশে দেশে সুগভীর চক্রান্ত জাল বিস্তার করে। সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে কখনো নকল সমাজতন্ত্র, কখনো জাল সমাজতন্ত্র কখনো বা ভেজাল সমাজতন্ত্র চালু করবার অপচেষ্টা হয়। শ্রমিক দলের নেতৃত্বে গ্রেট ব্রিটেনে, হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে এবং অনুরূপ সংগঠনের মাধ্যমে অন্যান্য দেশেও সেই নকল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ও তার অবশ্যম্ভাবী ব্যর্থতা আমরা দেখতে পাই। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের নতুন রূপ নয়া-উপনিবেশবাদ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধাদানে বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন কৌশল ও রণনীতি অবলম্বন করছে। এই পর্যায়ে দুর্ভাগ্যক্রমে মাওবাদের ভ্রান্ত নীতির ফলে ক্ষতির সুযোগ তারা কোন কোন দেশে গ্রহণ করছে। মাওবাদের বন্দুকের নলের অতি বিপ্লবী ও হঠকারী থিওরি, সেসব দেশের ঐতিহাসিক বিকাশের নিজস্ব পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি, বাস্তব অবস্থা, শ্রেণি চেতনার স্তরের নিচু মান এবং শ্রেণি সংগঠনের দুর্বলতা প্রভৃতির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদের নেতৃত্বে শোষক শ্রেণি বিশ্বের সেসব দেশের মাওপন্থিগণকে বৃহৎ জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে অনেকাংশে সমর্থ হয়। তার ফলে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই নিরীহ ও বিভ্রান্ত দেশপ্রেমিক ছাত্র-যুবক ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর একাংশ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছেন। মাওবাদ ও বিশ্ব পুঁজিবাদের অনুরূপ শিকারে পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশেরও অনেকে।
শোষিত শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য মেহনতি শ্রেণির নেতৃত্ব ও সংগঠন ছাড়া শোষণহীন সমাজব্যবস্থা বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠা যে সম্ভবপর নয়, সে সম্পর্কে আমরা বিস্তর দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্য পেশ করেছি। কিন্তু যে দেশে শ্রেণি চেতনা ও শ্রেণি সংগ্রামের ভূমিকা মোটামুটিভাবে উল্লেখযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য কারণে বিপ্লবী শ্রেণি সংগঠন কর্তৃক বিপ্লবের নেতৃত্বদানের শক্তি সঞ্চয় ও তার যথাযথ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব দেশে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার বিকল্প পথ ও ব্যবস্থার সুস্পষ্ট নির্দেশ মার্কসবাদ-লেনিনবাদে পাওয়া যায়। এই নির্দেশ বহু-শ্রেণি ভিত্তিক সংগ্রামী জাতীয় ঐক্য গঠন ও তার নেতৃত্বে জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক পথ নির্দেশ। সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদ বিরোধী সেই জাতীয় সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক শ্রেণি, কৃষক শ্রেণি, সংগ্রামী বুদ্ধিজীবী এবং দেশপ্রেমিক বুর্জোয়া ও পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণিসহ অন্যান্য মেহনতি শ্রেণির সংগ্রামী ঐক্য গঠন সংগ্রামে বিজয় লাভের নিশ্চিন্ত গ্যারান্টি। আমরা আরো দেখেছি যে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির পূর্ণ বাস্তবায়ন সে দেশকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের দিকে এগিয়ে নেয়। বিদেশি পুঁজি, বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদের নেতৃত্বে ও সহযোগিতায় পরিচালিত অর্থনৈতিক শোষণ ব্যবস্থা সমূলে ধ্বংস সাধন করে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ সাধন জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। জাতীয় অর্থনীতির সর্বপ্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভূমি ব্যবস্থার আমূল ভূমি সংস্কার ভূমি বিপ্লবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ভূমিহীন কৃষক ও দরিদ্র কৃষকের মধ্যে সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্তকৃত ও তার নিজস্ব খাস জমি দ্রুততার সঙ্গে বিলিবণ্টন অপরিহার্য।
কৃষকের খাজনা মওকুফ এবং পূর্বতন প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের যাবতীয় নির্যাতনকারী আইন ও আদেশ প্রত্যাহারের কথাও স্মরণ রাখা প্রয়োজন। কাজটি সহজ নয়, অতি দুরূহ। যতো সমস্যাসঙ্কুল ও জটিলই হোক, মুজিববাদের লক্ষ্য পথে পৌঁছাতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পথেই অগ্রসর হয়েছেন। সে সমস্যা মোকাবিলা ও তার দ্রুত সমাধান মুজিববাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।
‘মুজিববাদ ও তার বিকাশ ধারা’ আলোচনা এবং বাঙালি জাতির জাতীয় চেতনা, ঐক্য ও সংগ্রামের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে বিচার ও বিশ্লেষণকালে আমরা দেখেছি যে শত-সহস্র বছরের বাঙালির শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাসই তার প্রকৃত ইতিহাস। শ্রেণি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে ঘটেছে তার শ্রেণি চেতনার বিকাশ। আবার নবলব্ধ শ্রেণি চেতনা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে নতুন নতুন শ্রেণি সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে। এ ঘটনা তার অভ্যন্তরীণ ও তার জাতীয় ইতিহাস রূপান্তরিত করেছে বহিঃশক্তি ও বিদেশি স্বার্থের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সংগ্রামরূপে। এই সংগ্রামী চেতনা ও মুজিবের আপসহীন নতুন নতুন শ্রেণি সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে। এ ঘটনা তার অভ্যন্তরীণ ও তার জাতীয় ইতিহাস রূপান্তরিত করেছে বহিঃশক্তি ও বিদেশি স্বার্থের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সংগ্রামরূপে। এই সংগ্রামী চেতনা ও মুজিবের আপসহীন দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত করেছিল বিশ্বের নিকৃষ্ট শ্রেণির শোষণবাদ, শাসকদের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। পাঞ্জাবি শাসক ও শোষক শ্রেণির উগ্র জাতীয়তাবাদ, পাকিস্তানি পুঁজিপতিদের উপনিবেশবাদ এবং সামন্তবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদ, আমলাতন্ত্রবাদ, জঙ্গি সমরবাদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ ও হঠকারী মাওবাদের বিরুদ্ধে তাদের সঙ্ঘবদ্ধ বিশাল শক্তির মোকাবিলায় নিরস্ত্র বাঙালি তার ইতিহাসে অশ্রুতপূর্ব ও অভূতপূর্ব সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। বাঙালির শক্তির মূল উৎস ছিল দুটি। একটি বহু-শ্রেণি ভিত্তিক ও বহু-সংগঠন ভিত্তিক জাতীয় সংগ্রামী ঐক্য। অপরটি ভারত ও তার মহান জনগণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মহান জনগণ এবং তাদের সমর্থনে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নৈতিক সাহায্য ও সহযোগিতায় সেই দুর্জয় শক্তির আন্তর্জাতিক ঐক্য। বিশ্বের শক্তির মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ ও চীনের মাওবাদ, নৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সম্ভাব্য সকল প্রকারের প্রকাশ্য ও গোপন সাহায্য দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে তার ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে এই দুই শক্তির নেতৃত্বে বিশ্ব জনমত সংগ্রহ ও সমাবেশ শুধু নয়, বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বর পশুদের গণহত্যার সপক্ষে সাফাই এবং গণহত্যার পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য মানবতা বিরোধী এক মারাত্মক অভিযান পরিচালনা করে।
বাংলাদেশের পক্ষে সেদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই উদ্যোগের পশ্চাতে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ছাড়াও পৃথিবীর সমগ্র কমিউনিস্ট আন্দোলন এবং বিভিন্ন দেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ব্যক্তি, সংস্থা ও সংগঠন তাদের সকল শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের সমর্থনে। বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য প্রস্তর কঠিন না হয়ে যদি নানান দল ও শ্রেণিতে বিভক্ত হতো, তবে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল বিশ্বের সমর্থন লাভ ছিল সুদূর পরাহত। কারণ সে ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত জাতির মুক্তি সাধন অভ্যন্তরীণ ও সমমর্মী বিশ্ব শক্তির পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। কারণ, পূর্বেই বলেছি বাঙালিকে যে আটটি প্রবল শক্তির বিরুদ্ধে করতে হয়েছে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম, তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভের দুইটি শক্তি-উৎসের প্রধানতম ছিল বহু-শ্রেণি ভিত্তিক তার সংগ্রামী জাতীয় ঐক্য।
মুজিববাদ বাস্তবায়নের পথে সেই জাতীয় ঐক্য যেরূপ প্রধানতম হাতিয়ার, জাতীয় অনৈক্য মুজিববাদের তেমনি অন্যতম প্রধান সমস্যা। রুশ বিপ্লব সফল হয় বলশেভিকদের নেতৃত্বে পাঁচটি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে। জাতি-গঠনের কাজেও তাদের অংশ্রগ্রহণ ছিল কিন্তু ভ্রান্ত নীতির ফলে বলশেভিক ছাড়া অন্যান্য দল ক্রমে ক্রমে সংগ্রামী জনগণের সমর্থন হারায়। মুজিববাদের আদর্শে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিপ্লবও সংহত করার কাজে সংগ্রামী মিত্র ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সহযোগিতা গ্রহণ অনুরূপ গুরুত্বপূর্ণ। মুজিববাদ নির্মাণের প্রশ্নে তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা অপরিহার্য।
‘মুজিববাদের মূল সূত্র’ আলোচনাকালে দেখা গেছে যে, চারটি কর্মসূচির মধ্যে মূলত রয়েছে দুইটি কর্মসূচি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও তার কর্মসূচি বাস্তবায়নেরই অপর নাম। সমাজতন্ত্রকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে গণ্য করতে হবে। অর্থাৎ মুজিববাদের কর্মসূচির প্রথম অংশ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রবাদ- শ্রেণি সংগ্রাম ও শ্রেণি সংগঠন এবং শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য মেহনতি শ্রেণির ঐক্যজোটের মাধ্যমেই সম্ভব বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ বা শোষিত শ্রেণির নেতৃত্বে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, মুজিববাদের সোনার বাংলা নির্মাণ।
মুসলিম লীগ সরকার ও সামারিক একনায়কত্ববাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আওয়ামী লীগ রাজনীতির রণনীতি ও রণকৌশল যেরূপ ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর সে রণনীতি ও রণকৌশলের আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য। দীর্ঘদিনের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় উপবিষ্ট হয়ে দেখতে পান যে জনসমষ্টিকে, তার মধ্যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমুখর মনোভাব অতি তীব্র। একদা বিরোধী-দল সরকারি দলরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই বলে দেশের সকল নাগরিক বিরোধী-মনোভাবের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন সেরূপ চিন্তা করা ঠিক নয়। তদুপরি আমরা কয়েক হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে সন্ধান পাই, বাংলার বিপ্লবী-মানসের পাশাপাশি প্রবাহিত একটি সাম্যবাদী ধারা। কুশাসন, অনাচার, অবিচার, দুর্নীতি ও নৈতিকতার অবনতি প্রভৃতি সামাজিক ব্যাধি বাঙালি মাত্রেই তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের চোখে দেখে থাকেন। বাঙালির স্বতঃপ্রবৃত্ত দৃষ্টি দুর্বলের প্রতি, সবলের প্রতি নয়। একারণে রিকশা চালক কোন পথচারীকে ধাক্কা দিলে জনসাধারণের আক্রোশ তার বিরুদ্ধে। জনতা তখন সমর্থন করে পদব্রজে গমনকারীকে। কিন্তু সেই রিকশা যদি মোটর গাড়ির ধাক্কা খায়, তবে গাড়ির ড্রাইভার বা আরোহীর জীবন-মান নিয়ে হয় টানাটানি। দুর্বলের প্রতি সহানুভূতি এবং সবলের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ বাঙালি চরিত্রের একটি অসাধারণ ও বিপ্লবী দিকনির্দেশ করে। সে
ক্ষোভ বাঙালি চরিত্রের একটি অসাধারণ ও বিপ্লবী দিকনির্দেশ করে। সে কথা সকলের মনে রাখা দরকার।
এরূপ একটি সচেতন জনগোষ্ঠীকে নিয়ে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার পথে সুবিধাও অনেক সমস্যাও অনেক। তবে কতকগুলো বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও প্রখর দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে প্রাধান্য আরোপ করছি সংগঠনের উপর। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও চারিত্রিক রূপান্তর ঘটাতে হবে, নিয়মতান্ত্রিক সংগঠনকে মুজিববাদ গড়ার কাজে বৈপ্লবিক সংগঠনে রূপান্তর ঘটাতে হবে। এ কাজে নিম্নলিখিত বিষয়াবলীর উপর নজর দেওয়া অবশ্য প্রয়োজন।
এক, আওয়ামী লীগ শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, দেশপ্রেমিক বুর্জোয়া ও মেহনতি শ্রেণির দ্বারা সক্রিয়ভাবে সমর্থিত একটি গণসংগঠন, শ্রেণি সংগঠন নয়। গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশের গণ-রাজনৈতিক সংগঠন যেরূপ আপসকামী ও অ-বিপ্লবী পথে পরিচালিত হয়, বাঙালি সমাজের মধ্যবর্তী স্তর পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ সংগঠনও অনুরূপ গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পথে চলে এসেছে। পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণি সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজের মধ্যবর্তী স্তর বিধায় তার নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবৃন্দের পক্ষে উচ্চাভিলাষী ও ভাগ্যান্বেষী হওয়া খুবই স্বাভাবিক। পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণির সেই চরিত্র সকল দেশেই এক ও অভিন্ন। মুজিববাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য সোনার বাংলা বা শোষণহীন সমাজব্যবস্থা বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠা ভাগ্যান্বেষী ও সুবিধাবাদী পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণির হাতে ছেড়ে দেওয়া চলে না। সমাজতান্ত্রিক সমাজ একটি নিঃস্বার্থ ও শোষণহীন সমাজ। যারা শোষিত- দেশে সেই শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য মেহনতি মানুষকে সংগঠিত ও সঙ্ঘবদ্ধ করে তাদের হাতেই তুলে দিতে হবে মুজিববাদী দর্শন বাস্তবায়নের ব্যাপারটি। শোষকগণ কখনও বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দর্শন মুজিববাদের প্রতি নিষ্ঠা ও আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে না। মুখে বললেও ষোল আনা বিশ্বাস করে তাদের হাতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উৎপাদন যন্ত্র ছেড়ে দেওয়া ক্ষতিকর হওয়াই স্বাভাবিক।
দুই, দেশের সকল মেহনতি শ্রেণির রাজনৈতিক চেতনার স্তর উন্নয়ন সাধনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে মুজিববাদী এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদী দর্শন ও বিজ্ঞান পাঠের ব্যাপক আয়োজন ও চর্চার ক্ষেত্র বিকাশ ও প্রসার একান্ত প্রয়োজন। অবিলম্বে স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে মুজিববাদ ও মার্কসবাদ-লেনিনবাদ অন্তর্ভুক্ত করা বিশেষ জরুরি।
মুসলিম লীগ ও সামরিক একনায়কত্ববাদের মতো অবিবেচক শাসক ও শোষক সরকারের বিরোধিতা যেরূপ সহজ ছিল বৈজ্ঞানিক সমাজবাদ নির্মাণ
লেনিনবাদ অন্তভুক্ত করা বিশেষ জরুরি।
মুসলিম লীগ ও সামরিক একনায়কত্ববাদের মতো অবিবেচক শাসক ও শোষক সরকারের বিরোধিতা যেরূপ সহজ ছিল, বৈজ্ঞানিক সমাজবাদ নির্মাণ ঠিক ততোটা কঠিন। থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস-বিপ্লবী সংগঠন গড়ার এই নীতির ভিত্তিতে বহু-শ্রেণির মিলিত জাতীয় সংগঠন আওয়ামী লীগকে বৈপ্লবিক চিন্তাধারায় রূপান্তর ঘটানো সম্ভব। সেই সাথে সমান কিংবা অধিক গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন শ্রমিক, কৃষক ও অন্যান্য মেহনতি শ্রেণির সংগ্রামী শ্রেণি সংগঠন গড়ে তোলার প্রশ্নে। সমাজতান্ত্রিক সরকার শোষিত শ্রেণির নিজস্ব সরকার। কাজেই যতদিন পর্যন্ত শোষিত শ্রেণিসমূহ মুজিববাদী
ও মার্কসবাদী লেনিনবাদী দর্শন-বিজ্ঞানের হাতিয়ার ধারণে সম্যক তৈরি না হচ্ছে, ততদিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তাও করা যায় না। মেহনতি শ্রেণির সংগঠন ও তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং সংগ্রাম ও তার শ্রেণি চেতনা বিকাশের সংগঠন ছাড়া কি শিল্পোৎপাদন, কি কৃষি উৎপাদন, কি একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিকরূপে রাষ্ট্রীয় দপ্তর পরিচালনা কোনোটাই যথাযথ রূপে চলতে পারে না।
তিন, বিশ্ব পুঁজিবাদ একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সংগঠন। তার সদর দপ্তর লন্ডন, প্যারিস, ওয়াশিংটন, বন, টোকিও, নিউইয়র্ক যেখানেই অবস্থান করুক তার পরিচালনার প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন। পুঁজিবাদী সংগঠনের একমাত্র লক্ষ্য ও আদর্শ মুনাফা এবং মুনাফার স্বার্থে শাসন ও শোষণ। কাজেই তার মুনাফা ও শাসন-শোষণ শুধু জাতীয় নয়, অধিকতর আন্তর্জাতিক।
সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন জাতীয় নয় আন্তর্জাতিক। সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতাবাদ শাসিত, শোষিত ও নিপীড়িত জনগণের আন্তর্জাতিককতাবাদ-শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি শ্রেণির শোষণ মুক্তির এবং শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আন্তর্জাতিকতাবাদ। বিশ্ব পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক দর্শন একটি গণতান্ত্রিক ও বৈপ্লবিক আন্তর্জাতিকতাবাদ। সমাজতন্ত্রের এই মৌল দর্শন ও বিজ্ঞান স্মরণে রেখে আওয়ামী লীগ সংগঠনের বৈপ্লবিক কর্মসূচি, কর্মধারা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রয়োজন সোভিয়েত ইউনিয়ন, উত্তর ভিয়েতনাম ও কিউবাসহ সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সকল দেশের বাস্তব, বৈজ্ঞানিক ও বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে ব্যাপক ভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, মৈত্রী, সাহায্য ও সহযোগিতামূলক চুক্তি সম্পাদন ও তার বাস্তবায়ন। কারণ বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের খাদ্যাভাব ও অন্যান্য দুর্বলতার সুযোগে বিশ্ব পুঁজিবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদ শুধু যে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রগতিই ব্যাহত করার চেষ্টায় থাকে তাই নয়, তারা সকল শক্তির নিয়োগে ষড়যন্ত্র করে দেশটিকে একটি গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে। তার জবাবে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রগতির বিকাশ ধারা অপ্রতিহত রাখতে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োজন সকল মেহনতি ও সংগ্রামী মানুষের ঐক্য ও সংহতি, তেমনি প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মৈত্রী, শান্তি ও সহযোগিতার। কারণ বিশ্ব পুঁজিবাদ কিংবা সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদের সঙ্গে গোপনে বা প্রকাশ্যে গাঁটছড়া বেঁধে গণতন্ত্র ও গণহত্যা চলে, কিন্তু শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় না। সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভবপর নয় সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রবর্গের সঙ্গে অকুণ্ঠ মৈত্রী ও সহযোগিতার মনোভাব পোষণ না করে। কারণ বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে শান্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রধানতম মিত্র এবং প্রহরী যে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব, সে কথাটি স্মরণে রাখা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক ও মুজিববাদীর অবশ্য কর্তব্য।
মুজিববাদ নির্মাণে আরো একটি জটিল সমস্যা দেশপ্রেমিকদের সম্মুখে সমুপস্থিত। সে সমস্যা স্বাধীন বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা। দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নেবার প্রধানতম শর্ত হিসেবে নিরঙ্কুশ শান্তি এবং সমগ্র দেশপ্রেমিক জনগণের মনে আস্থা সৃষ্টির সমস্যা, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুনিশ্চিত মনোভাব ও আশাবাদ তৈরির সমস্যা।
বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের অব্যবহিত পরে সমগ্র দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কিছুসংখ্যক সমাজ বিরোধী ও দুষ্কৃতকারী প্রতিনিয়ত হুমকি রূপে দেখা দেয়। রাশিয়ার বলশেভিকদের নেতৃত্বে এবং মেনশেভিক ও বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী প্রভৃতি আরো তিন-চারটি সংগঠনের সমবেত ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিপ্লব অনুষ্ঠিত হলেও বিপ্লবের পরে লুণ্ঠন ও নানাবিধ সামাজিক দুর্নীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। সমাজ বিরোধী, বিপ্লব বিরোধী এবং সমাজতন্ত্র বিরোধীদের মধ্যে কোনো কোন ক্ষেত্রে মেনশেভিক ও বিপ্লবী সমাজতন্ত্রবাদের কর্মী ও নেতৃবৃন্দও ধরা পড়েন। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল দেশের এমন ধরনের নাগরিক, যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোন দিন সংযুক্ত ছিল না। পেশাদার গুণ্ডা, বদমায়েশ, ডাকাত ও খুনিরা সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিবিপ্লবী ধনিক শ্রেণির সাহায্য-সহযোগিতা এবং উস্কানিতে লুণ্ঠন ও দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। কিন্তু সমাজ বিরোধী ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিরোধী এরূপ জঘন্য কাজের সঙ্গে সে দেশের কোথাও সরকারি কর্মচারী কিংবা বিপ্লবের মূল নেতা বলশেভিকদের দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের বিপ্লবের নেতৃত্ব ছিল যেহেতু আওয়ামী লীগের হাতে, কাজেই দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদেরকে এ সম্পর্কে রুশদেশের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গ্রহণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। কথায় আছে- নেতা যদি পাতা ছেঁড়েন, কর্মীরা উপড়িয়ে ফেলেন গাছটি। সে কথা ভুলে গেলে সরকারি কর্মচারি ও দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিবে। বাংলাদেশের বিশ্ব পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদ নানান কারণে অতিশয় তৎপর। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। এবং সে কাজ দুষ্কৃতকারী দেশদ্রোহীরা তাদের রেডিমেড ও সহজলভ্য হাতিয়ার।
অতএব মুজিববাদীরা সাবধান!
#লেখক:খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসের জন্ম সিরাজগঞ্জে ১৯২৪ সালের ৩রা মে। প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক নেতা শাহ শরীফ শাহ বরকত আল বোগদাদী বংশের সপ্তম পুরুষ। পিতা খোন্দকার ওছিউজ্জামান। শিক্ষাজীবন গৌরবধন্য। প্রাইমারি, মাধ্যমিক ম্যাট্রিক এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগে ১ম পর্বে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে চৌ-এন-লাই স্কলারশিপ লাভ।
লেখকের রাজনৈতিক জীবন মূলত শুরু হয় ১৯৪১ সালে ‘ভারত রক্ষা আইনে’ গ্রেফতারের সময় থেকে। ১৯৪৫ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। এই সময় তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। দেশ বিভাগের পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘যুগের দাবী’র সম্পাদনা ও মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দেশের ডাক’ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ছিলেন।
দেশ বিভাগের পর ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, পূর্ব পাকিস্তানের যুবলীগ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন, যুদ্ধবিরোধী বিশ্বশান্তি আন্দোলনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য এবং প্রথম একুশের কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ গোপনে প্রকাশের পুরো দায়িত্ব পালন করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’, ‘কতো ছবি কতো গান’, ‘মুজিববাদ’ পাঠকমহলে আলোড়ন সৃষ্টিকারী। ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’ গ্রন্থখানি আইয়ুর দশকে দুইবার বাজেয়াপ্ত হয়। লেখক সামরিক আইনে নির্যাতন ভোগ করেন এবং কারাগারে বন্দি হন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইশারা রয়েছে এই গ্রন্থখানিতে। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা রেজিস্ট্যান্স কমিটির সদস্য। বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯৫ সালের ১৭ই নভেম্বর তিনি বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
Discussion about this post