চট্টগ্রাম, ৯ মার্চ, ২০২৩:
বছর বছর দেশের বিভিন্ন কর্ম এলাকায় পর পর বিস্ফোরণে হতাহত হচ্ছে বহু মানুষ। একইসাথে বাড়ছে ভুক্তভোগী মানুষের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু বিস্ফোরণ বাড়ছেই। মিলছে না কোনো সুরাহা।
সর্বশেষ ৭ মার্চ ঢাকার সিদ্দিক বাজারে সাততলা বাণিজ্যিক ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি এই বিস্ফোরণের কারণ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
এই অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধারকারী দলের সক্ষমতা নিয়েও। অন্যদিকে বিস্ফোরণের পর যে ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয় তা মোকাবেলা করাও উদ্ধারকারীদের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিস টিমের ১৩ জন ফায়ার ফাইটার নিহত হয়েছিলেন।
সিদ্দিক বাজারের সাততলা ভবনটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। বুধবার ঝুঁকি চিহ্নিত করার পর শুরু হয় আবার উদ্ধার অভিযান।
গত রবিবার ঢাকার সাইন্সল্যাব এলাকায় একটি তিনতলা বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে তিন জন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছিল অনেকে। গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হয়। এর আগে গত বছরের ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন সহ ৫১ জন নিহত হয়েছিল। ২০২১ সালের ২৭ জুন মগবাজারে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে বিস্ফোরণ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এই বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোর সাথে বার বার বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, পানির লাইন সহ ভবন নির্মাণের ত্রুটির কথা বলা হলেও এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে এসব নজরদারি করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিস্ফোরণ পরিদপ্তর, পরিবেশ অধিদফতর এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে দায়িত্ব রয়েছে বিস্ফোরণের পর পরই তা সকলে ভুলে যায়। এভাবে গাফিলতির কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
এর একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে – যেমন আবাসিক বা বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে ফতুল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ছিল। গ্যাস লাইনের লিকেজ দিয়ে বের হয়ে আসা গ্যাসের ওপর বিদ্যুতের স্পার্ক পড়তেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এমনটাই ছিল সিআইডির রিপোর্ট।
অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য- সাধারণত কোন আবদ্ধ জায়গায় যদি গ্যাসের মাত্রা ৫% থেকে ১৭% হয় তাহলে কোনোভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শ পেলেই বিস্ফোরণ ঘটে। সেটা দেশলাই, জ্বলন্ত সিগারেট, লাইন ফ্যানের সুইচের সামান্য স্পার্ক থেকেও আগুন ধরতে পারে। আবার গ্যাসলাইনগুলো লিক হলে এর সংলগ্ন বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে সেই গ্যাস পানি বা পয়নিষ্কাশন লাইনে মিশে যেতে পারে।
সেই পাইপ বেয়ে গ্যাস উঠে যায় বহুতল ভবনে। সেখানে যদি পরিবেশ আবদ্ধ থাকে, তাহলে গ্যাস জমতে জমতে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ বিদ্যুৎ আর গ্যাসের সংযোগগুলো কিভাবে আসে সেটা নিয়ে কিছু বলা হয় না।
সবক্ষেত্রে এসব ছোট ছোট অনিয়মগুলোর কারণেই ঘটছে বড় বড় বিস্ফোরণ। জীবনহানি হচ্ছে বহু মানুষের। দগ্ধ ও আহত হয়ে জীবনের ঘানি টানছে বহু মানুষ।