চট্টগ্রাম, ১২ জুলাই, ২০২৫:
যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই- এমন অঙ্গীকারের কথা জানালেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণে সর্ব বিষয়ে সেরা রিক্রুট নির্বাচিত হওয়া সাইফ মিয়া।
তিনি বলেন, “হাই স্কুলে পড়াকালীন দেশের জন্য কিছু করার একটি বাসনা আমার ভেতর কাজ করতো। যতই বড় হচ্ছি তা প্রবল হতে থাকে। আমার আকাঙ্ক্ষাটি মা-বাবাকে জানালে তারা আমাকে উৎসাহ দেন ; দেশের জন্য কাজ করতে। তবে ইচ্ছে থাকলে তো হবে না, এজন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। তাই চিন্তা করলাম কিভাবে এ কাজ করা যায়, খোঁজ নিলাম বিভিন্ন জায়াগায়। পরে জানতে পারলাম বিজিবিতে যোগ দিলেই সরাসরি দেশের জন্য অবদান রাখা সম্ভব হবে। তাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিজিবিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে আমার আশা পূর্ণ হলো।
সাইফ মিয়ার আশা পূর্ণ হবার যাত্রায়- তিনি বিজিবির ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে সেরা রিক্রুট নির্বাচিত হয়েছেন। এতে তার অঙ্গীকার পূরণের আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় হল। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কোম্পানির অধীনে থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
তিনি বলেন,এ স্বীকৃতি আমার কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতার ফসল। এ সাফল্যের পেছনে বেশি অবদান আমার মা-বাবার। প্রশিক্ষক এবং সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা তো ছিলই।
সাইফ মিয়া ১০ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তার স্বপ্নগুলো তুলে ধরেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নিকট থেকে সেরা রিক্রুটের পুরস্কার গ্রহণ করেন।
দেশ মাতৃকার প্রতি দায়িত্ব পালনে তিনি দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করায় আনন্দিত ও গর্বিত বলে জানান। বলেন, “এ স্বীকৃতি আমার কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতার ফসল। ”
তিনি বলেন, “এ প্রশিক্ষণ একটি কঠিন প্রক্রিয়া। এখানে উত্তীর্ণ হতে হলে অনেক ধাপ অতিক্রম করে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে হয়। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি। সব বাধা পেরিয়ে ৬৯৪ জন রিক্রুটদের মধ্য থেকে সেরা ও চৌকস রিক্রুট নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য খুবই আনন্দের। ”
তিনি বলেন, “কুচকাওয়াজে সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থা সর্বোপরি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশ রক্ষার শপথ নিয়েছি। সততা, সত্যবাদিতা, আনুগত্যতা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে বিজিবিতে আমি অবদান রাখতে চাই।”
১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শুরু হয়। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে ৬৫৮ পুরুষ ও ৩৬ জন নারীসহ মোট ৬৯৪ জন রিক্রুট সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করেন সাইফ মিয়া সহ তারা সকলে।
সাধারণ কৃষকের সন্তান সাইফ মিয়া। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার সোনাকান্দা গ্রামের সাহেদাগোপ এলাকার কৃষক মো. জামাল মিয়া তার পিতা। তার মা মনোয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। জামাল-মনোয়ারা দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাইফ মিয়া দ্বিতীয়।
সাইফ ২০২১ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল কে. কে. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে শ্রীকাইল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত।