চট্টগ্রাম,৭ জুলাই, ২০২৫:
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে দেশজুড়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনার মধ্যে আজ থেকে এনসিটি পরিচালনা শুরু করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। গতকাল রাত ১২টার পর থেকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় তারা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিগত ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হবার সাথে সাথে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করেছি। ড্রাইডক কাজ শুরু করেছে গতকাল রাত বারটা থেকে। ওখানকার সিস্টেম যেটা ছিল, অপারেশনাল প্রক্রিয়া- যেটা ছিল সবকিছুই আগের মতই আছে। এবং সাইফ পাওয়ার টেকের যে স্টাফ- অফিসিয়াল যারা ছিল তারা বর্তমানে ড্রাইডকের কর্মচারী- কর্মকর্তা। সে হিসাবে বর্তমানে আমাদের সিস্টেমে কোনো চেঞ্জ আসেনি। আমাদের কার্যপ্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো চেঞ্জ আসে নাই। আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমের কোনো চেঞ্জ আসে নাই। সবকিছু যথারীতি চলছে এবং স্মুথলি রান করছে। এক্ষেত্রে বন্দরের পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই, বন্দর ব্যবহারকারীদেরও কোনো অসুবিধা নেই।”
তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ কন্টেইনার হ্যান্ডিলিং হয়ে থাকে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের মাধ্যমে। ২০০৭ সালে ৪৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সাল থেকে এটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিল সাইফ পাওয়ার টেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সাথে চুক্তি শেষ হবার শেষ পর্যায়ে এটি বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালনার ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে আলোচনা উঠে। কিন্তু সরকার সর্বশেষ সিদ্ধান্তে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে মোট কন্টেইনার হ্যান্ডিলিংয়ের ৪৪ শতাংশ এনসিটির টার্মিনালে সাইফ পাওয়ার টেকের পরিচালনায় হ্যান্ডিলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল হল -চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (কনটেইনার ও বাল্ক-জিসিবি) এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। যেখানে গত অর্থ বছরে বন্দরের ৩২ লাখ টিইউএস কন্টেইনারের মধ্যে ৪৪ শতাংশ পরিচালনা করেছে।
কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা— দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) দায়িত্ব দেওয়ার কথা ছিল। একইভাবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিতে চেয়েছিল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও।
কিন্তু রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলনে বাধার কারণে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
যে কারণে আজ থেকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে। এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত একটি সামরিক জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সরকারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর ড্রাইডকের সঙ্গে এনসিটি পরিচালনার চুক্তির বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়। সে অনুযায়ী আজ থেকে ছয়মাসের জন্য এনসিটি পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম ড্রাইডক।
নতুন দায়িত্বে এনসিটির কন্টেইনার অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আগের মতই নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের সকল সেবা ও সুযোগ-সুবিধা আমদানি-রপ্তানিকারক সহ সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীদের পাওয়ার পাশাপাশি যে কোনো সমস্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “ওভারঅল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটা ম্যানেজমেন্ট তো এখানে আছেই। কারো কোনো রকম অসুবিধা হলে এখান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টেকওভার করবে। কোনো অসুবিধা নেই।”
তিনি বলেন, “ড্রাইডকেও সকলে প্রফেশনাল লোক। তারা ওভারঅল টপ ম্যানেজমেন্ট হিসাবে থাকবে। সুতরাং কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না।”