অনলাইন প্লাটফরমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক প্রতারণার দেশব্যাপী নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজ সরকারের চার জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এই নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী , আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার সচিবালয়ে একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে ই কমার্স ব্যব্সার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ও প্রতারণা ঠেকাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন,”দেশের ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা আনতে একটি রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা হবে।”
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দুজনেই আজ ই কমার্সের প্রতারণার পাশাপাশিি ই কমার্সের সম্ভাবনা নিয়েও পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন।
তবে অর্থমন্ত্রী ই কমার্সের প্রতারণার দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলেঅ করার সময় কারো না কারো ছাড়পত্র নিয়েই করা হয়েছে।এখানে ছাড়পত্র দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়। প্রাথমিকভাবে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্য যাদের সম্পৃক্ততা আছে,তাদের সকলের দায়িত্ব নেয়া উচিৎ।
অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কাউকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলে তো কোনো লাভ নেই। সে জেল খেটেই শেষ, এতে কোনো উপকার হবে না। ই-কমার্সের সার্বিক বিষয়ে মন্ত্রণালয় পজিটিভলি চেষ্টা করছে, কিছু একটা করা যায় কী না। তিনি বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে‘সোর্সিং বাংলাদেশ ২০২১-ভার্চুয়াল সংস্করণ’ নামে সপ্তাহব্যাপী অনলাইন মেলার আয়োজন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
অনলাইন ভিত্তিক পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী এবং ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমাকে গ্রাহকদের প্রতারণার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে গুলশান থানার মামলায় গ্রেফতার করে র্যা ব। ইতিমধ্যে ব্যবসার নামে অনলাইন প্রতারণা করায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের একাধিক জায়গা থেকে প্রতারণার মামলা হয়েছে।
রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তারের পর পরই পণ্য বিক্রির অনলাইন প্লাটফরমগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রতারণার খবর চাউর হয়।
এরমধ্যে সরকারের বিভিন্ন অবস্থান থেকে অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কথা শুরু হয়। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার আজ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। যদিও আইনি ব্যবস্থাগুলো আগেই শুরু হয়েছিল।
এদিকে ইপিবির অনুষ্ঠানে টিপু মুনশি আরও বলেন, জেলখানায় নেওয়া সমাধান নয়, আমরা অবজারভেশন করছি। আমরা অর্থ, বাণিজ্য, আইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলছি। তাদের অবস্থান নির্ণয় করা হচ্ছে। কোনো উন্নতি করা যায় কিনা সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে।
এ সময় ইভ্যালি প্রসেঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অনেক বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এসব নেতিবাচক ঘটনার কারণে তারা সরে দাঁড়িয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সহ ইপিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলবো না। মূলত কাজটি এখন আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা আছে, তারা এসব বিষয় নিয়ে আসে আমাদের এখানে। আইটির বিষয় আছে, সেখানে আইসিটি মিনিস্ট্রি আছে, তারাও দায়িত্ব নেবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মধ্যে তৈরি করে মানুষকে ঠকায়। এটা কিন্তু চলে আসছে। আগে ম্যানুয়ালি করত, এখন ডিজিটালাইজড ওয়েতে করা হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করে এখন, কতদিকে নিয়ন্ত্রণ করবে? সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে অবশ্যই। সরকারই দায়িত্ব নেবে। সরকার দায়িত্ব এড়াবে কেন?
তবে ই কমার্সের নামে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। ইভ্যালি, এহসান গ্রুপ ও ই-অরেঞ্জের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন তবে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অন্তত এক ডজন কর্ণধার ও সহযোগী নজরদারিতে আছে ।