চট্টগ্রাম,২৮ ডিসেম্বর, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার বেলা ১১টায় বহু প্রতীক্ষিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।২০১৬ সালে ২৬ জুন এ প্রকল্পের মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালের আজ উদ্বোধন করা হয়েছে মেট্রো।বেলা ১১টায় উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ বৃহৎ অবকাঠামো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রায় জনগণের মাথার মুকুটে অহংকারের আরও একটি পালক যোগ হয়েছে।
তিনি বলেন, তার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আর মেট্রো রেল চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ বৈদ্যুতিক, দূর নিয়ন্ত্রিত এবং দ্রুততম যোগাযোগের যুগে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ। প্রথমত, মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করলো। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুত গতি সম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করলো। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনায় অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা থাকবে না। এটি পরিচালনায় আমরা নিজেরাই স্মার্ট নাগরিক তৈরি করবো। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দিনটি উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকেট, ৫০ টাকার ম্মরক নোট, খাম এবং ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী টিকেট কাউন্টার থেকে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ইটিকেট ক্রয় করে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হন। তাঁর বোন শেখ রেহানাও টিকিট ক্রয় করে প্রথম যাত্রায় তাঁর সঙ্গী হন। তিনি স্টেশনে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মেট্রোরেলের টিকিট কিনে প্রথম যাত্রী হিসেবে ট্রেনটিতে ভ্রমণ করেছেন।দেশের প্রথম মেট্রোট্রেনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও আরো প্রায় ২০০ যাত্রীসহ আজ দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে উত্তর উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
মেট্রো রেলের জন্য জন্য ঢাকাবাসীও অনেক অপেক্ষায় ছিলেন। বিশেষ করে মিরপুর ও উত্তরার বাসিন্দাদের নির্মাণকালীন নানা ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে ।কাল বৃহস্পতিবার শুরু হবে বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহন। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রো রেল। যাত্রাপথে পৌনে ১২ কিলোমিটার উড়াল-রেলপথে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলে আসবে মানুষ।
আজ ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর সুধী সমাবেশের মাধ্যমে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের মাঠে মেট্রোরেলের উদ্বোধনের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।। ২০০৫ সালে রাজধানীর জন্য তৈরি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় মেট্রোরেলের কথা বলা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন ডিটিসিবি। ২০ বছর মেয়াদি (২০০৪-২০২৪) ওই পরিকল্পনায় মেট্রোরেল, বাসভিত্তিক উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা-বিআরটিসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ আসে। জাইকার কাছ থেকে কারিগরি ও অর্থায়নের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১১ সালে ‘ম্যাস র্যাতপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। পরের বছরের ১৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাপান সরকারের আর বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিলে থেকে যোগান দেওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার সময় ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালে মধ্যে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। গত ১৯ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ দেড় বছর এবং প্রায় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতার মেট্রোরেল পুরোদমে চলবে আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে। যাতায়াত করতে পারবেন ৭ স্টেশনের সব যাত্রীরা। ভোর থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। তবে আপাতত ২০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন। এই ট্রেন চলবে বিদ্যুতে।
টিকিট কাটার জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। ভাড়ার ক্ষেত্রেও এরকম সুবিধা পাওয়া যাবে।
মেট্রোরেল পুরোদমে চালুর পর ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলা মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। আর এক দিনে পরিবহন করতে পারবে ৫ লাখ যাত্রী।
ছয়টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবারে মাত্র ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশন থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
মেট্রোতে নারী যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা শুধু নারীদের জন্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাইলে নারীরা অন্য যেকোনো কোচেই যাতায়াত করতে পারবেন।
এছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাতে ছোট শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সুবিধার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে।
গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক নারী যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলের কোচের ভেতরে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। আলাদা আসন থাকছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও।
এছাড়া রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ, টিকিট সংগ্রহ, সিঁড়ি ব্যবহার করে প্লাটফর্মে পৌঁছানো পর্যন্ত আলাদা ব্যবস্থা হিসেবে লিফট রাখা হয়েছে। ট্রেন শুধু বিদ্যুতের গতিতে শুধু চলবে না, তার আনুষঙ্গিক সবই প্রায় প্রযুক্তি নির্ভর।
প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথ যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম দিকে সকাল ও বিকালে মোট চার ঘণ্টা করে যাত্রী পরিবহন করবে মেট্রোরেল।
মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বর্তমানে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত চালু হচ্ছে। এ অংশের ভাড়া হবে ৬০ টাকা, সময় লাগবে ২০ মিনিট।
Discussion about this post