চট্টগ্রাম, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২:
বরগুনার পাথরঘাটার গভীর সাগরের বয়া নামক এলাকায় দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের আক্রমণে ৯ জন জেলে নিখোঁজের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে ৪ জনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা জেলেদের হামলা ও বোটে ডাকাতির সাথে জড়িত বলে র্যাব জানায়। যাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বমোট ১৮ থেকে ২০জন ওই ডাকাত দলে ছিল।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বরগুনা জেলা মৎস্যজীবীর ১৮ জন জেলে একটি ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে ওইদিন দিবাগত রাতে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ২৫-৩০ জনের একটি জলদস্যুবাহী দ্রুতগামী ট্রলার জেলেদের ট্রলারের পিছনে ধাক্কা দেয় ও গুলি ছুড়ে ট্রলারে উঠে ট্রলারে থাকা ১৮ জন জেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ত ৯ জন জেলে গভীর সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
অন্যদিকে ট্রলারে জলদস্যুদের হামলায় আহত ৯ জন জেলেকে উদ্ধার করে গত শনিবার সন্ধ্যায় পাথরঘাটায় এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজন’কে গত শনিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং বাকিদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ঘটনার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দেওয়া নিখোঁজ বরগুনার ৯ জন জেলের মধ্যে ৪ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং দুপুরে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে জানা গেছে।
ঘটনার পর জলদস্যু ও ডাকাত দলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বোটে দস্যুতার সাথে জড়িত একটি ডাকাত দল চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায় অবস্থান করছে, এই খবরের ভিত্তিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত হতেই র্যাব বাশখালী উপজেলার গন্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার, শৈলকুপা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাঁশখালীর পশ্চিম বড়ঘোনার আলী আহম্মেদের পুত্র মোঃ কাইছার ওরফে কালু, পূর্ব বড়ঘোনার মৃত আহম্মদ সাবার ছেলে মোঃ জাহিদ (২৫), পশ্চিম বড় ঘোনার মৃত আলী চানের ছেলে মো. সেলিম(৪০) ও মো. সেলিমের পুত্র মোঃ ইকবাল হোসেনকে (১৫) আটক করে।
আটককৃত আসামি মোঃ কাইছার ওরফে কালুর কাছ থেকে বরগুনার বোটে হামলার শিকার জেলে আব্দুল করিমের ১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে দস্যুতার সময় কালু এবং জাহিদ সরাসরি বোটে উপস্থিত থেকে দস্যুতায় অংশগ্রহণ করে। আটককৃত সেলিম ওরফে ডাকাত সেলিম সে ডাকাত দলের বোটের মালিক এবং তার বোট ব্যবহার করেই ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালিত করে। তারা বড়গুনায় বোট ডাকাতির আগে কুতুবদিয়া চ্যানেল এলাকায় আরও ১ টি ডাকাতি সংঘটিত করেছিল। সেখান থেকে বড়গুনায় বোটে ডাকাতি করে।
এই ঘটনায় র্যাব ৪টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১ টি কিরিচ, ২টি শাবল, জাল এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত বোট ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তাকৃতরা ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেওয়া ও পরিকল্পনাকারীদের তথ্য র্যাবকে জানিয়েছেন বলে জানায় র্যাব।
গ্রেফতারকৃত জলদস্যুরা পূর্বে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, পেকুয়া, মগনামা, এবং কুতুবদিয়া এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেছে। আসামি মোঃ কাইছার ওরফে কালুর (২৫) নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ২টি চুরির মামলা, আসামি মোঃ সেলিমের নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ৫টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১ টি অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা এবং বাকি ৪টি সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মামলা। সূত্র: র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি