চট্টগ্রাম, ১৫ জুলাই ২০২৫:
২০২৪ সালের জুলাই মাস। দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশে এক সাহসী প্রতিরোধের গল্প রচনা হয়েছিল ২০২৪ সালে। যখনআওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রদের চাকরিতে কোটা বিলুপ্তির দাবি মানতে নানা তালবাহানা শুরু করে। গত বছরের জুলাইয়ের ৫ তারিখের পর যত দিন গড়িয়েছে তত অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। আমরা এখন এক বছর পেরিয়ে এসেছি, কিন্তু “জুলাই বিপ্লব” শব্দটি আজও নতুন করে আলোড়িত করে—উদ্দীপনার মতো, প্রেরণার আর এক নাম।
অভ্যুত্থান নাকি বিপ্লব না বিদ্রোহ?
‘বিপ্লব’ শব্দটি অত সহজে ব্যবহার করার নয়। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যা ঘটেছিল, তাকে শুধুই একটি আন্দোলন, শুধুই একটি রাজনৈতিক ঘটনাবলি বলে ক্ষুদ্র করে দেখা যায় না। সেসময় মানুষ পথে নেমেছিল শুধুমাত্র একটি দাবি নিয়ে নয়—একটি ভেঙে পড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পুনঃগঠনের আকাঙ্ক্ষা থেকে।
যে দাবি ছিল গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের অবসান, ভোটাধিকারের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের স্বচ্ছতা, বিচারহীনতার অবসান এবং সর্বোপরি—রাজনীতিকে জনগণের ভাষায় ফেরত আনার চেষ্টা।
তাই কেউ বলেছিলেন, “এটা ছিল একটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, কেউ বলেছেন ছাত্র-জনতার বিপ্লব। এ বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তার নিজস্ব ভোটাধিকার, মর্যাদা এবং নাগরিকতার পুনর্দাবি করেছিল।
এক বছরে কী পরিবর্তন?
জুলাই বিপ্লবের এক বছর পরেও আমরা অনেক বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হইনি। বরং দেখা যাচ্ছে, পুরনো কাঠামো একটু চিড় ধরেছে মাত্র।
আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে কিছু গোষ্ঠি। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা সমস্যাসঙ্কুল মনে হচ্ছে।
তবে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংস্কারে প্রচেষ্টা চলছে। সরকার ও প্রশাসনের আরও জবাবদিহিতার জন্য অন্তর্ী কালীন সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সংস্কার নিয়ে নানা রাজনৈতিক মত বিরোধের মধ্যেও সংস্কার কার্ক্রম চলমান আছে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করা হচ্ছে। সংবিধান ও প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংস্কার করা হচ্ছে।
কিন্তু জুলাই বিপ্লব থেকে জনগণের লক্ষ্র অর্ন দুরূহ হলেও – সবচেয়ে বড় অর্জন— মানুষের মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস এসেছে। মানুষ এখন মুখ বন্ধ করে থাকছে না, কথা বলছে, সামাজিক মাধ্যম হোক বা গ্রামের চায়ের দোকানে।
বিপ্লবের উত্তরাধিকার কার হাতে?
একটি বিপ্লব তখনই সফল হয়, যখন তা জনগণের হাতে থাকা রাজনীতিকে নতুন ভাষা, নতুন দিশা দিতে পারে। কিন্তু একবছর পরে আমরা দেখি—জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে যারা উঠে এসেছিলেন, তারা অনেকেই দিশাহীন অথবা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জর্জরিত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পক চিড় ধরেছে। কিন্তু সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পক ও বিশ্বাসের অভাব। দিকনির্দেশনার অভাবও স্পষ্ট।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেকেই ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করে আবার পুরনো রাজনীতির অংশ হয়ে যাচ্ছেন।
যে প্রশ্নগুলো থেকে যায়:
এ এক বছরে সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন:
১. জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া রাজনীতিতে কী সত্যিই বদল আসে?
২. ভোটের চেয়ে বড় বিষয় কীভাবে হয় জবাবদিহিতার সংস্কৃতি?
৩. শুধু প্রতিবাদ নয়—পথপ্রদর্শন করার রাজনীতি কোথায়?
বিপ্লব কখনো শেষ হয় না। জুলাই ২০২৪-এর যে পরিবর্ন আমরা পেয়েছিলাম, তা আমাদের জানান দিয়েছিল—বিপ্লব মানে কেবল রাজপথের আগুন নয়, েআন্দোলন, সংগ্রাম, শ্লোগান নয়বিপ্লব মানে নাগরিকের মধ্যে পরিবর্তনের শুরু।
তবে একটা বিষয় আজ সামনে এসেছে- যারা ভেবেছিল ‘এটা কিছুই বদলাবে না’—তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন, কারণ মানুষ এখন জানে— নিজের অধিকার আদায়ের জন্য গলার আওয়াজ তুলতে হয়। প্রয়োজনে রক্ত দিতে হয়। জীবন বিসর্ন দিতে হয়। জুলাই বিপ্লবে সেই জীবন বিসর্নকারী শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না।
তাই গলার আওয়াজ যতদিন থাকবে, ততদিন জুলাই বিপ্লবও বেঁচে থাকবে। তরুণ প্রজন্ম প্রস্তুত থাকবে রাজপথে লড়াই-সংগ্রামের জন্য। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে নতুন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে দিবে। লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে ফ্যাসিবাদ।