চট্টগ্রাম, ১৪ জুন, ২০২৫:
গত শুক্রবার ভোররাতে অতর্কিতে ইসরাইল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করে ইরানের উপর। ইসরাইলের এ বিমান হামলায় ইরানের ১২ জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। শনিবার ইসরাইল দাবি করেছে ৯ জন। তারা হামলায় নিহত বিজ্ঞানীদের নামের তালিকাও প্রকাশ করে।
পরের হামলায় ইরান আরো তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হওয়ার খবর প্রচার করে। ২০২০ সালে হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের জনক মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করে ইসরাইল।
শুধু পরমাণু বিজ্ঞানী নয়, শুক্রবার ভোরে ইসরাইলি হামলায় ডজন খানেক সামরিক কমান্ডার নিহত হন। এতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান, মূলধারার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং আইআরজিসির বিমান বাহিনী প্রধানের মৃত্যু হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মোট ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে। যেখানে শিশু সহ বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে।
কিন্তু কেন ইসরাইলের এমন হামলা:
শুক্রবার ভোররাতের হামলায় ইরানের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে ইসরাইল। নজিরবিহীন এ হামলায় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নয়, সে দেশের পরমাণু কর্মসূচির স্থাপনা, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করে হামলা চালায়।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা সফলভাবে ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের একেবারে কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনেছে। তাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা কেউই নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না।
যে কারণে ইসরাইলের চেয়ে সামরিকভাবে শক্তিশালী ইরান দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ইরান যে শক্তি নিয়ে পাল্টা আঘাত করবে তা কমে গেছে।
মূলত ইসরাইলের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা আর আইআরজইসির ঘাঁটি। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কিত পশ্চিমারা। তাদের ধারণা ইরান গোপনে ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ গড়ে তুলছে। যার মানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি এবং দ্রুত তা মোতায়েন করার ক্ষমতা।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে-ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি ধীর করতে এবং তা পিছিয়ে দিতে চেষ্টা করছিল ইসরাইল। এজন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে মার্কিন ও ইসরাইলি গোয়েন্দারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সাইবার হামলা চালিয়েছিল।
যদিও ইরান বলে আসছিল তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক প্রয়োজনে। এটার উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।
এরমধ্যে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত যে চুক্তি ছিল সেটার ষষ্ঠ বৈঠক ছিল ইরানের সাথে রবিবার। কিন্তু ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বিশ্বাস রাখতে পারছে না ইসরাইল।
বিবিসি লিখেছে- ঠিক যেমন ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি শান্তি আলোচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাতের অভিযোগ উঠেছে, ইরানের সাথেও একই আলোচনা হতে পারে বলে আশঙ্খা করছে ইসরাইল। রোববার মাস্কাটে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েল এই সব আলোচনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না’।
অন্যদিকে ইরানকে আঘাত করার জন্য ইসরাইলের জন্য এটাই মোক্ষম সময়। কারণ গত অক্টোবরে ইহরাইলি হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বড় ক্ষতির মুখোমুখি হয়। লেবানন, সিরিয়া ও গাজায় ইরানের মিত্রদের পরাজয় হয়েছে আগে।
বিবিসি এক বিশ্লেষণে লিখেছে- ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (ইসিএফআর) সিনিয়র পলিসি ফেলো এলি গেরানমায়েহ বলেছেন, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে নষ্ট করার জন্যই ইরানে রাতভর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।”
“এই বিষয়টা স্পষ্ট যে তাদের (হামলার) টাইমিং এবং বড় আকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আলোচনাকে পুরোপুরিভাবে লাইনচ্যুত করা।”