চট্টগ্রাম,১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩:
সাগর এবং নদী ভাঙ্গন রোধে বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র বিজ্ঞান ক্লাব-‘সাগর সন্ধানী’র ক্ষুদে গবেষকরা উদ্ভাবন করেছে ‘টেকসই ইন্টারলকড রিং বেড়ি বাঁধ’। গত ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি’ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম গবেষণাগারে আয়োজিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা-২০২৩ এ এই মডেলটি প্রদর্শিত হয়।
বিপুল সংখ্যক উৎসুক দর্শক এই স্বল্প খরচের অথচ দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রকৃতি বান্ধব বেড়িবাঁধটি সম্পর্কে জানতে ভিড় জমান। এই বেড়ি বাঁধটির বৈশিষ্ট্য হলো- এটির মূল উপাদান পাঁচফুট উচ্চতা এবং সাড়ে তিনফুট ব্যাসের সিমেন্ট নির্মিত রিং। দেখতে অনেকটা কাঁচা টয়লেট এর রিংয়ের মতো।
রিংগুলো পরস্পর পরস্পরের সাথে ছিদ্র পথে ধাতব তার দিয়ে বাঁধা। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় এই রিংগুলো সারি সারি বসিয়ে দেয়া হলে এগুলো অতি সহজেই কাদা মাটির গভীরে প্রবেশ করে একটি শক্ত এবং অনড় রিং এর দেয়াল তৈরি করে। অন্যদিকে প্রতিটি রিংয়ের ভেতর লবণ সহিষ্ণু বৃক্ষ যেমন- সুন্দরী, গরান, কেওড়া, ছইলা, করমজা, কেওড়া ইত্যাদি রোপণ করা হলে এটি একটি সবুজ প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবেও কাজ করবে। পশু-পাখির আশ্রয়স্থল ছাড়াও বন্যা- সাইক্লোন- জলোচ্ছাসে এটি প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করবে।
বর্তমানে সাগর-নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যবহৃত হচ্ছে কোথাও সিমেন্ট নির্মিত বোল্ডার-ব্লক, কোথাও বালুভর্তি জিও ব্যাগ, আবার কোথাও বালি ভর্তি চটের বস্তা। যেখানে চার ঘনফুট প্রতিটি বোন্ডার তৈরি এবং যথাস্থানে বসাতে খরচ হয় ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা, সেখানে প্রতিটি সিমেন্টের রিং তৈরি এবং যথাস্থানে বসাতে খরচ হবে মাত্র এক হাজার টাকা। তাছাড়া রিংগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে যেকোন স্থানে সহজেই নেওয়া যায়। কিন্তু অত্যাধিক ভারী হওয়ায় বোল্ডার-ব্লক সহজে নাড়া-চাড়া করা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। অধিকন্তু বোল্ডারের তলদেশ কোন কিছুর সাথে আঁকড়ে না থাকায় সাগরের ঢেউ এগুলোর তলদেশকে পিচ্ছিল করে তোলে এবং এগুলো এক পর্যায়ে ঢালু সৈকতের গভীরে চলে যায়। অন্যদিকে রিংগুলো সহজে সৈকতের মাটিতে গেঁথে যাওয়ায় এবং শত শত রিং পরস্পরের সাথে আবদ্ধ থাকায় এগুলোকে একসাথে স্থানচ্যূত করা দুরুহ। তাছাড়া রিং গোলাকৃতির হওয়ায় সাগরের ঢেউ রিংগুলোর গায়ে লেগে দু’ভাগ হয়ে শক্তি হারায় এবং ঢেউয়ের আঘাত দুর্বল হয়ে যায়। অপরদিকে বোল্ডার- জিওব্যাগ ঢেউয়ের ক্রমাগত আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে যায়। রিংগুলোতে যদি পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ রোপণ করা যায়, তাহলে অতি সহজেই প্রতিটি রিং বেুড়বাঁধ এক একটি প্রকৃতিবান্ধব সবুজ প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করবে। স্বল্প ব্যয়ে নির্মিত, দীর্ঘস্থায়ী এই ইন্টারলক্ড বেড়িবাঁধ দেশের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করার পাশাপাশি উপকূল অঞ্চলের জানমাল রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং সবুজ বনায়নও গড়ে তুলবে।
প্রদর্শনীতে মডেলটি উপস্থাপন করেন সাগর সন্ধানী-সমুদ্র বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য ও ক্ষুদে গবেষক সাফিউল বিদা তাজবিহ, তানভীর, তাহসিন আহমদ ছিদ্দিকী, জেসমিন এবং ইউ এইচ রিমা।
মডেলটি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা- জাইকা এবং ডিএফআইডি এর বরাবরে ও উপস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্র: সাগর সন্ধানী’র নিজস্ব লেখা
Discussion about this post